ধরে নেওয়া গেল যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বা সিপিআই (এম) এর নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোট (এলডিএফ) সরকার কেরলে ভয়ানক বৈপ্লবিক সব কর্মকাণ্ড করছে, প্রায় সমাজতন্ত্র আসবে আসবে করছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় বিলীন হয়ে যাওয়া দলের কর্মীরা তাই দেখে উত্তেজিত হয়ে হাত পা ছোড়া শুরু করেছেন, এমন সময়ে এক বালতি খাঁটি সমাজতান্ত্রিক দুধে এক ফোঁটা চোনার কাজ করে দিল একটা খবর – সামাজিক ন্যায় বিভাগ রাজ্যে বিদেশীদের বন্দী করে রাখতে ডিটেনশন কেন্দ্র গড়তে আহ্বান জানিয়েছে কর্পোরেটদের। কেরলে ডিটেনশন কেন্দ্র তৈরির খবর, যা গত সপ্তাহে কংগ্রেস পার্টির ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা বড় বড় করে ছেপেছিল, গোটা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে আর জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) করে ভারতের আপামর খেটে খাওয়া গরীব মানুষ কে বেনাগরিক করার চক্রান্তে সিপিআই (এম) এর জড়িত থাকার ঘটনা কে সামনে এনেছে। তবে প্রশ্ন হল এই কি প্রথম আর এই কি একমাত্র ঘটনা যে সিপিআই (এম) দলের এনআরসি ইস্যুতে যুক্ত থাকার প্রমাণ দেয়? বা এই খেলায় কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বাদে একমাত্র সিপিআই (এম)–ই যুক্ত আর অন্য দলেরা নয়?
কেরলে ডিটেনশন কেন্দ্র গড়ার নৈপথ্য ও ষড়যন্ত্র
খবরে প্রকাশ যে ১৮ই ডিসেম্বর ২০২০তে এলডিএফ সরকার কে দুইজন নাইজেরিয়ান আর একজন ময়ানমারের বন্দী কে রাখার জন্যে জেলের বাইরে ডিটেনশন কেন্দ্র তৈরি করতে আদেশ দেন কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি পিভি কুনহিকৃষ্ণা-র বেঞ্চ। সেই আদেশ পালন না হওয়ায় এপ্রিল মাসে আবার চাপ দেওয়া হয় সরকার কে কেরলে ডিটেনশন কেন্দ্র তৈরি করার জন্যে। সেই আদেশে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন ও সামাজিক ন্যায় বিভাগ থেকে কর্পোরেটদের কাছে আবেদন জানাতে বলা হয়।
কেরলে ডিটেনশন কেন্দ্র গড়ার এলডিএফ সরকারের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় এবং নিজের পিঠ বাঁচাতে সিপিআই (এম) ঘোষণা করে যে এই ডিটেনশন কেন্দ্র একেবারেই এনআরসি-র সাথে সম্পর্কহীন এবং একমাত্র বিদেশীদের দেশে পাঠানোর আগে এখানে রাখা হবে। কিন্তু মালায়ালাম ভাষায় যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তাতে স্পষ্ট করে বলা আছে যে “যাঁরা অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন বা বৈধ ভিসা ও পাসপোর্ট নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন ও তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে এবং যাঁদের সাজা হয়েছিল ও সাজার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় যাঁরা স্বদেশে ফেরার জন্যে অপেক্ষা করছেন,” তাঁদের এই ডিটেনশন কেন্দ্রে রাখা হবে। মজার ব্যাপার হল নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, ২০০৩ (সিএএ ২০০৩), যে আইনের ১৪(ক) ধারায় এনআরসি করার কথা বলা আছে, যে ভাবে “বেআইনি অভিবাসী” (illegal migrant) কারা তার বর্ণনা দিয়েছে, সেই বর্ণনার সাথে হুবহু মিল এই বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হবু বন্দীদের বিবরণের।
কেরলে ডিটেনশন কেন্দ্র গড়তে চাওয়া হয়েছে দশ ফুটের উপর প্রাচীর, কাঁটা তারের বেড়া আর পর্যাপ্ত আলো দিয়ে বেষ্টনী করা জায়গা। আর এর সাথেই কিন্তু কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রকের বানানো ডিটেনশন কেন্দ্রের পরিকল্পনার সাথে এই প্রস্তাবের মিলের কথা কে চেপে যাওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহ মন্ত্রকের ডিটেনশন কেন্দ্র সংক্রান্ত ম্যানুয়ালের চার নম্বর অধ্যায়ে ডিটেনশন কেন্দ্র কী ভাবে বানাতে হবে বয়ান করা আছে। অন্তত দশ ফুট উঁচু পাঁচিল, কাঁটা তারের বেড়া, পর্যাপ্ত আলো ইত্যাদি ডিটেনশন কেন্দ্র বানাবার জন্যে জরুরী।
ডিটেনশন কেন্দ্র বর্তমানে শুধু অসমে রয়েছে এবং সেখানে যাঁরা বন্দী আছেন তাঁদের কেউই এনআরসি ছুট নন, বরং একটি quasi-judicial সংস্থা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাঁদের কে বিদেশী ঘোষণা করায় তাঁদের ঠাই হয়েছে এই বিদেশী ডিটেনশন কেন্দ্রে। এই ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে কোন বিচারপতি বসেন না, এর সাথে দেশের বিচার বিভাগের কোন সম্পর্ক নেই। এখানে বিচারক হয় আমলারা আর ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার মূল যে ভিত্তি, অর্থাৎ দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত একজন অভিযুক্ত আইনের চোখে নির্দোষ, তার ঠিক উল্টো প্রচলন আছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে, যেখানে অভিযুক্ত নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত দোষী হিসাবে গণ্য হবে এবং তাঁদের দোষী প্রতিপন্ন করার কাজ কিন্তু অভিযোগকারীর নয়, বরং তাঁদের নির্দোষ প্রমাণের দায় অভিযুক্তদের ঘাড়েই চাপানো হয়।
যাঁরা অসমের ডিটেনশন কেন্দ্রে বন্দী, তাঁদের বেশির ভাগ মানুষই হয় হতদরিদ্র না হয় নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালি, বিশেষ করে নমঃশূদ্র, দলিত বা নিম্ন জাতির হিন্দু বাঙালি। তাঁদের বেশির ভাগই কৃষি কাজ করতেন, বা শহরে রিকশা চালানো, ছোট দোকান চালানো, অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকের কাজ করা মানুষ এবং তাঁদের নামে কেউ এই ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে মামলা করে দেওয়ায়, বা পুলিশ ও বর্ডার পুলিশ তাঁদের নামে মিথ্যা মামলা করে দেওয়ায় তাঁরা ফেঁসে থাকেন সারা জীবন। অনেকের নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় মৃত্যু হয়ে গেলেও, নাগরিকত্ব জোটে না। তবে এই ডিটেনশন কেন্দ্র, এনআরসি ও নাগরিকত্ব নিয়ে, বিশেষ করে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, ২০১৯ (সিএএ ২০১৯) পাশ হওয়ার পর থেকে, ভুল ধারণা ছড়ানো হয় নাগরিকত্ব নিয়ে আন্দোলন কে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে ভেঙে দিতে।
অনেকেই মনে করেন যে অসমে ডিটেনশন কেন্দ্রতে শুধু বাঙালি মুসলিমদের আটক করে রাখা হয়েছে। সেই ধারণা কিন্তু ভুল। কারণ বেশির ভাগ জায়গায় যে সকল মানুষের মৃত্যুর খবর ডিটেনশন কেন্দ্রগুলোর থেকে এসেছে তাঁদের সকলেই হিন্দু বাঙালি, বিশেষ করে নমঃশূদ্র জাতির মানুষ। যদিও বহু মুসলিম মানুষও এই ডিটেনশন কেন্দ্রে বন্দী কিন্তু যেহেতু সরকার ধর্মীয় অনুপাতে বন্দীর তথ্য প্রকাশ করে না তাই সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে না, তাই মৃত বন্দীদের পরিসংখ্যান ব্যবহার করে বলা যায় যে বেশির ভাগ বন্দীরা কিন্তু হিন্দু বাঙালি।
ডিটেনশন কেন্দ্র ও কিছু জরুরী তথ্য
প্রথমত, আমাদের এই ভুল ধারণা ভাঙতে হবে যে ডিটেনশন কেন্দ্র একমাত্র এনআরসি – র সাথে যুক্ত। কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশী আইন, ১৯৪৬, এর ৩(২) ই ও ৩(২) সি ধারা অনুসারে ভারতে বেআইনি ভাবে বাস করা যে কোন বিদেশী কে আটক করতে পারে ও ধৃত কে ভারতবর্ষ থেকে তাঁর স্বদেশে বিতাড়ন করতে পারে। সংবিধানের ২৫৮(১) ও ২৩৯(১) অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৮ সাল থেকে তার এই আটক করা ও বিতাড়ন করার ক্ষমতা রাজ্য সরকারগুলোর ও কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসকদের উপর ন্যস্ত করেছে। ফলে যে কোন রাজ্য সরকার কাউকে বিদেশী সন্দেহে আটক করে ডিটেনশন কেন্দ্রে রাখতে পারে। এনআরসি হোক বা না হোক, বাঙালি উদ্বাস্তুদের ঘাড়ে কিন্তু এই বিদেশী আইন, ১৯৪৬, এর খাঁড়া ঝুলছেই।
দ্বিতীয়ত, যদিও সিপিআই (এম) সিএএ ২০১৯ নিয়ে প্রচণ্ড শোরগোল তুলে বাজার গরম করেছে, বলেছে কেরল রাজ্যে সিএএ ২০১৯ প্রয়োগ হতে দেবে না, তবুও পিনরাই বিজয়নের এই বক্তব্যের কোন ভিত্তি নেই। বিজয়নের মতন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংও নিজ রাজ্যের বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করে সিএএ ২০১৯ প্রয়োগ হতে দেবেন না বলেছিলেন। যেহেতু নাগরিকত্ব কেন্দ্রের বিষয়, কারণ একজন ভারতের নাগরিক হন কোন রাজ্যের না, ফলে দেশের সংসদে পাশ হওয়া একটি আইনের, যা কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত বিষয়ের, প্রয়োগ কোন রাজ্য সরকার বা বিধানসভা আটকাতে পারে না। সেটা করলে কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ২৫৬ ধারা অনুসারে রাজ্য সরকার কে তার সাংবিধানিক দ্বায়িত্ব পালন করার কথা স্মরণ করাবে ও তারপরেও রাজ্য সরকার যদি কেন্দ্রীয় আইন পালনে বাঁধা দেয় তাহলে সাংবিধানিক সঙ্কট দেখিয়ে সংবিধানের ৩৫৬ ধারা ব্যবহার করে রাজ্য সরকার কে বরখাস্তও করতে পারে। ফলে এই নিয়ে রাজ্য সরকারের কোন এক্তিয়ার যেমন নেই, তেমনি সিএএ ২০১৯ এর সাথে এনআরসি কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই।
তৃতীয়ত, ভারতের কোটি কোটি মানুষ কে বেনাগরিক করার এই এনআরসি কে বাধ্যতামূলক করেছে সিএএ ২০০৩, যা অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার পাশ করেছিল ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সেই আইন নিয়ে রাজ্যসভার গৃহ মন্ত্রক সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি তার ১০৭তম রিপোর্টে সিএএ ২০০৩ কে অনুমোদন করে এবং এনআরসি-তে সায় দেন। এই কমিটিতে দুই জন সিপিআই (এম) সাংসদ ছিলেন। কমিটির মাথায় ছিলেন কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। তারপর যখন সিএএ ২০০৩ সংসদে পাশ হয় তখন তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির শরিক হিসাবে যেমন সমর্থন করে, তেমনি সিপিআই (এম) কোন বিরোধিতা করেনি। তারপরে আইনটা প্রণয়ন করে কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) সরকার, ডিসেম্বর ২০০৪-এ। সেই সময়ে ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক ছিল সিপিআই (এম) এর নেতৃত্বাধীন বাম জোট। তখন পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও ত্রিপুরায় চরম শক্তিশালী সিপিআই (এম) ও সংসদীয় বামদলগুলো। কিন্তু কোনো ভাবেই সিপিআই (এম) এনআরসি-বিরোধী কোনো আন্দোলনই গড়ে তোলেনি। সিপিআই (এম) কোটি কোটি মানুষ কে বেনাগরিক বানানোর চক্রান্তে সামিল হয়ে সেইদিন মতুয়া, নমঃশূদ্র উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব নিয়ে আন্দোলন কে, যা ২০০৪ থেকে দানা বাঁধতে শুরু করে, উপেক্ষা করে ও নানা জায়গায় পুলিশ পাঠিয়ে উদ্বাস্তুদের “বেআইনি অভিবাসী” হিসাবে চিহ্নিত করা শুরু করে পশ্চিমবঙ্গে। এনআরসি প্রকল্পের সাথে যুক্ত সিপিআই (এম) তাই সিএএ ২০০৩ নিয়ে উচ্চবাচ্য করে না, কেরল বিধানসভায় সেই আইন নিয়ে কোন প্রস্তাব তাঁরা পাশ করেননি।
কেরলে ডিটেনশন কেন্দ্র, সিপিআই (এম) ও ভবিষ্যৎ লড়াই
কেরলে ডিটেনশন কেন্দ্র গঠন শুধুই এনআরসি-র জন্য নয়, বরং বিদেশী আইন, ১৯৪৬, ব্যবহার করেও যাকে তাকে ধরে বন্দী করার জন্যে। যিনি বন্দী হবেন তাঁকে নির্দোষ না প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত দোষী হিসাবে গণ্য করা হবে। অসমের মতন ক্যাঙ্গারু আদালত বা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে সরকারি আমলারা বিচারপতি সেজে বিচার করবেন কে নাগরিক আর কে নাগরিক না। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের দায় সেখানে অভিযুক্তের। ভাবুন পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিন মজুরি করতে যাওয়া একজন কে যদি বিদেশী সন্দেহে ধরা হয় তাহলে নিজেকে তিনি কী ভাবে নির্দোষ প্রমাণ করবেন? কে তাঁর হয়ে উকিল করবে? কে উকিলের খরচ দেবে? কে তাঁর জন্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেরল পর্যন্ত ছোটাছুটি করবেন? শেষ পর্যন্ত এনআরসি ছাড়াই ডিটেনশন কেন্দ্রে বন্দী থাকতে হবে বাঙালি শ্রমিককে। আর শ্রমিক শ্রেণীর পার্টি বলে লেবেল লাগিয়ে বাজারে টিকে থাকার চেষ্টা করা সিপিআই (এম) এই ভাবে শ্রমজীবী মানুষ কে নাগরিকত্বহীন, নিজের শ্রমের দরদাম করার ক্ষমতাহীন, সস্তা দাসমজুর বানিয়ে কর্পোরেটদের উপঢৌকন দেবে। বিজেপির যোগ্য সহচর হওয়ার প্রচেষ্টা করবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, যখন বিশ্ব লগ্নি ও একচেটিয়া পুঁজি নিজের চরম সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে করোনা ভাইরাস কে হাতিয়ার করছে, টিকা, ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণের উপর ফাটকা খেলে মুনাফার পাহাড় তৈরি করছে, যখন কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে দিশাহারা হয়ে গেছেন, তখন সিএএ ২০০৩ এর ১৪-এ ধারা অনুসারে এনআরসি করালে কর্পোরেটদের লাভ আরো বেড়ে যাবে। জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর) ₹৩,৯৪১ কোটি খরচ করে ডিজিটাল ভাবে হচ্ছে। ২০২৪ এর মধ্যে এই এনপিআর তালিকা প্রকাশ হবে আর তার ভিত্তিতেই ভারতের এনআরসি তৈরি হয়ে যাবে। যতদিন পর্যন্ত গোটা দেশে এনআরসি হচ্ছে না, ততদিন পর্যন্ত বিদেশী আইন, ১৯৪৬, ব্যবহার করেই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলো অসহায় মানুষদের এই ডিটেনশন কেন্দ্রে বন্দী রাখতে পারেন। কেরলে ডিটেনশন কেন্দ্র তৈরি তাই হিম শৈলের চূড়া মাত্র। এই গভীর ষড়যন্ত্রের, হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের সাথে সিপিআই (এম) এর সামাজিক ফ্যাসিবাদের যে ওতপ্রোত সম্পর্ক সেটা ঢাকাই থেকে যাবে। আজ এই ডিটেনশন কেন্দ্র থেকে জনগণ কে বাঁচাতে জরুরী হল এনআরসি আনা সিএএ ২০০৩ সহ সিএএ ২০১৯ ও সিএএ ১৯৮৭ বাতিল করা, বিদেশী আইন, ১৯৪৬, বাতিল করা, আইন করে প্রত্যেক ভারতবাসীর নিঃশর্ত নাগরিকত্বের অধিকার স্বীকার করা ও জন্মগত নাগরিকত্বের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলে আন্দোলন গড়ে তোলা। আর স্বাভাবিক ভাবেই সিপিআই (এম) এর মতন কর্পোরেট পুঁজির দালাল এই আন্দোলনে কোন সাথী হতে পারবে না বরং ঘুর পথে জনতার উপরেই আক্রমণ নামিয়ে আনবে।