Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wp-hide-security-enhancer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the schema-and-structured-data-for-wp domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
উদ্বাস্তু আর শরণার্থী কী এক? শব্দ বিভ্রাটের জেরে সিএএ ২০১৯ | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

সাধারণত উদ্বাস্তু, রিফিউজি/ শরণার্থী, অভিবাসী, অনুপ্রবেশকারী শব্দগুলোকে সমার্থক ভাবে ব্যবহার করা করা। যদিও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে, সমাজ বিদ্যায় বা সরকারি কাজে  এই শব্দগুলোর আলাদা আলাদা অর্থ হয়। এই শব্দ নিয়ে বিভ্রান্তি অনেক সময় সমস্যার সঠিক বিশ্লেষণ এবং সঠিক দাবি নির্ধারনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, ২০১৯, বা সিএএ ২০১৯ নিয়ে শাসক ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যে বিভ্রান্তি ছড়াতে পেরেছে এবং বিরোধীরা যে সেই ফাঁদে পা দিয়েছে তার অন্যতম একটি কারণ হল শব্দ নিয়ে বিভ্রান্তি। আমরা অতি সংক্ষেপে এই শব্দগুলোর অর্থ, এই শব্দগুলোর মধ্যে আন্তসম্পর্ক এবং সিএএ ২০১৯ নিয়ে কী ভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে সেই নিয়ে আলোচনা করব।

উদ্বাস্তু

উদ্বাস্তু শব্দের অর্থ বাস্তুচ্যুত । বিভিন্ন কারণে, যেমন রাজনৈতিক হিংসা, ধর্মীয় হিংসা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কারখানা স্থাপনের নামে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ,  বস্তি উচ্ছেদ, ইত্যাদী, বিভিন্ন  কারণে মানুষ উদ্বাস্তু হতে পারে। এই উদ্বাস্তুরা যদি বাস্তু হারিয়ে নিজের দেশের ভিতরেই থাকেন তবে তাঁরা  শরণার্থী বা রিফিউজি নন। তাঁরা তখন  নিজের দেশেই আছেন, তাই সরকারের কাছে নিজের দেশে থাকারঅনুমতি চাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। এদের বলা হয় ইন্টারনালি ডিসপ্লেসড পার্সন (আইডিপি)। গুজরাট দাঙ্গা, মুজাফফরনগরের দাঙ্গার কারণে যে সমস্ত মুসলিমরা ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকতে বাধ্য হয়েছেন, খনি স্থাপনের জন্য বা নকশাল দমন কর্মসূচীর কারণে ছত্তিসগড়, ঝাড়খন্ডের যে আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে তারা সবাই উদ্বাস্তু। ইন্টারনাল ডিস্প্লেস্মেন্ট মনিটরিং সেন্টারের হিসেব অনুযায়ী ২০১৯ এর শেষের দিকে গোটা দুনিয়াতে ৫.০৮ কোটি  মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন।  রাষ্ট্রসংঘের  রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে ৫০ লক্ষ  মানুষ ২০১৯ সালেই শুধু উদ্বাস্তু হয়েছেন।

অভিবাসী বা মাইগ্রেন্ট  

দেশের ভিতর এক জেলা থেকে অন্য জেলায়, এক রাজ্য থেকে  অন্য রাজ্যে, বা এক দেশ থেকে অন্য দেশে যারা স্থানান্তরিত হন তাঁদের বলা হয় অভিবাসী বা মাইগ্রেন্ট। বাস্তু হারিয়েও মানুষ অভিবাসী হয়, আবার বাস্তু না হারিয়েও  উপার্জনের জন্য, একটু ভালো থাকার জন্য মানুষ স্বেচ্ছায়  অভিবাসী হতে পারেন। এক দেশের ভেতর অভিবাসন ঘটলে সাধারণত তা বৈধই হয়। কিন্তু অন্যদেশে অভিবাসন হলে সেটা অবৈধ এবং বৈধ দুই প্রকার হতে পারে। অন্যদেশের নিয়ম কানুন মেনে যে অভিবাসন হয় সেটা বৈধ অভিবাসন আর আইন না-মেনে অভিবাসন হলে  সেটা অবৈধ অভিবাসন হিসাবে গণ্য হয়। বিভিন্ন কারণে মানুষ যদি অভিবাসনে বাধ্য হয় তবে এটাকে বলা হয় “পুশ  এফেক্ট”। আর উন্নত জীবন বা কোনো কিছুর টানে মানুষ যখন স্বেচ্ছায় অভিবাসনে যায় তাকে বলে “পুল এফেক্ট”।

শরণার্থী বা রিফিউজি 

যখন কেউ নিজের দেশে সরাসরি হিংসার শিকার হয়ে বা নিপিড়ীত হওয়ার আশংকায় অন্য দেশের আশ্রয় প্রার্থী হন তখন তিনি শরণার্থী  বা রিফিউজি হিসাবে গণ্য হন। অর্থাৎ শরণার্থীর অভিবাসনের পিছনে পুল এফেক্ট নয় বরং পুশ এফেক্ট কাজ করে। শরণার্থী কে আশ্রয় চাইতে হয়। রাষ্ট্রসঙ্ঘ  বলছে যারা কাজের সন্ধানে বা অর্থনৈতিক কারণে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যান, আর যারা অত্যাচারের কারণে, প্রাণের দায়ে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন, তাঁদের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। আশ্রয়দাতা দেশ কখনই কোন শরণার্থী কে  জোর করে নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে পারবে না। 

শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের নাগরিকত্ব চাইতেও পারেন, আবার নাও চাইতে পারেন। আশ্রয়দাতা দেশ তার নীতি অনুযায়ী নাগরিকত্ব মঞ্জুর করতে পারে, আবার নাও পারে।  সমস্যা মিটলে শরণার্থীরা  নিজের দেশে ফিরে যেতে পারেন বা সমস্যা না মিটলে এক আশ্রয়দাতা দেশ থেকে চলে গিয়ে অন্য দেশের কাছেও আশ্রয় প্রার্থী হতে পারেন।  

ভারত বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান যেহেতু একই দেশ ছিল এবং দেশভাগের সময় জনগণের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি, শুধু তাই নয়, দেশভাগের সময় যেহেতু দেশের রাজনৈতিক নেতারা সদ্যোজাত ভারত রাষ্ট্রের উপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে পাকিস্তান থেকে এক সাথে ভারতে না আসার আবেদন জানিয়েছিলেন এবং পরে যখন মনে হবে তখন আসলে সেই দেশের মানুষদের গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন,/ তাই রাজনৈতিক ভাবে দেশভাগের শিকার এই সমস্ত দেশের মানুষেরা যদি এই তিন দেশের কোনোটিতে চলে যান তবে তাঁদের শরণার্থী নয় বরং উদ্বাস্তু হিসাবে গণ্য করা উচিৎ এবং তাঁরা নিঃশর্ত নাগরিকত্বেরও দাবিদার।

পাকিস্তান এই উদ্বাস্তুদের খুব সহজে নাগরিক হিসাবে  মেনে নিলেও, ভারত সরকার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। ভারত সরকার অবিভক্ত  ভারতের উদ্বাস্তদের নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবি মেনে নেয়নি। বরং তাঁদের শরণার্থী  আর অবৈধ অভিবাসীর তকমা দিয়েছে। উদ্বাস্তু আর শরণার্থী শব্দ দুটো গুলিয়ে দিয়েছে।

অনুপ্রবেশকারী

এই শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ “ইনফিলট্রেটর”। অনুপ্রবেশ বা ইনফিলট্রেটর বা “ঘুসপেঠিয়া” শব্দের সঙ্গে চক্রান্ত, দুরভিসন্ধি এবং অপরাধের গন্ধ আছে। পাশাপাশি জঙ্গি এবং অনুপ্রবেশ শব্দ দুটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়াতে শুনে আসছি।

যদিও ভারতের নাগরিকত্ব আইনে “ইনফিলট্রেটর” বলে কোনো শব্দ নেই। “ইলিগাল মাইগ্রেন্ট” বা অবৈধ-অভিবাসী শব্দটি আছ।  বাঙালি উদ্বাস্তু বা কাজের খোঁজে যে সমস্ত গরীব মানুষ ভিসা পাসপোর্ট ছাড়া অভিবাসী হয়ে ভারতে এসেছেন তাঁদের  অপরাধী তকমা দেওয়া এবং তাঁদের  বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টির জন্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ “ইলিগাল মাইগ্রেন্ট” এর অনুবাদ “ঘুসপেঠিয়া” করেছেন এমন মনে করাটা কি ভুল হবে? 

নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, ২০০৩ এ বেআইনি অভিবাসীর বর্ণনা

অখণ্ড ভারতের সন্তানরা খণ্ডিত ভারতে শরণার্থীর বদলে উদ্বাস্তু হিসাবে  চিহ্নিত হওয়ার এবং নিঃশর্ত নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবিদার। কিন্তু অখণ্ড ভারতের সন্তান অর্থাৎ বাংলাদেশী ও পাকিস্তানিদের থেকে নেপাল ও ভুটানের নাগরিকদের বর্তমান ভারতে সুযোগ সুবিধা এবং অধিকার বেশী। নেপাল বা ভুটানের নাগরিকরা ভারতে আসলে তাদের পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে আসতে হয়না। কিন্তু পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে গরিব মানুষেররা এই দেশে বিনা ভিসা পাসপোর্টে এলে তাঁদের “অবৈধ অভিবাসী” বা অমিত শাহের ভাষায়  “ঘুসপেঠিয়া” তকমা পেয়ে জেলে থাকতে হয়!

তাহলে সিএএ ২০১৯ এ হল কী?

ধরা যাক ৫০০ জন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, যথা শ্রীলঙ্কা, তিব্বত, পাকিস্তান, ইত্যাদী দেশ থেকে বিনা ভিসা পাসপোর্টে ভারতে এসেছেন। সুতরাং এই প্রত্যেকেই হলেন আইনের চোখে “অবৈধ অভিবাসী” আর বিজেপি’র চোখে “অনুপ্রবেশকারী”।

এবার এই ৫০০ জনের মধ্যে ১০০ জন ফরেনার্স অফিসে গিয়ে জানালেন যে তাঁরা যুদ্ধ, ধর্মীয় নিপীড়ন, রাজনৈতিক অত্যাচার, ইত্যাদী, কারণে, প্রাণের দায়ে, ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন এবং তাঁরা ভারত সরকারের কাছে শরণ বা আশ্রয় চান। এবার ভারত সরকার এই ১০০ জনের পরিচয়পত্র এবং তাঁদের সাথে থাকা নথিপত্র পরীক্ষা করলো, গুপ্তচর দপ্তর আর এদের দেশের দূতাবাস থেকে রিপোর্ট নিল, এবং এর ভিত্তিতে স্ট্যান্ডার্ড অপেরেটিং প্রসিডিওর বা এসওপি অনুযায়ী এই ১০০ জন কে লং-টার্ম বা দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দিল।

এই দীর্ঘমেয়াদি ভিসার ফলে এই মানুষেরা ভারতে থাকতে পারবেন, স্কুল কলেজে পড়তে পারবেন, বেসরকারি চাকরি করতে পারবেন, কিন্তু ভোট দেওয়া বা অন্যান্য নাগরিক অধিকার থাকবে না। এই দীর্ঘমেয়াদি ভিসা পাওয়া লোকেরা হলেন শরণার্থী বা রিফিউজি। বাকিরা, অর্থাৎ ৪০০ জন কিন্তু শরণার্থী বা রিফিউজি নয়। সুতরাং ৫০০ জন অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে শরণ চাওয়া ১০০ জন অবৈধ অভিবাসী এবং রিফিউজি দুটোই, বাকি ৪০০ জন শুধুই অবৈধ অভিবাসী।

বাংলাদেশ থেকে আগত উদ্বাস্তুরা, যারা শরণার্থীর মর্যাদা পাননি, তাঁরা বা তাঁদের সন্তানরা ভারতের আইনের চোখে অবৈধ অভিবাসী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে বসে আছেন। যদিও অনেকেই ভোটার কার্ড সহ বিভিন্ন নাগরিক অধিকার ভোগ করেন এবং নিজেদের নাগরিক বলে মনে করেন, তবুও ভারতের নাগরিকত্ব আইনের চোখে তাঁরা অবৈধ অভিবাসী ছাড়া কিছুই নন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার প্রথম দফা শাসন করার সময়ে যে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৬, বা সিএবি ২০১৬ এনেছিল বা দ্বিতীয় দফার শাসনকালে যে সিএএ ২০১৯ এনেছে তা ঐ ১০০ জন শরণার্থী সম্পর্কিত। বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন ধর্মের এই ১০০ জন শরণার্থীর মধ্যে প্রথমেই বঞ্চিত মুসলিমরা। কারণ, আইনে মুসলিম বাদে ছয়টি ধর্মের উল্লেখ আছে। এরপর বাদ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বাদে অন্য কোন দেশ থেকে আগত অমুসলিমরাও। অর্থাৎ একজন পাকিস্তানি বা বাংলাদেশী মুসলিমের মত একজন তিব্বতি বৌদ্ধ বা শ্রীলঙ্কার হিন্দুও বাদ।

যেহেতু এই আইনে ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪-এর কাট অফ তারিখ দেওয়া আছে তাই ২০১৪ সালের পরে আসা বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের হিন্দু, বৌদ্ধ, বা অমুসলিম শরণার্থীরাও বাদ। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অমুসলিম শরণার্থী যারা ২০১৪ সালের আগে ভারতে এসেছেন কিন্তু ধর্মীয় নিপীড়নের কারণ উল্লেখ না করে অন্য কারণ দেখিয়েছেন তাঁরাও বাদ। এর পর যারা পরে রইলেন, অর্থাৎ বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের নাগরিক ছয়টি অমুসলিম ধর্মের মানুষ, যারা ২০১৪ সালের মধ্যে ভারতে এসেছেন এবং ধর্মীয় নিপীড়নের কারণ দেখিয়ে পাসপোর্ট আইন ও বিদেশী আইন থেকে ছাড় পেয়েছেন, তাঁরাআর “অবৈধ অভিবাসী” হিসাবে গণ্য হবেন না। অর্থাৎ, তাঁরা এবার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

সিএএ ২০০৩-এ অবৈধ অভিবাসী চিহ্নিতদের কাছ থেকে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। রিফিউজিরা যেহেতু “অবৈধ অভিবাসী”ও বটে তাই তাঁরা  নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারছিলেন না। এবার রিফিউজিদের একটা অংশকে সেই সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি রিফিউজিরা দীর্ঘমেয়াদি ভিসা নিয়েই বসে থাকবেন। এদের ডিটেনশন ক্যাম্পেও যেতে হবে না, এদের নাগরিকত্বও হবে না।

নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, ২০১৯, অনুসারে কারা কারা বেআইনি অভিবাসী তকমা থেকে মুক্তি পেয়েছে তার খতিয়ান

বাংলার উদ্বাস্তু নেতাদের দাবি ছিলো নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে ধর্মের উল্লেখ না করে ভিক্টিম অফ পার্টিশান বা দেশভাগের বলি শব্দটা লিখতে। কিন্তু সরকার গোয়ার্তুমি বসত ধর্মের নাম লিখেছে, যা ধর্মনিরপেক্ষ দেশে মেনে নেওয়া যায় না। ধর্মের নাম উল্লেখের পেছনে বিজেপির উদ্দেশ্যই ছিল ধর্মের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ধর্মের নাম উল্লেখ না করলেও এই আইনের ফলে মূলত অমুসলিমরাই উপকৃত হতেন কারণ ঐ তিন দেশ থেকে মূলত তারাই শরণার্থী হয়ে এসেছেন এবং নাগরিকত্বের দাবি জানিয়েছেন।

সমাজের ধর্মীয় বিভাজন করে মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরানো এবং আগামী দিনে ধর্ম ভিত্তিক আইন তৈরির অভিসন্ধিও থাকতে পারে। সাধারণত দেখা যায় মুসলিম শরণার্থীরা সমস্যা মেটার পরে নিজের দেশে ফেরত যান। হিন্দু এবং শিখরা ভারতে রয়ে যান। কাজের খোঁজে আসা বৈধ বা অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাঙালি উদ্বাস্তুরা (যারা ধর্মে হিন্দু) নাগরিকত্বের দাবিতে আন্দোলন করে এসেছেন। মুসলিমরা এই রকম কোনো দাবি করেছেন বলে কেউ কখনো শুনেছেন বা দেখেছেন কি?

সুতরাং ধর্মের উল্লেখ না থাকলেও অমুসলিম শরণার্থীরাই  মূলত এই সিএএ-এর ফলে উপকৃত হত। যদিও সিএএ  ২০১৯ যে পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছে তা শুধুমাত্র নথিভুক্ত শরণার্থীবা রিফিউজিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি) থেকে নাম কাটা যাওয়া কোনো মানুষ বা অবৈধ অভিবাসীর ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য নয়। 

অথচ কি অবলিলায় আসাদুদ্দিন ওয়েসি সহ বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীরা প্রচার করলেন যে এনআরসিতে বাদ গেলে সিএএ-এর মাধ্যমে নাকি হিন্দুদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে আর মুসলিমদের বাদ দেওয়া হবে! এই ভাবে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের এনআরসি আন্দোলন থেকে নির্লিপ্ত করে দিলেন।

অন্যদিকে বলা হল সিএএ ২০১৯ এ আবেদন করলে নাকি একজন নাগরিক থেকে শরণার্থী হয়ে যাবেন।

প্রথমতঃ যে উদ্বাস্তু আবেদন করবেন, তিনি নিজেকে ভারতের নাগরিক মনে করলেও, আন্দোলনকারীরা তাঁকে নাগরিক মনে করলেও, এখনো পর্যন্ত ভারতে প্রচলিত নাগরিক আইন তাকে নাগরিক মানে না। এতদিন তাঁর সমস্ত নাগরিক অধিকার ভোগ আদতে আইনের চোখে অবৈধ।

দ্বিতীয়তঃ  নথিভুক্ত শরণার্থী বা রিফিউজি বাদ দিয়ে কারো যদি সিএএ ২০১৯ এ আবেদন করার সুযোগ থাকে তবে তিনি আবেদনের মাধ্যমে নিজেকে শরণার্থী বানাবেন না, বরং “অবৈধ অভিবাসী” হিসাবে ঘোষণা করবেন, যা আরো খারাপ। যদিও অবৈধ অভিবাসী ধরার আসল ফাঁদ হল জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জী (এনপিআর)। সিএএ ২০১৯ কাউকে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়নি। শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে ভারতে একটি এসওপি আছে। বরং সিএএ ২০১৯ শরণার্থীদের মধ্যে এক অংশকে “অবৈধ অভিবাসী” তকমা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। এই আইন শরণার্থীদের জন্য, যারা পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) আইন, ১৯২০, বিদেশী আইন, ১৯৪৬, থেকে ছাড় পেয়েছে। সংখ্যাটা ৩১,৩১৩ জন মাত্র। ভুল প্রচার করে আন্দোলনকারীদের এক বড় অংশ আসলে হিন্দুদের এনআরসি  থেকে নিরাপদ  অনুভব করিয়েছেন।

হিন্দু হলে শরণার্থী, মুসলিম হলে অনুপ্রবেশকারী?     

হিন্দু হলে শরণার্থী মুসলিম হলে অনুপ্রবেশকারী, এই রকম কোনো কথা সিএএ ২০১৯ এ লেখা নেই। এটা বিজেপি সুকৌশলে খাইয়েছে আর বিরোধীরা খেয়েছে। ভারতে এখনো পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে বা বৈধ ভাবে মুসলিম ব্যক্তি এসে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারেন।

যে কোনো দেশ থেকে হিন্দু বা মুসলিম যে কেউ অবৈধ ভাবে বা পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া ভারতে আসলে তিনি “অবৈধ অভিবাসী” চিহ্নিত হয়ে ডিটেশন ক্যাম্পে যাবেন। পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, যে কোনো ধর্মের মানুষ নিপীড়নের কারণে ভারতে এলে তারা শরণার্থী হতে চেয়ে আবেদন জানাতে পারবেন।

২০১৪ সালের পর অবৈধ ভাবে এসে থাকলে হিন্দু, মুসলিম নির্বিশেষে কোনো দেশের শরণার্থীই আর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন না।
এবার খেয়াল করুন মোদী আর শাহের এর প্রত্যেকটি কথা; বক্তব্যগুলো মন দিয়ে শুনুন। দেখবেন পরস্পরবিরোধী কথাগুলোকে আর পরস্পরবিরোধী মনে হনে না। মোদী বা শাহ বলছে শরণার্থীদের দেশ ছাড়তে হবে না। শরণার্থীদের নাগরিকত্ব নাকি হবেই। উদ্বাস্তু আর শরণার্থী দুটো আলাদা বিষয়কে গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেউই কিন্তু খোলসা করে বলছে না সরকারের কাছে কারা শরণার্থী আর কারা “বেআইনি অভিবাসী”। আবার বলছে হিন্দু মুসলিম সমস্ত “ঘুসপেঠিয়াকেই” তাড়ানো হবে! উদ্বাস্তু সমস্যা এবং সিএএ ২০১৯ এর সঠিক বিশ্লেষণ ছাড়া যে এনআরসি- বিরোধী আন্দোলন সফল হতে পারে না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla