Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ কি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চলেছে? | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

জায়নবাদী ইজরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ দেখে গোটা পশ্চিমা বিশ্বে গেল – গেল রব উঠেছে। মালিকের তারস্বরে আর্তনাদ শুনে ভয়ানক ভাবে কাঁদা শুরু করেছে দক্ষিণ গোলার্ধে পশ্চিমাদের পোষ্য সারমেয়র দল। এই অন্য পাতায় যাঁরা ইউক্রেনীয় নাৎসিদের রুশ সৈন্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী লড়াইকে “মুক্তি যুদ্ধ” বলে অভিবাদন জানাচ্ছে, তারাই মধ্য প্রাচ্যের পাতায় এসে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রাম কে “সন্ত্রাসবাদী” বলে গাল পাড়ছে। এর মধ্যেই আবার দুই পক্ষ কে শান্তির জন্যে আলোচনা করার দাবি তুলেছে আর এক দল, যাঁরা সর্বদাই দুই পক্ষের দোষ দেখেন। শোষক আর শোষিতের মধ্যে দ্বন্দ্বেও।

শনিবার, ৭ই অক্টোবর, স্থানীয় সময় ভোরবেলার থেকে শুরু হয়েছিল ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ হামাস-র ইজরায়েল কে লক্ষ্য করে রকেট বর্ষণ আর তার সাথেই অতর্কিত আক্রমণের মধ্যে দিয়ে জায়নবাদী সন্ত্রাসীদের কবল থেকে দখল মুক্ত করা শুরু হল বিস্তীর্ণ ফিলিস্তিনি ভূমি। এত দিন ধরে পড়ে পড়ে মার খাওয়া ফিলিস্তিনি জনগণ যে ট্র্যাক্টর আর বুলডোজার চালিয়ে জায়নবাদীদের বসানো কাঁটাতারের বেড়া উপড়ে ফেলবে সেটা ঘুম থেকে উঠেই ইজরায়েলি বাহিনীর পক্ষে বোঝা কঠিন ছিল।

প্রায় ৭,০০০ সোভিয়েত জমানার রকেট, তার সাথে হামাসের স্থল বাহিনীর আক্রমণ, আর তাদের সাথে যোগ দিল ছোট ড্রোনে আর প্যারাসুট চেপে আকাশে উড়ন্ত প্রতিরোধ বাহিনীর সদস্যরা। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ শক্তির বিমান বাহিনীর অভাব পূর্ণ করলো এই ছোট ছোট ড্রোনে সওয়ার হয়ে বা প্যারা গ্লাইডিং করে হ্যান্ড গ্রেনেড নিয়ে ইজরায়েলি বাহিনীর উপর আক্রমণ করা সৈনিকেরা। সবাই প্রাণ বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাঁদের মাটি, অস্তিত্ব ও আত্মসম্মানের দখলদারী বাহিনী কে একটা বড় ধাক্কা দিতে, উৎখাত করতে।

অত এব, খেতে হল ধাক্কা। কয়েকশ ইজরায়েলি সেনা নিমেষে হত, আত্মসমর্পণ করল অসংখ্য ইজরায়েলি বাহিনী আর তাদের সাথেই আবার একজন জেনারেলকেও কলার ধরে টেনে নিয়ে গেল ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনী। অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে যে “আয়রন ডোম” নামক হাওয়াই প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইজরায়েল বানিয়েছিল, তাকে চমকে দিয়েই হাজার হাজার রকেট বৃষ্টির মতন নেমে এল দখলকৃত ভূমিপৃষ্টে, সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলো কে চূর্ণ করতে।

এহেন পূর্বপরিকল্পিত ও সুরচিত যুদ্ধ পরিকল্পনা দেখে তাক লেগে গেল আরব, আফ্রিকা আর পারস্যের মানুষের। লেবাননের হিজবুল্লাহ জানালো যে তাঁরা হামাসের সাথে আছে। ইরানের মানুষ শোষক জায়নবাদী শক্তির দুরবস্থা দেখে রাস্তায় নেমে উল্লাস করেছে। সৌদি আরবের মতন দেশ, যাঁরা কিছুদিন আগেও ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা করছিল, এই ঘটনার জন্যে তেল আবিব কেই দোষ দিয়েছে। মিশরের মানুষ ফিলিস্তিনি পতাকার আলোক সজ্জা করে প্রতিরোধ কে স্বাগত জানিয়েছে। 

মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উল্লাস দেখে, তাঁদের শোষিতের প্রতি সংহতি ও শোষকের প্রতি ঘৃণা দেখে প্রমাদ গোনে পশ্চিমারা। যারা কথায় কথায় ইউক্রেনীয় নাৎসিদের হাতে ভয়ানক মারণাস্ত্র তুলে দেয় রুশ সেনা কে হারাতে, তারাই আবার জোর গলায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনীর ঔপনিবেশিক দখলদারীর বিরুদ্ধে গড়ে তোলা লড়াই কে সন্ত্রাসবাদ বলে চিহ্নিত করে। ইজরায়েলের অত্যাচারে কত নিরীহ মানুষ গত ৭৫ বছরে প্রাণ হারিয়েছে সেই তথ্য কে চাপা দিয়ে, ইজরায়েলের উপর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনীর রকেট হানা নিয়ে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম গুলো রুদালির হাট বসায়।

ফিলিস্তিন – ইজরায়েল সংঘর্ষের খতিয়ান

প্রায় ৭৫ বছরের উপর জায়নবাদী ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজ ভূমে পরবাসী হয়েছেন ফিলিস্তিনের মানুষ। তাঁদের উপর বারবার বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে মার্কিন মদদপুষ্ট জায়নবাদী হানাদারেরা। ইজরায়েল আর ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাতের তথ্য নিচে তুলে ধরা হল।

ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে ২০০৮ থেকে ২০২৩ এর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নিহত আর আহতদের হিসাব দেখলেই বোঝা যাবে কী ভাবে ইজরায়েলি হামলায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফিলিস্তিনি জনগণের।

ফিলিস্তিনের নারী-শিশু নির্বিশেষে কী ভাবে গণহত্যা চালিয়েছে জায়নবাদী হানাদারেরা তার তথ্য নিচে দেওয়া হল।

অন্যদিকে দেখা যাক গাজা উপত্যকার অবস্থা। পশ্চিম তীর থেকে বহু দূরে অবস্থিত, দক্ষিণে মিশর, উত্তরে ইজরায়েল দখলকৃত ভূমি ও পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ঘেরা গাজা উপত্যকা কে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইজরায়েল দখল করে ফেলে। আজ অবধি সেই দখলদারির রাজত্ব চলছে।

তথ্য দেখাচ্ছে যে ২০০৭ সাল থেকেই গাজা উপত্যকার ভূমি, আকাশ আর জলপথ জায়নবাদী শক্তি অবরুদ্ধ করে দেয়। প্রায় ২২ লক্ষ মানুষের বাস এই ৩২৬ বর্গ কিমি অঞ্চলে, যাঁদের জীবন প্রায় কারাবাসের সমান হয়ে যায়। এর সাথেই শুরু হয় জায়নবাদী শক্তির যখন তখন হামলা, গণহত্যা আর ধ্বংস লীলা।

জায়নবাদী হামলায় গাজার হতাহতের খতিয়ান—২০০৮ থেকে ২০২৩ এর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত—নিচে দেওয়া হল।

বর্তমানে চলমান অপারেশন আল-আকসা বন্যার সময়ও জায়নবাদী রোষানলে পড়েছে গাজা উপত্যকা। রবিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া তথ্য দেখাচ্ছে যে গাজা উপত্যকায় জায়নবাদী হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৪৩১ জন আর আহতদের সংখ্যা প্রায় ২,২০০। 

এ ছাড়াও জায়নবাদী হানাদারেরা গাজায় বিদ্যুৎ সরবাহ বন্ধ করে দিয়েছে আর শহরের জল, নিকাশি ব্যবস্থা প্রভৃতির উপর ইজরায়েলের বিমান হানার ফলে সেই সব পরিষেবাও ব্যাহত হয়েছে।

এত অত্যাচারিত হয়েও কিন্তু পশ্চিমা শক্তির চোখে দোষী হল ফিলিস্তিনের মানুষ। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে ইজরায়েল কে সার্বিক ভাবে ও নিঃশর্তে সমর্থন করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়না বিশ্বের মানবাধিকারের তথাকথিত ঠিকাদারদের।

তবে এইবার, অপারেশন আল-আকসা বন্যা চালিয়ে শনিবার ও রবিবারে ইজরায়েলের উপর মোক্ষম হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনী। নিচের চিত্রে, রবিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে এইবার খেলা ফিলিস্তিনের পক্ষে ঘুরেছে।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনীর অপারেশন আল – আকসা বন্যা

শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই সামরিক অভিযান কিন্তু কোনো স্বতঃস্ফূর্ত জঙ্গী হামলা নয়, বরং খুবই নিখুঁত ভাবে পরিকল্পিত একটি রণনীতির প্রতিফলন। বিশ্বের ও মধ্য প্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা কে ভিত্তি করেই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যে অপারেশন আল-আকসা বন্যার ছক সাজিয়েছে তার প্রমাণ হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ জানে যে বর্তমানে ইউক্রেন কে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজের দাবার ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার করে যে ছায়াযুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা সহযোগীরা চালাচ্ছে, তার ফলে তাদের অর্থনীতি এমনিই গভীর সঙ্কটে। এর মধ্যে বারবার নানা কায়দায় ইউক্রেনীয় নাৎসি সরকার প্রধান ভ্লাদিমির জেলেনস্কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের থেকে আর্থিক অনুদানের নামে মোটা অঙ্কের টাকা ঝেঁপে দিচ্ছে। এর সাথে সাথেই ইউক্রেন কে কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র সাহায্য করতে হচ্ছে পশ্চিমাদের।

ফলে পশ্চিমাদের ভাঁড়ের মা ভবানী দশা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কে বেশি বেশি করে ডলার ছেপে নিজের কাজকর্মের খরচ মেটাতে হচ্ছে আর এর ফলে মার্কিন অর্থনীতি এক গভীর খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে ইজরায়েলের সমর্থনে যদি মার্কিন সরকার তার বাহিনী মোতায়েন করে ও কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার দান করে, তাহলে সেই আর্থিক সঙ্কট ত্বরান্বিত হবে। তার উপরে যদি কোনো ভাবেই ইজরায়েলের মদদ করতে মার্কিন বাহিনী ফিলিস্তিনে পা রাখে তাহলে গোটা মধ্য প্রাচ্যে সেই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আগুন জ্বলে উঠবে, এবং রুশ আর চীন এই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর তার পশ্চিমা মিত্রদের কূটনৈতিক ভাবে অপদস্থ করবে।

অপারেশন আল-আকসা বন্যা কে সমর্থনে একজোট ফিলিস্তিনের সব পক্ষ 

ইতিমধ্যে ইরান-সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীও এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। হুমকি দিয়েছে অন্যান্য প্রতিরোধ সংস্থা। অভিযোগ উঠছে যে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী হামাসের রণনীতি ও রণকৌশল ঠিক করে দিচ্ছে। যেহেতু এই বাহিনীগুলো সিরিয়ার পশ্চিমা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জিতেছে তাই তাদের মনোবল চাঙ্গা, যদিও অনেক দামি যুদ্ধ সরঞ্জামে আগাগোড়া মোড়া ইজরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, বরং সাধারণ নিরস্ত্র নাগরিকদের উপর আক্রমণেরই একমাত্র অভিজ্ঞতা আছে তাদের। ফলে এবার সুযোগ পেয়ে হামাসের সমর্থনে লেবানন থেকে রকেট নিক্ষেপ করেছে হিজবুল্লাহ।

ইরাকের ইরান-সমর্থিত কাতা’ইব সাঈদ আল-শুহাদা ব্রিগেড এক বিবৃতিতে বলেই দিয়েছে যে যদি মার্কিন সামরিক বাহিনী এই সংঘর্ষে কোথাও সরাসরি যুক্ত হয় তাহলে সমগ্র মধ্য প্রাচ্যের সমস্ত মার্কিন বাহিনী, ঘাঁটি ও মার্কিন-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল প্রতিরোধ অক্ষের ন্যায়সঙ্গত আক্রমণের নিশানা হবে। 

রামাল্লাহতে ফিলিস্তিন মুক্তি সংগঠন বা প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এর নেতা ও ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস অপারেশন আল-আকসা বন্যা কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে ফিলিস্তিনের জনগণের নিজেদের রক্ষার অধিকার আছে বিশেষ করে আল-আকসা মসজিদে ইজরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আর দখলকৃত ভূমিতে জায়নবাদী শক্তির নিপীড়নের বিরুদ্ধে। 

অন্যদিকে বামপন্থী পপুলার ফ্রন্ট ফর লিবারেশন অফ প্যালেস্তাইন (পিএফএলএফ) এক বিবৃতিতে অপারেশন আল-আকসা বন্যা কে স্বাগত জানিয়েছে, আর ফিলিস্তিন প্রতিরোধ সংগ্রামে সকল ফিলিস্তিনি জনগণ কে যোগ দেওয়ার, শত্রু কে মোক্ষম আঘাত করার ও তার রসদ সরবাহ কে ধ্বংস করার ডাক দিয়েছে।

সার্বিক ভাবে ফিলিস্তিনের সকল ধরনের সংগঠন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া সশস্ত্র অভ্যুত্থান কে স্বাগত জানিয়েছে। আর এই ঘটনায় ইরানের তরফ থেকে যে ভাবে গোটা ফিলিস্তিন প্রতিরোধ সংগ্রাম কে সহায়তা করা হচ্ছে ও চালনা করা হচ্ছে, তার ফলে চাপে পড়েছে সৌদি আরব।

মার্কিন মিত্রদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া

দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন স্বার্থে সৌদি আরব ইরানের সাথে আঞ্চলিক বৈরিতা রাখলেও এই বছরেই চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয় আর বরফ গলাও শুরু হয়। তবুও দুই পক্ষের — শিয়া প্রজাতান্ত্রিক ইরান আর ওয়াহাবী আল-সাউদ রাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর—মধ্যে একটা চোরা দ্বন্দ্ব রয়েই গেছে, যা ব্যবহার করে মার্কিনীরা সৌদি আরব কে ইজরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চাপ দিচ্ছিল। সৌদি আরব আর ইজরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কূটনৈতিক প্রয়াসও চলছিল বেশ কিছু বছর ধরে।

এবার অপারেশন আল-আকসা বন্যার আগের থেকেই সৌদি আরব মার্কিন মিত্রতা ত্যাগ না করেই রাশিয়া ও চীনের সাথে বহুপাক্ষিক স্তরে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। কিন্তু এই অপারেশন শুরুর পরে যে ভাবে আরব ও পারস্যের জনমত ফিলিস্তিন প্রতিরোধ বাহিনীর পক্ষে গেছে তার ফলে সৌদি আরবের পক্ষে আর ইজরায়েলের সাথে কূটনৈতিক স্তরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রয়াস করা হবে মস্ত বড় ভুল। তাই তেল আবিব আর জায়নবাদী যুদ্ধবাজদের পান্ডা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু কে বড় রকমের চমক দিয়ে সৌদি আরব এই ঘটনাবলীর জন্যে চলমান জায়নবাদী শোষণ আর নিপীড়ন কে দায়ী করে এই যুদ্ধ কে জনগণের বিক্ষোভের অংশ বলে চিহ্নিত করেছে।

মধ্য প্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন মিত্র সৌদি আরবের এই রকম ভাবে জায়নবাদী শক্তির বিরুদ্ধে —জায়নবাদ আর ওয়াহাবীবাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য প্রাচ্যে একাধিপত্য ধরে রাখার দুই অস্ত্র বলে অভিযোগ করা হত—রুখে দাঁড়ানো ও ফিলিস্তিন প্রতিরোধ কে সমর্থন করার ঘটনা পশ্চিমা বিশ্ব কে জোর ধাক্কাই দিয়েছে। 

সংযুক্ত আমিরশাহীর সাথে জায়নবাদী ইজরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ২০২০ সালে। এবারের প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় সংযুক্ত আমিরশাহীও ইজরায়েলের পক্ষ না নিয়ে মধ্য পন্থা নিয়েছে, যার পিছনে চীন আর রুশের প্রভাব আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ফলে মধ্য প্রাচ্যের সব চেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের দাবার চালে একেবারেই মিত্রহীন হয়ে ইজরায়েল তাকিয়ে আছে পশ্চিমা বিশ্বের দিকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্য ইজরায়েলের পক্ষ নিয়েছে, ফ্রান্স ও ইউরোপের অন্যান্য সাদা মানুষের দেশও ইজরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। কিন্তু পক্ষ নেয়নি বিশ্বের বিকল্প শক্তিকেন্দ্র হিসাবে উঠে আসা চীন ও রুশ। পক্ষ নেয়নি উদীয়মান বহুমেরুর বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ।

শান্তি আর স্বাধীন ফিলিস্তিন চায় রুশ ও চীন

বেজিং আর মস্কোর সাথে তেল আবিবের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও দুই পক্ষই ১৯৯৩ সালের ওসলো চুক্তি অনুসারে শান্তিপূর্ণ ভাবে দুই রাষ্ট্র গঠনের মধ্যে দিয়ে সমস্যার সমাধান চাইছে। রুশ রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ জানিয়েছেন যে মস্কো ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে তৃতীয় বহিরাগত শক্তির—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নাম না করে আঙ্গুল তুলে—অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছে, আর এমন হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।

আরব লীগের সাধারণ সম্পাদক আহমদ আবুল ঘেইট রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে আলোচনায় জানান যে আরব লীগ দুই তরফের হিংসার বিরোধিতা করে। তবে ল্যাভরভ জানান যে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন ছাড়া এই সমস্যার কোনো সমাধান নেই। ইজরায়েলি হামলা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিচারিতার বিরোধিতা করেন তিনি।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে হিংসা বন্ধের ও অস্ত্র বিরতির আবেদন করা হয়েছে। বেজিং ইজরায়েলের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রাখলেও ইজরায়েলি আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছে এবং সাধারণ মানুষের হত্যার নিন্দা করেছে।

কী হবে ফিলিস্তিনে?

শনিবার, অপারেশন আল-আকসা বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকেই কিন্তু হামাস জানিয়েছিল যে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ দীর্ঘস্থায়ী ইজরায়েলি আগ্রাসনের জন্যে প্রস্তুত এবং তাঁরা চান যেন ইজরায়েল গাজা উপত্যকায় স্থল বাহিনী নামিয়ে আক্রমণ শুরু করে। এই বারের লড়াই কে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ শুধুই প্রতিক্রিয়া হিসাবে, জবাবি হামলা হিসাবে দেখাতে চাইছে না বরং একটি রণনৈতিক আক্রমণ হিসাবে দেখাতে চাইছে। 

ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা দেখাচ্ছে যে ইজরায়েলের পক্ষে কোনো আঞ্চলিক শক্তি আর সক্রিয় ভাবে দাঁড়াবে না। উদীয়মান চীন আর রুশ তাকে সমর্থন করবে না। ভারতের মতন দেশের সমর্থনে ইজরায়েলের কোনো বস্তুগত লাভ নেই, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি একবার সরাসরি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সাথে লড়াইয়ে জড়িয়ে যায় তাহলে ওয়াশিংটন ডিসির জন্যে সেটা শুধু নিজের পায়ে কুড়াল মারা হবে না বরং কুড়াল খুঁজে তাতে গিয়ে পা মারা হবে।

দীর্ঘদিন ধরে ইজরায়েল কে যুদ্ধের মধ্যে  ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যদি আটকে রাখতে পারে তাহলে ফিলিস্তিনের ক্ষতি নেই, কারণ গাজা উপত্যকার মানুষ কষ্টসাধ্য জীবন যাপনে অভ্যস্ত, কিন্তু ইজরায়েলের অর্থনীতির পক্ষে সেটা সুখদায়ক ব্যাপার হবে না কারণ সঙ্কটে দীর্ণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশিদিন তার জামিন দিতে পারবে না। ফলে অচিরেই ফিলিস্তিনিদের সাথে ইজরায়েল কে আলোচনায় বসতে হবে ও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ওসলো প্রস্তাব মেনে সেই ভাবে কাজ করতে হবে।

ইজরায়েল কে যদি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে আলোচনায় বসতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাধ্য করে তাহলে তেল আবিবের তথাকথিত সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের মিথ যেমন ভাঙবে তেমনি উগ্র দক্ষিণপন্থী জায়নবাদী নেতানিয়াহু কে গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়তে হবে। কারণ নেতানিয়াহু নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও ভোটে জেতেন শুধু ফিলিস্তিনি গণহত্যার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। এবারের প্রতিরোধ সংগ্রামের ফলে ফিলিস্তিনিদের কাছে অনেক কিছু বদলাবার আর নতুন ইতিহাস রচনার অনেক সুযোগ রয়েছে। 

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla