Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
এনআরসি রিজেকশন স্লিপ দিয়ে আসামে বিজেপি ঝোলা থেকে বেড়াল বার করলো | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

ঝোলার থেকে বেড়াল বেরিয়ে গেছে। আসাম বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম পর্ব মেটার পরেই কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রক আসাম সরকার কে হুকুম দেয় যে ১৯,০৬,৬৫৭ মানুষের নাম আসাম জাতীয় নাগরিক পঞ্জীতে (এনআরসি) থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁদের যেন রিজেকশন স্লিপ বা খারিজ পত্র দেওয়া হয়। এই এনআরসি রিজেকশন স্লিপ পাওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে প্রাপকদের তাঁদের নিকটবর্তী ফরেনার্স ট্রাইবুনালে গিয়ে নাম বাদ যাওয়ার ব্যাপারে আবেদন করতে হবে সব নথিপত্র দিয়ে। ফরেনার্স ট্রাইবুনাল যদি একজনের দাবি কে স্বীকৃতি দেয় তাহলে তিনি নাগরিকত্ব ফিরে পাবেন আর যদি খারিজ করে দেয় তাহলে তাঁর নাম যেমন ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে, তেমনি তিনি “বিদেশী” হিসাবে গণ্য হবেন ও তাঁর ঠাঁই হবে ভারতীয় জনতা পার্টি-র (বিজেপি) সরকারের বানানো ডিটেনশন কেন্দ্রগুলিতে।  

আসাম এনআরসি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছিল ১,৬০০ কোটি টাকা খরচ করে পাঁচ বছর ধরে চলা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পরে। ৩১শে আগস্ট ২০১৯ এ আসামের পূর্ণ এনআরসি তালিকা প্রকাশ করে। দেখা যায় মোট ৩৩,০২৭,৬৬১ জন (তিন কোটি তিরিশ লক্ষ সাতাশ হাজার ছয়শো একষট্টি) আবেদনকারীর মধ্যে ৩১,১২১,০০৪ জন (তিন কোটি এগারো লক্ষ একুশ হাজার চার) নাগরিক হিসাবে গণ্য হন আর ১,৯০৬,৬৫৭ জন (উনিশ লক্ষ ছয় হাজার ছয়শো সাতান্ন) বাদ যান। এই আসাম এনআরসি থেকে বাদ যাওয়া মানুষদের জীবনে ঘনিয়ে আসে এক দুর্যোগের আঁধার। রাতারাতি তাঁরা বেনাগরিক হয়ে গেলেও সরকারি ভাবে সেই কথা ঘোষণা করা হয় না। তাঁদের নামও নির্বাচন কমিশন গত দুই বছরে নির্বাচনী তালিকা থেকে কাটেনি। এর কারণ ছিল বিজেপি-র নিষেধ। এই বাদ চলে যাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে যে সকল অমুসলিমরা রয়েছেন তাঁদের ভোট যেন বিজেপি  পায় তার ব্যবস্থা করতে।  

তাই যে মুহূর্তে ভোট পর্ব সমাপ্ত হওয়া শুরু হল তেমনি বিজেপি-র কাছে এদের প্রয়োজন ফুরালো। ফলে এইবার হাতে এনআরসি রিজেকশন স্লিপ ধরানো শুরু হল। এর ফলে এই ১৯,০৬,৬৫৭ মানুষের জীবনে নেমে আসলো ঘন অন্ধকার। অনেকেরই মনে হতে পারে যে এই লোকগুলো কেউই ভারতীয় নাগরিক নন তাই এদের হাতে এনআরসি রিজেকশন স্লিপ ধরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বাঁধা নেই। যদিও সরকার তা স্বীকার করেনি, তবুও যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নেওয়া যায় যে এদের কেউই ভারতের নাগরিক নয় তাহলে তাঁরা এনআরসিতে আবেদন করতেন না। কারণ আসামের এনআরসিতে আবেদন করার জন্যে তাঁদের কাগজ দেখাতে হয়েছে, আর সেই কাগজ তাঁরা কষ্ট করে খুঁজে বের করেছিলেন। তবুও তাঁদের নাম যেহেতু কাটা গেছে তাই এইটা স্পষ্ট যে ভারতীয় নাগরিকদের, সমস্ত তথ্য থাকা সত্ত্বেও নাম কাটা যেতে পারে, যা ভারতের মানুষের কাছে ভীষণ ভয়ানক একটি খবর।  

সমস্ত কাগজ না থাকলে কোন মানুষ কী ভরসায় এনআরসি-তে নাম তুলে নিজেকে বিদেশী প্রমাণ করতে যাবেন? যাঁরা আবেদন করেছিলেন তাঁরা এই জন্যেই করেছিলেন যে তাঁদের কাছে যে দলিল ছিল তা তাঁদের অধিকাংশ মানুষই সঠিক বলে জানতেন, তা না হলে ভয়েই তাঁদের অধিকাংশ মানুষ আবেদন করতেন না। আর কাগজ না থাকলে কী করে একই পরিবারের একজনের নাম এনআরসি-তে আসে আর আর এক জনের নাম কাটা যায়? কিন্তু সেটাই হয়েছে। আর বিজেপি যে এর নৈপথ্যে তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ যদিও এনআরসি ফর্মে ধর্ম উল্লেখের কোন স্থান না থাকলেও, খুব কায়দা করে ছড়ানো হয়েছে যে বাদ যাওয়া মানুষদের অধিকাংশই নাকি বাঙালি হিন্দু আর তাই তাঁদের রক্ষা করতে বিজেপি নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, ২০১৯ (সিএএ ২০১৯) এনেছে। তারপরে যখন নির্বাচন অবধি তাঁদের ব্যবহার করার জন্যেই এনআরসি রিজেকশন স্লিপ দেওয়া হয়নি, তখন অনেক বাঙালি হিন্দুর মনে হয়েছিল যে হয়তো সিএএ ২০১৯ তাঁদের এনআরসি জট  থেকে বাঁচাবে।  

অথচ তাঁদের জানা ছিল না যে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর বিজেপি-র বিছানো ফাঁদে পড়ছেন। তাঁদের এনআরসি রিজেকশন স্লিপ দেওয়া হয়নি কারণ বিজেপি তাঁদের ভয় আর উদ্বেগের সুযোগ নিয়ে তাঁদের সামনে সিএএ ২০১৯ কে খুড়োর কলের মতন ঝুলিয়ে তাঁদের ব্যবহার করতে চেয়েছে নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্যে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসেই কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রকের প্রতিনিধি তৎকালীন নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৬ (সিএবি ২০১৬) কে কেন্দ্র করে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি কে জানায় যে এই আইনে ৩৩,৩১৩ জন ছাড়া আর কারুর নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নেই। সিএবি ২০১৬ (যা পরবর্তীতে কিছু সংশোধনী, যেমন এটা উত্তরপূর্বের ষষ্ঠ তফসিলি অঞ্চলে প্রয়োগ হবে না, সহ সিএএ ২০১৯ এর রূপ নেয়) শুধু তাঁদের নাগরিকত্ব এর জন্যে আবেদন করতে দেবে যাঁরা ২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারির আগে ভারতে এসে আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে উদ্বাস্তু হওয়া মানুষ বলে দাবি করে সেই রূপ প্রমাণ, যেমন খবরের কাগজের কাটিং, ইত্যাদি, দেখিয়ে ফরেনার্স রিজিওন্যাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে (এফআরআরও) নিজেদের নথিভুক্ত করেছেন ও সেই দাবি ভারতের গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ এন্ড এনালিটিক্যাল উইং (‘র’) খতিয়ে দেখে সঠিক বলে গণ্য করেছে। এই খতিয়ে দেখাই যথেষ্ট নয়; ভারতে এসে বসবাস করার সময়কালের তাঁদের পুলিশ রেকর্ডও দেখা হবে। এত কিছুর পরে একজন নাগরিকত্ব পেতে পারেন।  

কয়েক কোটি মানুষের উদ্বাস্তু হওয়ার দাবি কী করে ‘র’ অনুসন্ধান করবে? দেশের গুপ্তচর সংস্থার সমস্ত বাজেট লাগিয়ে দিলেও এই কাজ সম্পূর্ণ হতে পারে না। তার উপর ভারতে প্রবেশ করে এফআরআরও-তে নাম নথিভুক্ত বিশেষ করে করিয়েছেন আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুরা। বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হতদরিদ্র মানুষেরা মাঠ, নদী, বিল আর কাঁটাতার পেরিয়ে এসেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই দীর্ঘ সাত দশকে তাঁদের কেউই এফআরআরও যাওয়া দূরের কথা, বস্তুটা খায় না মাথায় দেয় তাও জানেন না। ফলে তাঁরা কেউই সিএএ ২০১৯ এ ছাড় পাওয়ার প্রাথমিক শর্ত—২০১৫ ও ২০১৬ তে যাঁরা বিদেশী নিয়মাবলী, ১৯৪৮ ও পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) নিয়মাবলী, ১৯৫০ এর সংশোধনগুলিতে ছাড় পান—পূর্ণ করেননি। তাই বিজেপির অটল বিহারি বাজপেয়ির আনা আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ঐক্যবদ্ধ প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) সরকারের দ্বারা বিধিবদ্ধ করা সিএএ ২০০৩ অনুসারে “বেআইনি অভিবাসি” হিসাবে চিহ্নিত হবেন ও তাঁদের ঠাঁই হবে হয় ডিটেনশন কেন্দ্র আর না হলে নাগরিকত্ব অধিকারহীন হয়ে বাইরে জীবন চালাতে হবে।  

কিন্তু একটুকু বাঁচার আশায় আসামের হতদরিদ্র মানুষ বারবার বিজেপির ফাঁদে পড়ছেন। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান—অধুনা বাংলাদেশ—থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা মানুষেরা ব্যাপক সঙ্কটে পড়েছেন। আজ নির্বাচনের এক একটি পর্ব শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তাঁদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে এনআরসি রিজেকশন স্লিপ।তাঁদের এবার সময় শুরু হচ্ছে বিদেশী তকমা পেয়ে ডিটেনশন কেন্দ্রে বন্দী হওয়ার। তবে এই ব্যাপারে চোখ বুজে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে বাস করা কোটি কোটি উদ্বাস্তু অমুসলিম জনগণ। তাঁদের, বিশেষ করে মতুয়া আর নমঃশুদ্র সম্প্রদায় কে বিজেপি বোঝাচ্ছে যে কেন তাঁদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সেই সিএএ ২০১৯ এর টোপ ঝুলিয়ে তাঁদের ভোট হাতিয়ে নিয়ে বেনাগরিক করার ফন্দি কাটছে বিজেপি। এর মধ্যে বিপরীত দিকে জনগণের মধ্যে অনেকেই বিজেপির মুখোশ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করলেও উদ্বাস্তুদের মধ্যে বিজেপির প্রভাব ম্লান হয়ে যায়নি। ফলে আসামের এনআরসি রিজেকশন স্লিপ চলে যাওয়ার সাথে সাথে এই ভয়টা আবার জেগে উঠছে যে এবার কি তাহলে পশ্চিমবঙ্গের নমো আর মতুয়াদের, রাভা আর রাজবংশীদের, মাহিষ্য আর সাঁওতালদের তাঁদের মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হবে? তাঁরা কি জেগে উঠে বিজেপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরিত হবেন? নিঃশর্ত নাগরিকত্বের জন্যে লড়বেন না বিজেপির পাতা ফাঁদে পড়ে যাবেন? বোঝা যাবে আর কিছু দিনেই।  

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla