Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wp-hide-security-enhancer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা থেকে এলজি পলিমার্স স্টাইরিন লিক - শুধুই কি দুর্ঘটনা না সমস্যা লুকিয়ে আরো গভীরে? | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

গত ৭ মে’র ভাইজ্যাগের আর ভেঙ্কটাপুরামে এলজি পলিমার্স এর প্রোডাকশন ইউনিট থেকে স্টাইরিন গ্যাস লিক ও সেই বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাস নেওয়ার দরুন একের পর এক জলজ্যান্ত মানুষের মাটিতে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য, মনে করিয়ে দেয় ১৯৮৪ এর ২-৩ ডিসেম্বরের ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ভয়াবহতার কথা। সময় বদলেছে, শাসকেরও পরিবর্তন হয়েছে, অনেক আন্দোলন ও লড়াইয়ের পরেও আর অনেক তদন্ত হওয়ার পরেও ভোপালের বিষাক্ত গ্যাস লিকের ঘটনার মূল অপরাধীরা অধরাই থেকে গেল। এর মধ্যে হল এই ঘটনা দুটো। এই ঘটনা দুটোকে কেন্দ্র করে একটি তুলনামূলক অনুসন্ধান করলেই বোঝা যাবে যে প্রায় একই সুত্রে বাঁধা দুটি দুর্ঘটনা ।

ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায়, মধ্যপ্রদেশের জনবহুল রাজধানী ভোপালে (১৯৮৪ এর জনসংখ্যা ৮,০০,০০০) অবস্থিত ইউনিয়ন কার্বাইড অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইউসিআইএল) কোম্পানি’র প্লান্ট থেকে লিক হয় বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস। এই গ্যাস লিকে আক্রান্ত হয় প্রায় ২,০০,০০০ মানুষ এবং ভারত সরকার এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৩,০০০ জানালেও, একাধিক বেসরকারি সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায় যে এই বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাস নেওয়ার কারণে মারা যায় প্রায় ২০,০০০ মানুষ । বিশাল সংখ্যক মানুষের আক্রান্ত হওয়ার কারণ হল এই যে ইউসিআইএল প্লান্টটি অবস্থিত ছিল ঘন জনবসতি এলাকায়।

ভোপাল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ২৫শে আগস্ট ১৯৭৫ সালে একটি খসড়া তৈরী করে প্লান্টটি কে জনবসতি থেকে ২৫ কিমি দূরে করার পরামর্শ দিলেও ভ্রুক্ষেপ করা হয়নি তাতে । এলজি পলিমার্স এর প্রোডাকশন ইউনিটও ঠিক একই ভাবে বিশাখাপত্তনমের (বর্তমান জনসংখ্যা ৪২৮৮,১১৩ ) মত জনবহুল এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানেও স্টাইরিন লিক করে ছড়িয়ে পরে ৩ কিমি রেডিয়াসে। ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ ও আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষ। সরকারের তরফ থেকেই জানানো হয়েছে যে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়েছে পাঁচটি গ্ৰামেও।

ভোপাল দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা গিয়েছিল প্লান্টের রেফ্রিজারেশন ইউনিটে, যা ঠিকঠাক চলছিল না বেশ কিছু মাস ধরেই । ১৯৮২’র মে মাসে, ইউসিসি’র ( ইউসিআইএল এর ৫০.৯% শেয়ার হোল্ডার ছিল আমেরিকার এই কোম্পানি) থেকে পাঠানো দুজন আমেরিকান এক্সপার্ট এই গোলোযোগের কথা জানালেও পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এলজি পলিমার্স এর ক্ষেত্রেও এরকম জানা যাচ্ছে যে দুটো ট্যাঙ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা রেফ্রিজারেটিং ইউনিটে লকডাউনের আগেই গোলোযোগ দেখা গেলেও, তা সারানো হয়নি যথাসময়ে।

ভোপালের ইউসিআইএল প্লান্টের রক্ষণাবেক্ষণ ছিল ত্রুটি পূর্ণ। অপারেটর হিসেবে ডিগ্ৰিধারী ইঞ্জিনিয়ারদের ছয় মাস ট্রেনিং দিয়ে নিয়োগ করার বদলে রাখা হত হাই স্কুল পাশদের। নিয়মমাফিক প্রতি শিফ্টে ১২ জন অপারেটর, তিন জন সুপারভাইজার রাখার বদলে থাকত ছয় জন অপারেটর এবং একজন সুপারভাইজার। এলজি পলিমার্স ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে লকডাউন চলাকালীন ১৫ জন ইঞ্জিনিয়ার, কর্মচারীর মেন্টেনেন্সের দিকে নজর রাখার কথা ছিল, কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যে যদি তারা থেকেই থাকে তাহলে এই দুর্ঘটনা হল কিভাবে? ফ্যাকটরিজ অ্যাক্ট, ১৯৪৮, এর সেকশন ৪১ জি তে যে কোনো কারখানায় ম্যানেজমেন্ট কর্মী এবং শ্রমিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে, যে কমিটির দায়িত্ব হবে সেই কারখানাটি’র সমস্ত রকম রক্ষণাবেক্ষণ দেখাশুনার, কিন্তু তারা কি এই নির্দেশ মেনেছিল?

“থ্রি ইডিয়টস” সিনেমার প্রধান চরিত্র ‘রাঞ্চোর’ গ্ৰামে অন্ধ চৌকিদারের “আল ইজ ওয়েল” বলে চেঁচিয়ে গ্ৰামবাসীদের নিশ্চিন্তে ঘুম পাড়ানোর গল্প তো আমরা সবাই জানি, কিন্তু গল্প হলেও বাস্তব জগতে তা যে নিছকই গল্পকথা নয়। জনবহুল এলাকায় বিপজ্জনক রাসায়নিক কারখানা, তার রক্ষণাবেক্ষণে ইচ্ছাকৃত অবহেলা, বায়ু দূষণ প্রতিরোধে সঠিক নিয়ম না মানা, বর্জ্য পদার্থ আসেপাশের জলাজমিতে ফেলে জলদূষণ, সবই দেখতে পায় দেশি-বিদেশি বৃহৎ কর্পোরেটদের সেবাদাস রাষ্ট্র, কিন্তু তাদের মালিকের স্বার্থে ঘা লাগার ভয়েই, অন্ধ চৌকিদারের মতন “আল ইজ ওয়েল” বলে সাধারণ মানুষকে ঘুম পারিয়ে রাখে তারা।

ভোপাল থেকে বিশাখাপত্তনম, রায়গড় থেকে তামিলনাডু, দেশের একাধিক প্রান্তে একাধিকবার ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কে কেবলই দুর্ঘটনা আখ্যা দিয়ে, পরের বার নজর রাখা হবে বলে একটা নামকেওয়াস্তে তদন্ত কমিটি বানিয়ে এবং মৃতদের ও আক্রান্তদের অনুদান হিসেবে একটা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েই খালাস হয়ে যায় তারা; এই সকল কর্মকান্ড আসলে মূল সমস্যার থেকে মানুষের চোখ ঘোরানোর এক প্রয়াস।

সামাজিক উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি মুনাফা কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মালিক চায় তার উৎপাদন খরচ কমিয়ে যেনতেন প্রকারে মুনাফা বাড়াতে, তাই জেনেশুনেই ইচ্ছাকৃতভাবেই জনবহুল এলাকা বা শহরে তারা প্লান্ট গড়ে তোলে যাতে সহজেই সস্তার শ্রমিকের যোগান পাওয়া যায়। এছাড়াও জনবহুল এলাকায় প্লান্ট গড়লে কাঁচামাল আনা এবং উৎপাদিত পণ্য নিয়ে যাওয়া, ইত্যাদি, পরিবহনের জন্য বাড়তি খরচও অনেকটা কমে যায়।

অদক্ষ শ্রমিক, প্রয়োজনের থেকে কম শ্রমিক রেখে বেশি কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা, ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্র এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ যথাসম্ভব কম রেখেই উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া, সেটারই চেষ্টা করে মালিক শ্রেণী এবং তাতে যে বারবার ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায় আরো সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করে না তারা। এই সব চলতেই থাকে আমাদের চারপাশে, আমরা হয়তো জানিও, কিন্তু ভ্রুক্ষেপ করি না।

প্রসঙ্গত বালাসৌরি নামক এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন যে এলজি পলিমার্স থেকে আগেও বেশ কয়েকবার লিক হয়েছে স্টাইরিন, কিন্তু প্রশাসন চৌকিদারের মতন “আল ইজ ওয়েল” বলে দেওয়ায় খানিকটা চোখ ফেরাতে বাধ্যই হয় মানুষ, নচেৎ প্রতিবাদ করলে, তুতিকোড়িন, বস্তার , নিয়মগিরিতে মাইনিং কর্পোরেটদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা সাধারণ মানুষের মতন তাদের উপরেও নেমে আসবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটা দুর্ঘটনাগুলো নিছকই দুর্ঘটনা নয় বরং মুনাফা-কেন্দ্রিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় কম খরচে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার জন্যই রক্ষণাবেক্ষণের ইচ্ছাকৃত অবহেলার ফল এবং তার মাশুল গুনতে হয় বারবার সাধারণ মানুষকেই।

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla