Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wp-hide-security-enhancer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the schema-and-structured-data-for-wp domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি: কতটা বাস্তব কতটা কাল্পনিক? | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ করলো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। আর সেই ইস্তাহার জুড়ে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেওয়া হল তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রতিশ্রুতির থেকে কম না। কর্মসংস্থান ও শিল্পায়নের উপর বেশ জোর দেওয়া হয়েছে এই ইস্তাহারে। তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারের নানা প্রতিশ্রুতির প্রত্যেকটিকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন আর তাই এই প্রবন্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।  

তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি কী?

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি হল: “প্রায় ২১ লক্ষ বেকার রয়েছেন, এবং জিডিপির আকার বৃদ্ধি এবং শিল্প খাতের প্রসারণের ফলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৫ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে যার ফলে রাজ্যে বেকারত্বের হার অর্ধেক হবে।” বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ জিডিপির নিরিখে দেশের ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতি। এই ইস্তাহারে তৃণমূল কংগ্রেস অঙ্গীকার করেছে রাজ্য কে প্রথম পাঁচে নিয়ে যাওয়ার। তবে বছরে পাঁচ লক্ষ বেকার যুব-র যদি ‘কর্মসংস্থান’ হয় তাহলে পাঁচ বছরে ২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বলা হয়েছে যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরলে অবিলম্বে রাজ্যের ১১১,০০০ খালি সরকারি পদে নিয়োগ করা হবে। যদিও এটা বলা হয়নি যে গত পাঁচ বছরে এই পদগুলো কেন খালি ছিল।

সবচেয়ে বড় কথা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি জোর দিচ্ছে ‘কর্মসংস্থান’ এর উপর যা মোদী সরকারের আর বিজেপির এ যাবৎকাল অবধি দিয়ে আসা প্রতিশ্রুতির সমান। বিজেপির ইস্তাহারেও কিন্তু প্রতি পরিবারের একজনের “রোজগার” এর সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। ‘কর্মসংস্থান’ মানে কিন্তু স্থায়ী, একজনের পেশাগত নৈপুণ্যতার ভিত্তিতে সঠিক মজুরিতে চাকরি নয়। সরকারি চাকরি তো নয়ই। একজন মানুষ যদি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে একটি ছোট দোকান খুলে বসেন, বা কোন হাতের কাজ করে হস্তকলা পণ্য উৎপাদন করে বিক্রি করা শুরু করেন তাহলেও কিন্তু সরকারি খাতায় তাকে ‘কর্মসংস্থান’ বলা হবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী কয়েক বছর আগে বলেছিলেন “পকোড়া বানিয়ে বিক্রি করাও” নাকি তাঁর মতে কর্মসংস্থান। তাঁর এই পকোড়া উবাচের কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী বন্দোপাধ্যায় তেলেভাজা কে শিল্পের তকমা দিয়েছিলেন ও বলেছিলেন চপ, বেগুনি ভেজেও মানুষ নাকি দশতলা বাড়ি করছেন। আজ যে কর্মসংস্থানের কথা তৃণমূল কংগ্রেস ইস্তাহারে ঘোষণা করেছে তা কিন্তু সেই পকোড়া বা তেলেভাজা “শিল্পের” চেয়ে বেশি কিছু কিন্তু কিছু হবে না।  

পশ্চিমবঙ্গের যে ১১১,০০০ সরকারি পদে নিয়োগ করার কথা তৃণমূল কংগ্রেস তার ইস্তাহারে ঘোষণা করেছে সেই কটা ছাড়া এই রাজ্যে চাকরির সুযোগের কোন কথা কেন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে নেই? এই ১১১,০০০ পদ কিন্তু নতুন সৃষ্টি হ্য়নি বরং বহু বছর ধরে খালি। এর ফলে এই নিয়োগগুলো গত দশ বছরেই করার ছিল বন্দোপাধ্যায়ের সরকারের। কিন্তু তা হয়নি। মনে রাখতে হবে এই দশ বছরে টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (টেট) উত্তীর্ণ যুবরা কিন্তু নিয়োগ পাননি চাকরিতে। কেলেঙ্কারি হয়েছে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। রাজ্য পাবলিক কমিশনের চাকরির অবস্থাও তথৈবচ। এ ছাড়া স্কুল আর মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনের চাকরির দরজাও বন্ধ। এইগুলো নিয়ে যেমন তৃণমূল কংগ্রেসের কোন বক্তব্য নেই তেমনি নেই কোন কথা যে সমস্ত চাকরি প্রার্থীদের সরকারি চাকরি পাওয়ার বয়স এই দশ বছরে শুধু সরকারি অনীহার কারণে পার হয়ে গেছে––তাঁদের কথা।

শিল্পায়ন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহার জোর দিয়েছে বলছে “বার্ষিক ১০ লক্ষ নতুন এমএসএমই। সর্বমোট সক্রিয় এমএসএমই ইউনিটের সংখ্যা ১.৫ কোটির বেশি”, অর্থাৎ, ইস্তাহারের মতে বর্তমানে যেখানে প্রতি বছর ছয় লক্ষ করে নতুন মাঝারি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (এমএসএমই) তৈরি হচ্ছে সেটা দশ লক্ষ প্রতি বছরে নিয়ে গিয়ে পাঁচ বছরে ৫০ লক্ষ উদ্যোগ সৃষ্টি করে বর্তমান এক কোটি এমএসএমই-র সাথে তার যোগফলে দেড় কোটি মোট উদ্যোগ গড়ে তোলা। বর্তমানে ভারতবর্ষে এমএসএমই গুলোর মাধ্যমে ৯০% অসংগঠিত শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি মত যদি প্রতি বছর দশ লক্ষ এমএসএমই যোগ হয় তাহলে, একটি উদ্যোগে যদি মালিক সহ দুইজনের কর্মসংস্থান হয়, তাহলে বাৎসরিক ২০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে, অর্থাৎ পাঁচ বছরের শেষে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

কিন্তু সমস্যা হল যে এই এমএসএমই-র সংজ্ঞা গত বছর মে মাসে মোদীর “আত্মনির্ভর ভারত” প্রকল্প ঘোষণার সময়ে বদলে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীথারামান। মোদী সরকার গত বছর ঘটা করে অনেক ঘোষণা এমএসএমই ক্ষেত্রের জন্যে করলেও সেই ক্ষেত্রে বিশেষ লাভ হয়নি কারণ বর্তমানে বাজারে যেহেতু পুঁজির সঙ্কটের কারণে অধিকাংশ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে আর তাই চাহিদার একটি সামগ্রিক অভাব রয়েছে, ফলে এমএসএমই ক্ষেত্রের একার পক্ষে কোন ভাবে স্বাধীন ভাবে মানুষের বেকারত্ব ঘোঁচানো সম্ভব নয়।

যদি ধরে নেওয়া যায় যে মোদী সরকারের মতন তৃণমূল সরকারও ঋণ দিয়ে স্বনির্ভর করার জন্যে এমএসএমই ক্ষেত্র কে ব্যবহার করবে তবুও বাজারে সামগ্রিক ভাবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস যেহেতু পেয়েছে তাই চাহিদা আগামী দিনে বাড়ার কোন সুযোগ নেই। এর ফলে যদি এই লক্ষ্য মাত্রা অর্জনও করে ফেলা হয় তবুও সেই মানুষগুলোর জীবনে অর্থনৈতিক ভাবে কোন বিরাট পরিবর্তন আসবে না, বরং সরকারি ঋণের বোঝা কাঁধের উপর চেপে থাকবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনের কোন বিরাট পরিবর্তন আসবে না।

বৃহৎ শিল্প নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে বলা হয়েছে “২,০০০ বড় শিল্প ইউনিট যোগ হবে বর্তমান ১০,০০০ শিল্প ইউনিটের সাথে, আগামী ৫ বছরে”। আরও বলা হয় “শিল্প রিপোর্টের ২০১৭-১৮ সালের বার্ষিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১০-১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে কারখানার সংখ্যা ছিল ৮,২৩২ যা ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে ৯,৫৩৪ হয়েছে এবং ৬.৫ লক্ষ মানুষ সংযুক্ত হয়েছেন। দ্রুত শিল্পোন্নয়নের প্রয়োজন বিবেচনা করেই কারখানার সর্বমোট সংখ্যা বাড়িয়ে ১২,০০০ ইউনিটের বেশি করা হবে।” এর অর্থ প্রতিটি কারখানায় গড়ে ৬৮টি করে মানুষের ‘কর্মসংস্থান’ হয়েছে আর তাই ২,০০০টি বৃহৎ শিল্প কে যোগ করলে নতুন করে ১৩৬,৩৫৪ জনের কর্মসংস্থান হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। যেহেতু লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ বছরের তাই বাৎসরিক ২৭,২৭০ জনের ‘কর্মসংস্থান’ হবে এই কারখানাগুলোয়।

সারা বিশ্ব জুড়ে পুঁজিবাদ ২০০৮-০৯ সাল থেকে মার্কিন সাব প্রাইম ক্রাইসিস এর পর থেকে এক চরম সঙ্কটের পাঁকে ডুবে আছে। তাই উৎপাদন-ভিত্তিক শিল্পে লগ্নি পুঁজি দীর্ঘদিন ধরেই কোন বিনোয়োগ করছে না কারণ উৎপাদনের সাথে সম্পর্ক ছেদ করে সে চেষ্টা চালাচ্ছে শেয়ার বাজারের বুদবুদে লগ্নি করে চরম মুনাফা লাভ করতে। এই অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেস কি রাষ্ট্রায়ত্ত ২,০০০টি কারখানা খোলার কথা ঘোষণা করছে নিজের ইস্তাহারে? কারণ পুঁজিবাদ যেহেতু গোটা বিশ্বেই উৎপাদন-ভিত্তিক শিল্প নতুন করে গড়ছে না বরং সেই রকম শিল্পগুলোর থেকে লোক ছাঁটাই করে বেশি করে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার দিকে ঝুঁকছে তাই হঠাৎ পশ্চিমবঙ্গে বৃহৎ ২,০০০টি কারখানা সে যে খুলবে না পাঁচ বছরে সে কথা সহজেই বোঝা যায়।

এর সাথে সাথে সমস্ত শিল্পের মধ্যেই অটোমেশনের দিকে খরচ কমানোর জন্যে যেহেতু পুঁজিবাদের নজর তাই লেবার-ইনটেনসিভ বা শ্রমিক নির্ভর শিল্প যে নতুন করে গড়ে উঠবে না সেটাও সহজেই অনুমান করা যায়। এর মানে এই ২,০০০টি কারখানা দিয়ে যে ভাবে রাজ্যের ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে দেওয়া আছে তা বাস্তবের সাথে সম্পর্কহীন। আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগটাই একদম ভেজাল।

পশ্চিমবঙ্গের জন্যে কী ধরণের ‘কর্মসংস্থান’ ও শিল্প প্রয়োজন?

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার কে নিচে আনতে দরকার বৃহৎ শিল্প যেখানে হাজার হাজার মানুষের স্থায়ী চাকরি হতে পারে। লগ্নির মাধ্যমে যদি শিল্প স্থাপন করে বেসরকারি পুঁজি তাহলে সেই শিল্পের লক্ষ্য হবে চরম মুনাফা অর্জন করা, জনগণ কে চাকরি দেওয়া নয়। যে মাড়োয়ারি-গুজরাটি বেনিয়া পুঁজির লবি বর্তমানে বিজেপি কে অর্থ দিয়ে ও নানা সাহায্য করে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলছে, সেই লবি কে তৃণমূল কংগ্রেস আঁকড়ে ধরতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়ন আর কর্মসংস্থানের জন্যে যা হাস্যকর। কেন সেই পুঁজিপতিরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কে চাকরি দেবেন যখন এই রাজ্যের বেকারত্ব খুব সহজেই লক্ষ লক্ষ যুবদের বাধ্য করতে পারে ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে পাড়ি দিয়ে সস্তা দিনমজুর হতে?

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তাহলে কী কাজে আসতে পারে? বন্দোপাধ্যায় বোধহয় ভুলে গেছেন যে রাজ্যের পাটকলগুলো প্রায় ছয় লক্ষ মানুষ কে প্রত্যক্ষ ভাবে চাকরি দিত আর আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ পরোক্ষে এইগুলির দ্বারা উপকৃত হতেন। হুগলী নদীর দুই পাড়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে চলমান পাটকলগুলো কিন্তু এক একটি অঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণ ভোমড়া ছিল। আজ অসংখ্য পাটকল বন্ধ। লকডাউনের পরে বাকি পাটকলের অবস্থা শোচনীয়। আজ যদি বন্ধ পাটকলগুলো কে সরকার অধিগ্রহণ করে বা সমবায় করে খোলার ব্যবস্থা করে তাহলে ছয় লক্ষ চাকরি এমনিই হয়ে যাবে। কিন্তু বন্ধ পাটকল নিয়ে কোন কথা তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে নেই।

একটু ঋণ আর একটু অনুদান হিসাবে দিয়ে যদি বন্ধ পাটকলগুলোর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করিয়ে, কর্মী ছাঁটাই না করিয়ে সেগুলো কে দাঁড় করানো যায়, যদি পাটের বাজার গড়ে তুলে চাহিদা বাড়ানো যায় তাহলে বেকারত্ব যেমন কমানো যাবে তেমনি সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প ছড়িয়ে বন্ধ পাটকল অঞ্চলগুলোয় বিজেপি যে ঘৃণ্য রাজনীতি করছে তার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধও গড়া যেত ও আর একটি তেলেনিপাড়ার সাম্প্রদায়িক হিংসার মতন ঘটনা ঘটতো না।

এরই সাথে তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে ২০১১-পূর্ববর্তী সময়ের মতন বামফ্রন্ট আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া নানা কারখানা খোলার ব্যাপারেও কোন কথা নেই। রাজ্যের প্রচুর বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প, বিশেষ করে আসানসোল-দুর্গাপুর অঞ্চলে, সেই গত শতকের আটের দশক থেকে বন্ধ। গ্লাস ফ্যাক্টরি, সেন-র‌্যালের সাইকেল কারখানা, এমএএমসি দুর্গাপুর, ইত্যাদির থেকে শুরু করে বর্তমানে মোদী সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, হিন্দুস্তান কেবলস, প্রভৃতি কারখানাগুলো অধিগ্রহণ করার বন্দোবস্ত করে, এগুলির প্রযুক্তিগত উন্নয়নে লগ্নি করে যদি এইগুলি আজ চালু করার প্রস্তাব নিয়ে রাজ্য সরকার কাজ করতো তাহলেও প্রচুর মানুষের এই সব অঞ্চলে প্রকৃত অর্থে কর্মসংস্থান হত আর বিজেপিকেও ধাক্কা খেতে হত।

গ্রাম ও কৃষি-ভিত্তিক শিল্প ও কর্মসংস্থান প্রকল্প গড়লে, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও সমবায় গড়ে প্রচুর মানুষের কর্মসুযোগ তৈরি করতে ও তাঁদের নিজেদের পণ্য বাজারজাত করতে সহযোগিতা করলে গ্রামীণ বেকারত্বের ক্ষেত্রে অনেক সুরাহা হত, অথচ সেই সমস্ত উদ্যোগ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে কোন কথা নেই।

তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি কেন ভূমিপুত্র নিয়ে নীরব?

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বুকে সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিগুলোয় খুব কায়দা করে বহিরাগতদের নিয়োগ করা হচ্ছে। ভারতীয় রেল, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কর্পোরেশন (ওএনজিসি), ইস্টার্ন কোলফিল্ডস (ইসিএল), স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সেল), প্রভৃতি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় কিন্তু ভূমিপুত্রদের চাকরির সুযোগ শূন্য। বরং বহিরাগতরা——বিশেষ করে হিন্দি-ভাষী উত্তর ভারতীয়, সাবর্ণ হিন্দুরা——এই সব সংস্থায় চাকরি নিয়ে এই রাজ্যে আসছেন এবং এখানে সম্পত্তি কিনে থিতু হয়ে রাজ্যের ভিতর যেমন বিজেপির পক্ষে রাজনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করছেন তেমনি রাজ্যের জনসংখ্যায় ব্যাপক রদবদল আনছেন।

তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি কিন্তু সুচারু ভাবে এই সমস্যা কে আড়াল করেছে। রাজ্যে যে কর্মসংস্থান আর চাকরির কথা বলা হচ্ছে তাতে ভূমিপুত্রেরা কী পাবেন? তাঁদের জন্যে জনসংখ্যায় প্রতিটি জাতি-উপজাতি-সংখ্যালঘুর অনুপাত অনুসারে সংরক্ষণ রাখার সুযোগ কেন তৈরি করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। কেন রাজ্যের মানুষের, ভূমিপুত্রদের এই রাজ্যের সম্পদ ও চাকরি বা শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতন ক্ষেত্রগুলোর উপর প্রথম ও প্রধান অধিকার থাকবে না? এই ভাবে ঠেকা দিয়ে মানুষ কে হয়তো সাময়িক ভাবে বোকা বানিয়ে ভোটে জেতা যায় কিন্তু বিজেপির মতন একটি সাম্প্রদায়িক ও ক্রুর ফ্যাসিস্ট শক্তি কে রাজনৈতিক ভাবে পরাস্ত করা যায় না। তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহার এই কথাই প্রমাণ করলো।   

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla