কলকাতার ভবানীপুর থেকে রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো অবধি রাস্তার নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নামে। কংগ্রেস জমানায় নামকরণ হলেও বামফ্রন্ট থেকে তৃণমূল কংগ্রেস, কেউই সেই নাম বদল করেনি, যদিও খাতায় কলমে তাঁরা নাকি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চরম বিরোধী।
অতি চালাক লোকেরা বলেন ভারতীয় জনসংঘ (বিজেএস) প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি নাকি কলকাতা কে পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার থেকে বাঁচিয়েছিলেন– বস্তুত ইতিহাসের পাতায় এইরকম কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। উল্টে সেইসময়ে কংগ্রেসের কিরণ শংকরের মতন নেতারা, সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসুর মতন নেতারা বাংলাকে অবিভক্ত ও স্বাধীন রাখার প্রচেষ্টা করেছিলেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি সেইসময় লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন কে গোপনে চিঠি দিয়েছিলেন বাংলা কে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করতে। এমন কী ১৯৪৭ এ দেশ ভাগের ক্ষেত্রেও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি একই ভূমিকা রাখেন।
১৯৪১ সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের বলেন “এখানে থাকলে হিন্দু সংস্কৃতির মতন করে থাকতে হবে আর নইলে ব্যাগ পত্তর গুটিয়ে পাকিস্তান চলে যান”। যে ন্যারেটিভ আজও বিজেএসের উত্তরসূরি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা মন্ত্রীরা ব্যবহার করে আসছেনতথাকথিত স্বাধীন ভারতে।তারপর ১৯৪৩-র ৩রা মার্চ, সিন্ধের মন্ত্রিসভায় ভারতের মুসলমানদের জন্য যখন পৃথক রাষ্ট্রের দাবি পাশ করা হয়, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির হিন্দু মহাসভা কিন্তু সরকার থেকে বেরিয়ে আসেনি এই প্রস্তাবের প্রতিবাদে।
১৯২৯ সালে জওহরলাল নেহরুর হাত ধরে বাংলার বিধানসভায় পা রেখেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার মতনই এই ক্ষেত্রেও আশুতোষ মুখার্জির পুত্র হওয়ার পরিচয় তাঁর সহায়ক হয়। ১৯৩০ সালে শ্যামাপ্রসাদের হিন্দু মুসলিম বিভাজনের কার্যকলাপ দেখে বাকি কংগ্রেস নেতা মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেন। ১৯৪১ সালে বাংলার আব্দুল কাসিম ফজলুল হকের র সরকারের ওপর থেকে মুসলিম লীগ সমর্থন প্রত্যাহার করে। কারণ, এমএ জিন্নার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ভাইসরয়ের প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সাথে হাত মেলান ফজলুল হক। এইসময় ফজলুল হকের বিভাজন নীতি দেখেই ময়দানে এগিয়ে আসে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। ১৯৪১ সালে জোট সরকার গঠনে সাহায্য করেন এবং ফজলুল হক সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। ১৯৪২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ওই পদে আসীন ছিলেন।
১৯৪২ সালে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হয় ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি চেয়ে, ইংরেজ রা তৎকালীন পরিস্থিতিতে মানতে রাজি না হলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি কংগ্রেস বিরোধিতায় ইংরেজদের পক্ষ ধরেন। কংগ্রেস সেইসময় আইন অমান্য ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নামেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ নিয়ে দুটোরই বিরোধিতা করেন। ১৯৪২ সালে ২৬ শে জুলাই বাংলার গভর্নর জন হার্বাট কে তিনি চিঠিতে লেখেন, “যুদ্ধ চলার সময় যদি কেউ জনতার আবেগ কে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করে সরকার যেন তা কড়া হাতে দমন করে”। ব্রিটিশ গভর্নর কে লেখা চিঠিতে তিনি আরো বলেন, “আপনাদের একজন মন্ত্রী হিসেবে আমি পূর্ণ সহযোগিতা জানাচ্ছি”। ভারত ছাড়ো আন্দোলন যাতে ব্যর্থ হয় তার দরবার করেছিলেন তিনি সরকারের কাছে। মন্ত্রীরা সে সময় কী প্রচার করবে তাও তিনি গভর্নর কে চিঠিতে লিখে জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন “ভারতীয়দের ব্রিটিশ সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে…”
এছাড়াও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি নেহরুর কিছু হিন্দু আইনের সংস্কার নিয়ে আপত্তি করেছিলেন। বিবাহ বিচ্ছেদ ও একবিবাহ নীতির বিরোধিতা করেন তিনি। নেহরু- লিয়াকত চুক্তির বিরোধিতা করে ক্যাবিনেট থেকে ইস্তফা দেন তিনি ১৯৫০ সালে। সেইসময় তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) মনের মানুষ হয়ে ওঠেন। বিনায়ক সভারকারের হিন্দু মহাসভা ছেড়ে ওইসময় তাকে হিন্দুত্বের রাজনৈতিক দল বিজেএস প্রতিষ্ঠায় মদদ করে আরএসএস।,
নেহরু ও বিআর আম্বেদকর এর পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান বিরোধী ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। চল্লিশের দশকে নারী-পুরুষ সমান অধিকারের জন্য আনা হিন্দু কোড বিলের তীব্র বিরোধিতা করেন, যার মাধ্যমে হিন্দু মহিলাদের ক্ষমতা দিতে চাওয়া হয়েছিল। বিবাহ বিচ্ছেদ না করে কোনো পুরুষ আবার বিয়ে করলে এই বিল তাকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই বিলের মাধ্যমে মহিলাদের সমান অধিকার ও ভঙ্গুর বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার অধিকার দেওয়া হয় যার বিরোধিতা করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ও তার নেতৃত্বে আরএসএস ও হিন্দু মহাসভা। এইসময় হিন্দুত্ববাদীরা এই বিলের বিরুদ্ধে একাধিক পথ সভা করে এবং নেহরু ও আম্বেদকরের কুশপুতুল দাহ করে। এই সময় শ্যামাপ্রসাদ বলেন, “হিন্দু সংস্কৃতির যে ধারা তাতে আঘাত হানবে হিন্দু কোড। হিন্দু সংস্কৃতির স্বাধীন স্বাভাবিক যে ছন্দ তাও ধাক্কা খাবে।”
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ কিন্তু খরা বা অনাবৃষ্টি বা খারাপ ফসল হওয়ার কারণে হয়নি, হয়েছিল সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশ সরকারের গাফিলতিতে। জাপানের কাছে বার্মার পতনের ফলে সেখান থেকে চালের আমদানি বন্ধ হয়ে গেল। তার ওপর যুদ্ধের সৈন্যদের জন্য জমা করা হয়েছিল প্রচুর খাদ্যশস্য এবং বাকি যা ফসল ছিল তার সুষম বণ্টন করা হয়নি বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে। কলকাতা শহরের বাসিন্দাদের জন্য এবং কলকারখানার শ্রমিকদের জন্য চালের বন্দোবস্ত হলেও, খাবার পৌঁছায় নি রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলগুলিতে। এর সঙ্গে শুরু হল মজুতদারদের চালের কালোবাজারি যা খাদ্যদ্রব্যের দাম তোলে গরীব মানুষের নাগালের বাইরে। প্রতিদিন মৃতদেহের সংখ্যা বাড়তে লাগলো শহরের রাস্তাঘাটে। কলকাতা শহরের এই চরম দুরবস্থার ছবি সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেইসময় চাপিয়েছেন স্টেটসম্যান সংবাদপত্রের সম্পাদক ইয়ান স্টিফেন্স। সেসব ছবি ছড়িয়ে যায় হুহু করে গোটা বিশ্বে।
এই অবস্থায় সরকারি ত্রাণব্যবস্থা যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন বেসরকারি ত্রাণ শুরু হল শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পরিচালনায়। তিনি ‘বেঙ্গল রিলিফ কমিটি’ বা বিআরসির রিলিফ কমিশনার নিযুক্ত হলেন এবং এই দুর্ভিক্ষের হাহাকারের মধ্যেও বিভাজনের রাজনীতি করায় আরো জোর দিলেন। ত্রাণকেন্দ্র স্থাপন করলেন কেবলমাত্র সেই সব গ্রাম এবং ওয়ার্ডে যেখানে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিআরসির সঙ্গে সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদের তত্ত্বাবধানেই তৈরি হলো হিন্দু মহাসভা রিলিফ কমিটি। কমিটির বক্তব্য ছিল, যেহেতু সরকারি ত্রাণকেন্দ্রের ক্যান্টিনগুলোতে বেশিরভাগ রাঁধুনি মুসলমান, তাই হিন্দুদের নাকি সেখানে খাবার ব্যাপারে আপত্তি আছে। হিন্দু মহাসভার নিজেদের ক্যান্টিনে কেবলমাত্র হিন্দুদের রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হতো । মহাসভার দাবি ছিল যে, রান্না খাবার না দেওয়া হলেও, মুসলমানদের পুরোপুরি বঞ্চিত না করে তাঁদেরকে দেওয়া হয় কাঁচা শস্য। সাংবাদিক টিজি নারায়ণ মেদিনীপুরে হিন্দু মহাসভার একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখেন যে বাইরে হাজার হাজার মরণাপন্ন মানুষ থাকা সত্ত্বেওও, হাসপাতালের চল্লিশটির মধ্যে পনেরোটি শয্যা খালি ছিল।
যে ভয়ঙ্কর সময়ে প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙালি না খেতে পেয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন, সেই সময় শ্যামাপ্রসাদের দুশ্চিন্তার কারণ উচ্চবর্ণের আধপেটা-খাওয়া হিন্দু কী করে মুসলমান রাঁধুনির হাতের রান্না সরকারি ক্যান্টিনে খেতে পারেন। এর সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভিক্ষের ত্রাণকার্য নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলতেই থাকে– হিন্দু মহাসভাও আঙুল তুলতে থাকে মুসলিম লীগ নিয়ন্ত্রিত বাংলার গভর্নমেন্টের দিকে, তাদের বক্তব্য সরকারি ত্রাণকার্য্যে মুসলিম জনগণের প্রতি পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট ।
সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবাংলায় সাম্প্রদায়িক বিভাজনে ভোট হয়ে পুনরায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি কে একমাত্র বিরোধী রেখে ক্ষমতায় আসায় ও বামেরা শূন্য হয়ে যাওয়ার ফলে আরএসএস ভীষণ খুশি হয়েছে, যা নিয়ে আরএসএসের মোহন ভগবৎ বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু যারা মমতা কে ফ্যাসিবাদ বিরোধী নেত্রী ভেবে বিজেপি বিরুদ্ধে গিয়ে মমতার পক্ষ নিলেন তাদের জন্য মমতা কী করলেন? মমতা কি ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা করলেন নাকি ক্ষমতায় এসে বিজেপি কাজ গুলোই সুষ্ঠ মাথায় পূর্ণ করে চলেছেন?
আরএসএস যে নিজের হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদী রাজনীতি প্রতিটা সংসদীয় দলের মধ্যেই প্রচার করে তা সবার কাছে আজ স্পষ্ট, আর এই মমতা কেই আরএসএস পশ্চিমবঙ্গে শ্যামাপ্রসাদের পরে হিন্দুত্বের রাজনীতি প্রচারে কাজে লাগিয়েছে। যে কারণে মমতা বন্দোপাধ্যায় পূর্বে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেস বানিয়ে বিজেপি কে ফ্রন্টে এনে লড়েন, বাংলায় তাদের জায়গা করে দিতে। সে সময় মমতা কে আরএসএস তাদের দূর্গা বলেও অভিহিত করেন। আর এই মমতা বন্দোপাধ্যায়ই বিদেশি ব্যবসাদারদের দালাল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বা সিপিআই (এম)-র সরকার কে ২০১১ সালে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বাংলার মসনদে বসেন। যাদের দৌলতে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে তাদের কে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই প্রতিশ্রুতি তিনি ভঙ্গ করেন। কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি করে নির্মম ভাবে হত্যা করেন খেটে খাওয়া মানুষের নেতা ও লালগড়-সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন তৈরির অন্যতম নেতা ‘কিষেনজি’ কে।
এই “ফ্যাসিবাদ বিরোধী নেত্রী” আরএসএসের হিন্দুত্বের রাজনীতির অন্যতম ভূমিকা পালন করে চলেছেন পশ্চিমবাংলায়। পুরোহিত ভাতা থেকে হনুমান জয়ন্তী সমস্ত কিছুই জোর কদমে পালন করে এমনকি ২রা মে-র আগে তাঁর দেওয়া কথা ভঙ্গ করেই বৃহৎ পুঁজির মার্কেট স্থাপনে ধনিক শ্রেণী কে খুশি করতেই কেন্দ্র সরকারের দেখানো পথেই লকডাউন এর মতন জনবিরোধী কর্মসূচি ধারণ করে। এই লকডাউনে রাজ্যে চলা কালোবাজারি তুঙ্গে তুলতেই তাঁর পুলিশ ও স্বশস্ত্র পান্ডাদের দিয়ে রাজ্যের গরীব খেটে খাওয়া মানুষ কে কড়া হাতে দমন করতে ব্যবহার করেন। রাজ্য জুড়ে যখন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষ লড়াই করছেন তখন তিনি কেন্দ্র সরকারের আনা বিভিন্ন নীতির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে ভাঙর থেকে বাগনান সর্বত্র জায়গায় প্রতিবাদ করা গরীব মানুষ কে জেলে ভরে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার।
আজ যখন এত কিছুর পর “ফ্যাসিবাদ বিরোধী নেত্রী” মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ওপর কিছু সুবিধাবাদী-সংশোধনবাদী বামেদের ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার আশা রয়ে গেছে তখনি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার সরাসরি হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদের আইকন শ্যামাপ্রসাদের জন্মদিন পালন করার ডাক দিল রাজ্য জুড়ে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, দমদম দক্ষিণের বিধায়ক ও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আগামী ২৫ জুন কেওড়াতলা শ্মশানে বিদ্রোহী ক্ষুদিরামের মূর্তির পাশে সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী শ্যামাপ্রসাদের মূর্তিতে মাল্যদান করবেন এবং আরএসএসের ন্যারেটিভে “পশ্চিমবঙ্গ দিবস” পালন করবেন।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসীন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকারের এইসমস্ত কর্মসূচী দেখেই আমাদের চোখে আরো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস বাংলায় আরএসএসের বি টিম হয়ে রাজত্ব করছে; বিজেপি না থাকলেও বাংলার মসনদে আরএসএস-ই বসে আছে এবং মমতা বন্দোপাধ্যায় আজ বাংলায় আরএসএসের শ্যামাপ্রসাদ হয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও আম্বানি-আদানি মতন বৃহৎ মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিদের স্বপ্ন পূরণের গতি আরো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যাতে সর্বনাশা জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) প্রয়োগ করে শ্রমজীবী মানুষ কে খুব সহজেই সস্তার শ্রমিক বানিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির লক্ষ্য পূরণ করা যায় এই বাংলার মাটিতে।
২০১৮ সালে বিজেপি সরকার সারা দেশ জুড়ে হিন্দুত্ব সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানো শুরু করলে, প্রথম প্রত্যাঘাত শুরু় হয়েছিল এই বাংলা দিয়েই। হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীদের আম্বেদকর-পেরিয়র-লেনিনের মূর্তি ভাঙার কারণে একদল বাম ছাত্র-যুব কেওড়াতলা শ্মশানে ক্ষুদিরামের পাশে শ্যামাপ্রসাদের মূর্তিতে আঘাত হানে। এটা খালি মূর্তি আঘাত হানা ছিল না, ছিল হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদের আদর্শগত রাজনীতির ওপরে আঘাত। যে কারণে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার তখন তাঁদের হাজতে ভরে । তবে তখন কাজ পুরোপুরি হয়নি; বিদ্রোহী ক্ষুদিরামের পাশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের দালাল, সাম্প্রদায়িক শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি থাকাটা বাংলার মানুষের কাছে চরম লজ্জার বিষয়। আজ যখন রাজ্য সরকার সেই মূর্তিতে পুজো করা শুরু করেছেন সরাসরি ভাবে তখন এটা পশ্চিমবঙ্গ গণতন্ত্রপ্রিয়, ফ্যাসিবাদ-বিরোধী মানুষের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকে বাংলার নয়া শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি কে যোগ্য জবাব দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে আরএসএস কে মুছে, ভবিষ্যতে কেওড়াতলা ক্ষুদিরামের পাশে শ্যামাপ্রসাদের সমস্ত স্মৃতি সৌধ মুছে, বিদ্রোহীদের মূর্তি স্থাপন করা, যারা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বাংলা তথা পুরো দেশ বাঁচাতেই নিঃশর্তে তাঁদের জীবন আত্মবলিদান দিয়েছিলেন সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে।