Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wp-hide-security-enhancer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস শ্রমজীবী মানুষের দিবস কবে হবে? | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর আর জব্বার, পশ্চিমবঙ্গে এদের কথা আর কারুরই মনে নেই। ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে এই বঙ্গপুত্রদের রক্তদানের কারণে সম্ভব হলেও বর্তমানে বঙ্গদেশের দুই প্রান্তেই শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাদ দিলে ভাষা শহীদ দিবসের আলাদা কোন তাৎপর্য চোখে পড়ে না। ধর্মীয় মেরুকরণের কারণে কুপমুন্ডক হয়ে যাওয়া মধ্যবিত্ত জনমানসে ২১শে ফেব্রুয়ারি আলাদা কোন দাগ কাটে না। আপামর গরিব ও খেটে-খাওয়া মানুষের কাছে ভাষা দিবস একটি অপরিচিত নাম। ফলে বাংলাদেশে হুহু করে যেভাবে সালাফীবাদের ঘাড়ে চেপে আরবি আগ্রাসন বাড়ছে, ঠিক তেমনি পশ্চিমবঙ্গে, আপামর আদিবাসী ভূমিপুত্রদের, বাংলা-ভাষী মানুষের, নানা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনের উপর বেড়ে চলেছে হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের দাপাদাপি। নৈপথ্যে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), কিন্তু এর থেকে নিজের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও জীবন কে কী করে রক্ষা করবেন সাধারণ বঙ্গবাসী?

বহু বছর ধরে ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস কে একটি শহুরে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত-কেন্দ্রিক ব্যাপার করে রাখা হয়েছে বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গে। এই দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম ও ত্যাগের কাহিনী এবং সর্বোপরি এই ভাষা শহীদ দিবসের তাৎপর্য কোনদিনই সাধারণ মানুষের কাছে, খেটে খাওয়া মানুষের কাছে তাঁদের ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেনি বিভক্ত বঙ্গের বুদ্ধিজীবীরা। তাঁরা বক্তৃতা দিয়েছেন, মাতৃভাষা দিবসে মাতৃভাষার উপকারিতা নিয়ে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন, গান গেয়ে বারবার জানান দিয়েছেন যে তাঁদের ভাইয়ের “রক্তে রাঙানো” ২১শে ফেব্রুয়ারি কে তাঁরা ভুলবেন না, তবুও তাঁরা এই দিবসটিকে জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করেননি। বাংলাদেশে তবুও খেটে খাওয়া মানুষ কোথাও ২১শে ফেব্রুয়ারি-র তাৎপর্য নিয়ে শুনে থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গে বাস করা কোটি কোটি গরিব মানুষের এই নিয়ে কোন ধারণা নেই।

এই ধারণা না থাকা একটি বিরাট সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয় যার কারণ কিন্তু আমাদের বঙ্গদেশীয় বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের খেটে-খাওয়া, শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী জনতার সাথে একাত্ম না হওয়ার প্রবণতা। আজ যখন দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত অঞ্চলের ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে রাস্তা দেখতে দেখতে, দামি বিলেতি মদ খেতে খেতে শহুরে বুদ্ধিজীবীরা, বাংলা-প্রেমীরা আক্ষেপ করবেন যে কেন তাঁদের সাধের বাগান আজ বিজেপি তছনছ করে দিচ্ছে, কেন পশ্চিমবঙ্গের অমুসলিমরা বেশির ভাগই বিজেপি ও তার পিতৃপ্রতীম সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) এর খপ্পরে পড়ছেন ও “জয় শ্রী রাম” স্লোগান দিচ্ছেন, হনুমান মন্দির গড়ে পূজা করছেন, তখন তাঁদের জানলার থেকে সরে এসে আয়নাটা দেখা দরকার।

দীর্ঘ সাত দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গ কে একটি হিন্দু সাবর্ণ, কলকাতা-কেন্দ্রিক রাজ্য বানাবার প্রকল্প চালিয়ে এসেছে এই রাজ্যের উচ্চবিত্ত ও শহুরে মধ্যবিত্ত বাঙালি সাবর্ণ সম্প্রদায়। তাঁরা চিরকালই অবাংলা-ভাষী, যেমন কোচ, রাভা, বাউরি, সাঁওতাল, গোর্খা ও অন্য পাহাড়ি ও সমতলীয় আদিবাসী জনজাতি কে জোর করে বাঙালি বানিয়ে, তাঁদের মাতৃভাষার অধিকার তাঁদের থেকে কেড়ে নিয়ে তাঁদের উপর বাংলা কে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদ বলে কলকাতার বাবুরা চিরকাল গোর্খাল্যান্ড থেকে ঝাড়খন্ড, কামতাপুর থেকে গ্রেটার কুচবিহার, সব জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের লড়াই কে বিরোধিতা করেছেন একটা প্যান-বাঙালি হিন্দু পরিচয় (আইডেন্টিটি) কে হাতিয়ার করে। এর ফলে তাঁরা শুধু যে সমাজের শোষিত, বঞ্চিত ও অত্যাচারিত সম্প্রদায়গুলো কে বাংলা-বিদ্বেষী করেছেন তাই নয়, তাঁদের কে বিজেপি-আরএসএস এর মতন সাংঘাতিক সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট শক্তির দিকে ঠেলে দিয়েছেন।

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পরে ইন্দিরা গান্ধীর ট্যাঙ্কের নলে চেপে যে ঝুটো স্বাধীনতা আসে, তার পতাকাতলে আওয়ামী লীগ তার স্বৈরতান্ত্রিক শাসন গড়ে তুলেছে বাঙালি সম্প্রসারণবাদ কে পুঁজি করে, চাকমা, সাঁওতাল, ও অন্য আদিবাসী জনতার নিজ ভাষার অধিকার কে, এমন কী বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন এলাকার নিজ-নিজ বুলির বৈশিষ্ট কে শেষ করতে চেয়েছে অভিজাত শ্রেণীর বাংলা কে সরকারি ভাবে চাপিয়ে দিয়ে। তেমনি পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জনজাতির মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা করে তাঁদের উপর কলকাতার ভাষা চাপানোর চেষ্টা করে গেছে বাংলার সাবর্ণ শাসকেরা। তার ফলে এই বাংলা চাপানো কে যেমন সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ ভাল ভাবে নেননি, তেমনি তাঁরা বুঝতে পারেননি ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসের চেতনার মর্মার্থ।

আজ আরএসএস আর বিজেপি এসে সেই “জয় বাংলা” স্লোগানের বিরোধিতা করছে বাংলার বুকে বসে যে স্লোগানের বিরোধিতা করেছিল একদিন পাকিস্তানের রাজপূত-পাঞ্জাবি শাসক শ্রেণী। হয়তো বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা দখল করে সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর আর জব্বার এর মতন শহীদদের মুসলিম জেহাদি ও “জয় বাংলা” স্লোগান কে ইসলামিক বলে নিষিদ্ধ করে দেবে। হয়তো সেদিন ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস আর পালন করা হবে না শহুরে বাবু আর বিবিদের। তবে তার দোষ কিন্তু বিজেপি কে দিয়ে লাভ নেই, কারণ আরএসএস আর বিজেপি নিজেদের ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপ নিষ্ঠা সহকারে করলেও এই পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও উদারনৈতিক কিংবা বামপন্থী “বুদ্ধিজীবী” সম্প্রদায় নিজেদের কর্তব্য পালন না করার ফলে, অর্থাৎ খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী-কৃষিজীবী মানুষের নিজ মাতৃভাষার উপর অধিকার কায়েম করার সংগ্রাম না গড়ে, মাতৃভাষার তাৎপর্য কে উপলব্ধি না করিয়ে এবং হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুত্বের রথ কে সক্রিয় ভাবে প্রতিরোধ না করিয়ে চুপচাপ নিরাপদ দূরত্বে বসে আছেন বলেই, এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস কে তাই আজ শহুরে সাবর্ণ বাঙালিদের থেকে মুক্ত করে আপামর শোষিত জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা ভীষণ জরুরী। কারণ শেষ পর্যন্ত বঙ্গের আপামর খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিম অংশের ঘাড়ে চেপে বিজেপি বাংলার মসনদে বসার স্বপ্ন দেখছে। তাই আজ এই জনজাতিগুলো কে বিজেপির বিরুদ্ধে আনতে গেলে আজ এদের নিজ মাতৃভাষা কে, সংস্কৃতি কে ও জীবনযাপনের অভ্যাস কে মান্যতা দিতে হবে। এদের বাঙালি বলে লেবেল না সেঁটে তাঁদের নিজ নিজ পরিচয়ে নিজেদের পরিচিত করাতে দেওয়া আজ যেমন দরকার তেমনি তাঁদের সামনে হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান আগ্রাসনের কারণগুলো ভালো ভাবে ব্যাখ্যা করাও প্রয়োজন যাতে তাঁরা সক্রিয় ভাবে নিজেদের স্বার্থেই বিজেপি-আরএসএস কে প্রতিরোধ করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla