Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wp-hide-security-enhancer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
ইরানের 'হিজাব বিদ্রোহ' কি তাহলে একটা নতুন 'রঙিন বিপ্লব'? | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

কিছুদিন আগেই সাংহাই সহযোগিতা সংঘের (এসসিও) শিখর সম্মেলনে, চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বিশ্বের মার্কিন-বিরোধী শক্তিগুলোকে ‘রঙিন বিপ্লব’ থেকে সাবধান থাকতে বলেছিলেন। এসসিও হল জাতি সংঘের বাইরে বিশ্বের সব চেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সংগঠন——এই সংগঠনের সদস্য দেশে বিশ্ব জনসংখ্যার ৪০% মানুষ বাস করেন ও এই দেশগুলোর সম্মিলিত গড় জাতীয় উৎপাদ (জিডিপি) বিশ্বের ৩০%——যার রাশ  আবার মার্কিন ও পশ্চিমী শক্তির হাতে নেই।  

সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র উজবেকিস্তানের সমরখন্দ শহরে অনুষ্ঠিত ২০২২ সালের এসসিও-র শিখর সম্মেলনে ইরানের অন্তর্ভুক্তি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই না, তার দোসর ইজরায়েল আর সৌদি আরবের কাছেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। তাই ইরান কে পূর্ণ সদস্য হতে দেখে সৌদি আরবও এসসিও-এর অবজার্ভার হিসাবে যোগ দিয়েছে।  

এহেন সময়ে ইরানের ‘হিজাব বিদ্রোহ’ নিয়ে কিছু প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। কেন এই আন্দোলন শুরু হল? কী এই আন্দোলনের দাবি আর কী ভাবে এই আন্দোলন কে আজকের পরিস্থিতিতে দেখতে হবে? ইরানের ‘হিজাব বিদ্রোহ’ কে কি মার্কিন আর পশ্চিমী লেন্স থেকে দেখতে হবে নাকি এই ‘আন্দোলন’ কে একটি বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্য-ভিত্তিক বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে যে এর মূল ভিত্তি কী? 

ইরানে এক জন নারী কে হিজাব না পরার জন্যে মেরে ফেলা হয়েছে বলে যে পশ্চিমী প্রচার শুরু হয়েছে, তার সাথে সেখানে জায়গায় জায়গায় নারীদের করা হিজাব বিরোধী আন্দোলনের দৃশ্য দেখিয়ে বিশ্বের তথাকথিত  ‘নারীবাদী’ শক্তিকে ইরানের সরকার বিরোধী যে বৃহৎ দাঙ্গা শুরু হয়েছে তার পক্ষে দাঁড় করানো হচ্ছে, সেটা দেখে শি-র সতর্কবার্তা বারবার এই পরিস্থিতিতে উপযুক্ত মনে হচ্ছে।

ইরানে কী ঘটেছিল? 

ইরানের একজন ২২ বছর বয়সী কুর্দ তরুণী মহাশা আমিনী কে গত ১৩ই সেপ্টেম্বরে নীতি পুলিশ গ্রেফতার করে ঠিক ভাবে হিজাব দিয়ে মাথা না ঢাকার অভিযোগে। আমিনীর পরিবারের লোকেরা অভিযোগ করে যে পুলিশ তরুণীর উপর গাড়িতে নৃশংস অত্যাচার করে তার ফলে গুরুতর আঘাত পেয়ে তিনি কোমায় চলে যান। অভিযোগ যে ১৬ই সেপ্টেম্বরে আমিনীর মৃত্যু হয়। 

এই খবর প্রকাশের সাথে সাথে ইরানের সাঘেজে মহিলারা হিজাব খুলে প্রদর্শন করেন সরকারের বিরুদ্ধে। দ্রুত সেই বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে খোমেইনী শাসনের বিরুদ্ধে। ১৯৭৯ সালের “ইসলামিক বিপ্লবের” পর থেকে ইরানে নারীদের প্রকাশ্যে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। এই আইন না মানলে নারীদের প্রকাশ্যে অপমান করার ও আইনত শাস্তি দেওয়ার বিধানও ইরানের আইনে আছে।  

ইরানের নারী বিক্ষোভের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথেই সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করে। ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি আমিনীর মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করার আদেশ দিয়েছেন, যা অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক ও দেশের প্রসিকিউটার শুরু করে দিয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের নিলম্বিত করা হয়েছে ও তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।  

অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে যে আমিনী কে কোনো রকম অত্যাচার করা হয়নি। বরং তাঁকে গ্রেফতার করে থানায় “নৈতিক শিক্ষার” জন্যে নিয়ে যাওয়ার সময়ে আতঙ্কিত হয়ে তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয় ও তাড়াতাড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান যে তিনি কোমায় চলে গেছেন। এর পর তাঁর মৃত্যু হয়।  

সরকারের তদন্তের আশ্বাসন বা পুলিশী বিবৃতিতে আন্দোলন প্রশমিত হয়নি। একদিকে যেমন নারীদের ——বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর নারীদের —— হিজাব-বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে, তেমনি অন্যদিকে নানা জায়গায় সরকার বিরোধী প্রদর্শনের নামে দাঙ্গা শুরু হয়। শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে আগুন লাগানো হয় ও পবিত্র কোরান গ্রন্থ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘাতে দুই পক্ষের অনেকে হতাহত হন।  

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া  

ইরানের ‘হিজাব বিদ্রোহ’ হঠাৎ পশ্চিমী সরকার আর মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাছে ভীষণ প্রিয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘ সাত মাস ধরে ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার ‘আসন্ন পরাজয়ের’ কল্পকথা শোনাতে শোনাতে ক্লান্ত হওয়া পশ্চিমী সংবাদ মাধ্যম ইরানের ‘হিজাব বিদ্রোহ’ কে কেন্দ্র করে নতুন ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ময়দানে। ইরানের ‘হিজাব বিদ্রোহ’ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতন পশ্চিমী শক্তিগুলোও।  

ইইউ-র বিদেশ নীতির প্রধান জোসেফ বোরেল একটি বিবৃতিতে ইরানের কড়া নিন্দা করেন। তিনি ইরানের সরকারের ইন্টারনেট সেন্সরশিপ ও প্রতিবাদীদের উপর দমন পীড়নের বিরোধিতা করেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন ইরানের নিন্দা করেন। তিনি জানান তাঁর সরকার ইরানের প্রতিবাদী নারীদের পাশে, সেখানকার নাগরিকদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাচ্ছে ও তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।  

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের উপর যে অমানবিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে, যার ফলে বহিঃ বিশ্বের সাথে ইরানের বাণিজ্য অনেক ধাক্কা খেয়েছে, সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ না করে বাইডেনের সরকার জানায় যে মার্কিন তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা গুলো কে নিষেধাজ্ঞার থেকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা ইরানের জনগণ কে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করে সরকারের নজরদারী এড়িয়ে নিজেদের বক্তব্য বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সাহায্য করে। 

ব্রিটেনের বিদেশ মন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ ইরানের শাসকদের নিন্দা করেছেন ও আন্দোলন দমন পীড়ন বন্ধ করতে বলেছেন। তিনি ইরানের সরকারের কাছে আমিনীর মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন। ফ্রান্সও ইরানের ঘটনার নিন্দা করেছে ও আমিনীর মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবি করেছে।  

ফরাসী রাষ্ট্রপতি ইম্যানুয়েল ম্যাক্রো জানিয়েছেন যে তিনি ইরানের রাষ্ট্রপতি রাইসির সাথে নারী আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছেন ও সরকারি দমন পীড়নের প্রতিবাদ করেছেন। জার্মান বিদেশ মন্ত্রী আনালেনা বায়েরবক বলেছেন যে জার্মানি ইরান কে অনুরোধ করছে আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ করতে দিতে কোনো রকম হিংসার আশ্রয় না নিতে। অন্যদিকে ইতালির নব্য বিজয়ী ফ্যাসিবাদী নেত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইরানের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ও বলেছেন তিনি ইরান ও বিশ্বের সর্বত্রে যে নারীরা নিজেদের স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্যে লড়াই করছেন, তাঁদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন।  

দশচক্রে ভগবান ভূত 

যদিও আমিনীর পুলিশী অত্যাচারে মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে গড়ে ওঠা স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ শুরু হয় মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত নারীদের, তাঁদের আন্দোলন হঠাৎ করে যে ভাবে হিংসাত্মক আকার ধারণ করলো ও আন্তর্জাতিক স্তরে ইরানের ইসলামিক শাসন কে কাঠগড়ায় তুললো, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে এই ঘটনা ঠিক তখন ঘটলো যখন ইরান কে রাশিয়া ও চীনের সহযোগিতায় এসসিও-র পূর্ণ সদস্য বানানো হল ও চীনা রাষ্ট্রপতি শি ‘রঙিন বিপ্লব’, যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী সরকারগুলোকে উৎখাত করতে গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ সংগঠিত করে থাকে, নিয়ে সদস্য দেশগুলোকে সাবধান করলেন। 

ইরান নিয়ে যে দেশগুলো তেড়েফুঁড়ে উঠেছে তারাই কিন্তু সৌদি আরবের মতন ওয়াহাবি রাজতন্ত্রের একনায়কতন্ত্র ও সে দেশের নারীদের উপর কঠোর ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো কথা বলে না। এই পশ্চিমী দেশগুলোর কোনো সরকারই কিন্তু ইজরায়েল কতৃক প্যালেস্টাইনের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাদের নিয়মিত রাষ্ট্রীয় হত্যার কোনো প্রতিবাদ করে না।  

যদিও ইরানে শিয়া ইসলামিক শাসন জারি আছে ও সেখানে ইসলামিক মৌলবাদ রাষ্ট্রের মাথায় অবস্থিত, তবুও ইরান একটি প্রজাতান্ত্রিক দেশ ও সেখানে নিয়মিত নির্বাচন হয়ে থাকে ও পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে জিতে সরকার গঠন হয়। সৌদি আরবের মতন মার্কিন মিত্র দেশে কিন্তু নির্বাচন দূরে থাকুক, সাধারণ মানুষের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই, কারণ সেখানে রাজতন্ত্রের একনায়কতন্ত্র কায়েম আছে মার্কিন অস্ত্রবলে।  

ইরানের নারীদের শিক্ষার, ভোটদানের ও চাকরি করার যেমন সমান অধিকার আছে তেমনি সেখান থেকে প্রতি বছর অসংখ্য নারী বিদেশে পড়তে বা গবেষণা করতে যান। ইরানের নারীদের বিজ্ঞান, চিকিৎসা, শিল্প ও সিনেমা সহ নানা ক্ষেত্রে প্রচুর অবদান আছে, এবং সর্বোপরি তাঁদের আন্দোলন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে তাঁরা দেশের ভিতর বিরোধ প্রদর্শনের অধিকারও আদায় করেছেন।  

অন্যদিকে সৌদি আরবে রাজতন্ত্রের শাসনে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া কোনো নারীর বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। তাঁদের শুধু হিজাবই নয় বরং বাধ্যতামূলক ভাবে আবায়া (বোরখা) পরতে হয় ও মুখ ঢাকতে হয় বাড়ির বাইরে বের হলে। সেখানে বহু সংগ্রামের পরে মহিলাদের শুধু গাড়ি চালানোর শর্তসাপেক্ষ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।  

রাস্তায় নেমে হিজাব বা বোরখা বিরোধী আন্দোলন সৌদি আরবে দেখা যাবে না কারণ সেখানকার নারীদের সেই রাজনৈতিক চেতনার মান নেই, যা ইরানের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে পার্সি নারীরা লড়াই করে আদায় করেছেন। বরং সৌদি আরবের বর্বর আইনে প্রতিবাদ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখালে প্রকাশ্যে গর্দান কেটে শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে।  

এহেন সৌদি আরবের নারী স্বাধীনতা নিয়ে নিশ্চুপ থাকা সকল পশ্চিমী সরকার হঠাৎ ইরান নিয়ে মুখ খোলায়, ফ্রান্সের মতন দেশ যেখানে জোর করে নারী কে রাষ্ট্রের পছন্দের কাপড় পরার জন্যে হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়, বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতন দেশ যেখানে রাস্তায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের পুলিশ নির্মম ভাবে খুন করে, এই সব দেশের ইরান নিয়ে সরব হওয়ায় আর সৌদি আরব ও ইজরায়েল নিয়ে চোখে ফেট্টি বাঁধার ঘটনা প্রমাণ করছে যে দশচক্রে ভগবান ভূত হয়েছে।  

মার্কিন-ইজরায়েলি-সৌদি চক্র  

তেহরান নাকি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার জন্যে ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট করছে এই অভিযোগ তুলে দীর্ঘ অনেক বছর ধরে ইরানের উপর অমানবিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন প্রশাসন ও তার লেজুড় পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলো এই প্রক্রিয়ায় যোগ দেয়। যদিও ইরান ঘোষণা করেছে যে সেখানে পরমাণু শক্তি নিয়ে যে প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া চলছে তার লক্ষ্য হল দেশের জন্যে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা।  

২০১৫ সাল নাগাদ প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সরকারের সাথে ইরান একটি চুক্তি করার পথেও চলা শুরু করে ও তার ফলে কিছু নিষেধাজ্ঞা যদিও শিথিল হয়েছিল, জায়নবাদী ইজরায়েল ও ওয়াহাবি সৌদি আরবের চাপে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার পুনরায় ইরানের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপায় ও ইরানের থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে ভারত সহ অন্য দেশগুলো কে বাধ্য করে।  

ইরানের এসসিও-তে যোগদানের ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এই সংগঠনের সদস্য দেশগুলোর সাথে ইরানের যেমন বাণিজ্যের রাস্তা খুলে যাবে তেমনি ভারতের সাথে চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে ও চীনের সাথে বেল্ট-রোড ইনিশিয়েটিভ-এর মাধ্যমে ইরানের প্রভূত উন্নয়ন হওয়ার রাস্তাও প্রশস্ত হবে।  

এই সময়ে, বিশেষ করে সিরিয়ার যুদ্ধ থেকে শুরু করে প্যালেস্টাইনের মুক্তি সংগ্রামে ও ইয়েমেনের সৌদি আরবীয় পুতুল সরকারের বিরুদ্ধে জনযুদ্ধে যখন ইরান এক বিরাট ভূমিকা পালন করে মধ্য প্রাচ্যে নিজের প্রভাব বৃদ্ধি করেছে, তখন ইরানের অভ্যন্তরে গন্ডগোলের ফলে কিন্তু প্রভূত মুনাফা হবে ইজরায়েল আর সৌদি আরবের।  

বাইডেনের সরকারের সাথে যাতে ইরানের পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত কোনো চুক্তি না হয় সেই দাবি নিয়ে অগাস্ট মাসে মার্কিন সফরে যান ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া। তিনি জানান ইরানের ব্যাপারে ইজরায়েল চুপ করে বসে থাকবে না ও অভিযোগ করেন যে ইরান নাকি বিশ্ব কে বোকা বানাচ্ছে।  

যে দখলকারী রাষ্ট্র প্রতিনিয়ত প্যালেস্টাইনের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কে হত্যা করছে আন্তর্জাতিক আইন কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, সেই ইজরায়েল এই ভাবে আদা-জল খেয়ে ইরানের বিরুদ্ধে লাগায়, ইরানের বর্তমান সঙ্কটে তেল আভিভের ভূমিকার কে নস্যাৎ করা যায় না। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কালে যখন ইরানের এক বিখ্যাত পরমাণু গবেষক কে ইরানের ভিতরেই খুন করার অভিযোগের তীর মোসাদের দিকে।  

এই ঘটনাবলী ইরানের ‘হিজাব বিদ্রোহ’ ঘটার পিছনে মোসাদ, সিআইএ আর সৌদি গুপ্তচর সংস্থার জড়িত থাকার যেমন প্রমাণ দিচ্ছে তেমনি জানান দিচ্ছে যে এই দেশগুলোর ইরান নিয়ে হৈচৈ করার পিছনে নারী স্বাধীনতার দাবির কোনো সম্পর্ক নেই, বরং ইরানের এক শ্রেণীর নারীদের সরকার-বিরোধী ক্ষোভ কে কাজে লাগিয়ে তারা তেহরান কে বাধ্য করতে চায় পশ্চিমের সামনে নতজানু হতে। 

বিদেশী মদদের অভিযোগ  

ইরানের সরকার অভিযোগ করেছে যে যদিও নারীদের আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে মসজিদে আগুন দেওয়া, কোরান পোড়ানোর মতন ঘটনায় তারা বিদেশী শক্তির হাত দেখছে। ইরান ইন্টারন্যাশনাল নামক যে লন্ডন-স্থিত টিভি চ্যানেলে প্রতিনিয়ত আন্দোলন নিয়ে নানা বক্তব্য শোনানো হচ্ছে, অভিযোগ তা সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সলমনের অর্থে প্রযোজিত।  

তেমনি ইরান থেকে বিতাড়িত, সিআইএ-র অর্থে চলা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন মুজাহিদিন-এ-খালক (এমইকে) কে সন্দেহ করছে ইরান সরকার। আগে ইরান ও ইরাকে এই সংগঠনের প্রভাব থাকলেও এদের দেশ থেকে খেদায় ইরানের সরকার এবং নানা পশ্চিমী শক্তি, যারা প্রতিনিয়ত ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বড়-বড় কথা বলে, তারা এই সংগঠন কে নিজেদের দেশে স্থান দিয়েছে।  

ব্রিটেন ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে ইরানের সরকার তাদের দেশ থেকে পরিচালিত ইরান-বিরোধী মিথ্যা প্রচার নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিশেষ করে ব্রিটেনের ইরান-স্থিত রাষ্ট্রদূত সাইমন শেরক্লিফ কে তাঁর দেশের থেকে পার্সী ভাষার চ্যানেলগুলোর দ্বারা লাগাতার ইরানের বিরুদ্ধে চলা মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এত সত্ত্বেও ব্রিটেন বা কোনো পশ্চিমী শক্তি ইরান নিয়ে মিথ্যা খবর প্রচার ও সন্ত্রাসবাদীদের হুল্লোড় আটকানোর কোনো চেষ্টা করেনি। 

শেষ পর্যন্ত কী হবে? 

ইরান নিয়ে অশ্রু বর্ষণ করা পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলো যদি একবারও এইটুকু প্রয়াস ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার ব্যাপারে করতো, তাহলে ইরানের নারীদের অধিকার কে তারা আরও সুরক্ষিত করতে পারতো। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছে তার ফল ইরানের নারীদের ও শিশুদেরও ভুগতে হচ্ছে, বিশেষ করে চিকিৎসা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে।  

যদি ইরান কে এসসিও-র সদস্য হয়ে বাণিজ্য করার ও রাশিয়া ও চীনের সাথে শক্তিশালী সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার থেকে আটকানোর প্রয়াস না করতো পশ্চিমী শক্তিগুলো তাহলে এই ‘হিজাব বিদ্রোহ’ নিয়ে এত হৈচৈ কি হত? পশ্চিমী মিডিয়া কি এই বিষয়কে এত গুরুত্ব দিত? যদি দিত তাহলে ভারতের মুসলিম ছাত্রীদের কে জোর করে হিজাব পরতে বাঁধা দেওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে আর নারীদের জোর করে বোরখা পরিয়ে রাখা সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধেও কি এই পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলো ও তাদের মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যম সোচ্চার হত বা হয়েছে কোনো দিন? 

ইরানের ‘হিজাব বিদ্রোহ’ একটি দেশের সার্বভৌমত্ব কে উপড়ে ফেলে, গন্ডগোল ও সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে নির্বাচিত সরকার কে উৎখাত করে একটি পুতুল সরকার বসানোর সিআইএ-মোসাদ চক্রের ষড়যন্ত্রের উপসর্গ ছাড়া কিছুই নয়। ইরানের শ্রমজীবী ও শোষিত-নির্যাতিত নারীদের রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক মুক্তি বাদে সামাজিক বন্ধন ও শোষণ থেকে কোনো মুক্তিই সম্ভব নয়। অথচ এই সামগ্রিক ঘটনায় শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণীর নারীরা থেকে গেলেন অন্তরালে, যা আগামী দিনের জন্যে এক সাবধান বাণী শোনাচ্ছে।

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla