লকডাউন পর্যায়ে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি)-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠন ও যৌথমঞ্চগুলির মধ্যে “উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব”র দাবি নিয়ে যে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছিল তা ইদানিং বেশ জমে উঠেছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, উদ্বাস্তুরা ভোট দেন, তাঁদের আধার ও রেশন কার্ড আছে, পূর্বাপর বসবাস করে আসা নাগরিকদের প্রাপ্ত অধিকার তাঁরাও ভোগ করেন, সুতরাং তাঁদের আবার নাগরিকত্বের বা একটি নতুন নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন বা সিএএ-র দাবি তোলার দরকার কী? 

অভিযোগ উঠছে, নাগরিকত্বের দাবি তুলে এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনে নাকি বিভাজন ঘটানো হচ্ছে, শাসক ভারতীয় জনতা পার্টি-র (বিজেপি) ধর্মীয় বিভাজন তথা মেরুকরণের রাজনীতিতে মদত জোগানো হচ্ছে। সুতরাং যাঁরা এই দাবি তুলছেন তাঁরা প্রকারন্তরে বিজেপি-র দালালি করছেন। আবার, অভিযোগকারীদের মনোভাব ও উদ্বাস্তুদের সমস্যা অনুধাবনে তাঁদের অক্ষমতা সম্পর্কে, উদ্বাস্তু সৃষ্টির ইতিহাস এবং  মূল নাগরিকত্ব আইন ও ওই আইনে বিভিন্ন সময়ে আনা সংশোধনীর বিষয়ে গভীরভাবে চর্চার অভাব সম্পর্কেও উঠছে পাল্টা প্রশ্ন।

প্রশ্ন উঠছে: অভিযোগকারীরা নাগরিকত্বের দাবিদারদের কি নির্বোধ ভাবেন? উদ্বাস্তুরা কি এতোটাই নির্বোধ যে নাগরিকত্ব থাকতে আবার তাঁরা নাগরিকত্বের দাবি করছেন?  হতে পারে, উদ্বাস্তুদের বেশিরভাগ খুব বেশি শিক্ষিত নন, নাগরিকত্ব আইন  তাঁরা খুব একটা  বোঝেন না। কিন্তু বাস্তব জীবনে, প্রশাসনিক হয়রানি থেকে কি তাঁদের এই উপলব্ধি হচ্ছে না যে রাষ্ট্র তথা সরকার তাঁদের নাগরিক হিসাবে স্বীকার করে না? এই প্রেক্ষাপটে, আসুন সমস্যাটা আমরা একটু তলিয়ে দেখার চেষ্টা করি।

ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের সময় তৎকালীন ভারত রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেল ও কংগ্রেসের অবিসংবাদী নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি পাকিস্তানে অমুসলিম ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের  আশ্বাস দিয়েছিলেন, যে-কোন সময়ে তাঁরা ভারতে আসতে পারেন। সরকার তাঁদের সাদরে গ্রহণ করবে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। সেদিনের ভারত রাষ্ট্রের প্রধানদের আশ্বাসকে এই মানুষগুলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করেছিলেন। মুখের কথাকে আইনের মর্যাদা দিয়েছিলেন। তাঁরা জানতেন না, মুখের কথা আর আইন এক নয়। তাঁরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, এই আশ্বাস একদিন বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে তাঁদের কাছে ফিরে আসবে, তাঁদের বিশ্বাসকে এভাবে পদদলিত করা হবে।

আজ এঁদের সাথে এরকম আচরণ করা হবে বলে কি সেদিন কোনও আইনি স্বীকৃতির বন্দোবস্ত রাখা হয়নি? সংবিধান প্রণেতারা ও তৎকালীন রাষ্ট্র প্রধানেরা এই মানুষগুলোকে সাংবিধানিক ও আইনি স্বীকৃতি কোনটার কথা ভাবেননি কি এই জন্য? দরিদ্র, প্রায় বেশিরভাগ নিরক্ষর, আইন না-বোঝা, তথাকথিত নিম্নবর্ণের সহজ সরল মানুষগুলো আজ এভাবে প্রতারণার শিকার হবেন, সেদিন কি তাঁরা কল্পনাও করতে পেরেছিলেন!

দেশভাগের পর, অতীতে যতই এক দেশ থাকুক না-কেন, পাকিস্তান ও ভারত যে আলাদা দু’টি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এই মানুষগুলো যে বিপদে পড়তে পারেন, সে বিষয়ে তৎকালীন নেতা-মন্ত্রীদের কি কোনও ভাবনা ছিল না? না, তাঁরা তা ভাবতেই চাননি? বোঝা যায়, এঁদের প্রতি কতটা শ্রেণী ঘৃণা ও বর্ণ ঘৃণা থাকলে এভাবে এঁদের এই জীবন-মরণ সমস্যাকে, অস্তিত্বের সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া যায়!

আমরা জানি, ভারতীয় সংবিধানের ৫ থেকে ১১ নং পর্যন্ত ধারাগুলো নাগরিকত্ব নিয়ে। সেখানে কিন্তু দেশবিভাগের বলি  উদ্বাস্তু  হয়ে আইন কানুন না-জানা যে সমস্ত মানুষ এই ভারতে আসবেন, তাঁদের কোনও স্বীকৃতি নেই। নাগরিকত্ব আইনের ৬ এর (খ) (১) উপ-ধারায় পরিষ্কার বলা হয়েছে পাকিস্তান থেকে ১৯ জুলাই, ১৯৪৮-এর আগে আসলে তাঁরা ভারতের নাগরিক। ৬-এর(খ)(২) তে বলা হয়েছে ১৯ জুলাই,১৯৪৮-এর পরে কিন্তু সংবিধান প্রারম্ভের মধ্যে যাঁরা আসবেন তাঁদের নাগরিকত্বের আবেদন জানিয়ে নথিভূক্ত হতে হবে। তবে এর পরে এলে কী হবে তার কিন্তু কোন উল্লেখ নেই।

অর্থাৎ ১৯৪৮-এর ১৯ জুলাইয়ের পর থেকে সংবিধানের প্রারম্ভ পর্যন্ত যাঁরা এসে নাম নথিভূক্ত করেননি তাঁরা কিন্তু স্বীকৃতি পাবেন না। সংবিধান প্রারম্ভের অর্থাৎ ১৯৫০-এর ২৬ জানুয়ারির পর যাঁরা আসবেন তাঁদের কী করতে হবে বা ভারত সরকার তাঁদের জন্য কোন্ মর্যাদা (status) বরাদ্দ করবে সে-সম্বন্ধে কিন্তু সংবিধানে কিছুই উল্লেখ নেই। সংবিধানের এই ধারার ওপর ভিত্তি করে ১৯৫৫ সালে নাগরিকত্ব আইন তৈরি হয়। সেখানেও কিন্তু উদ্বাস্তু হয়ে আসা মানুষদের কী করতে হবে এবং সরকার তাঁদের কী মর্যাদা দেবে তার কোনও উল্লেখ নেই। সাধারণভাবে বৈধভাবে বিদেশ থেকে এসে পাসপৌর্ট-ভিসা দেখিয়ে ফরেনার্স দফতরে নথিভুক্তিকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির যে ধারার উল্লেখ আছে, সেই ধারায় কিন্তু নথিভুক্ত হননি লক্ষ লক্ষ মানুষ।

সরকার বহু উদ্বাস্তুকে পুনর্বাসন দিয়েছে, দলিল দিয়েছে, কিন্তু কোথাও নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয়নি। প্রশ্ন উঠতে পারে, সরকার উদ্বাস্তুদের স্বাভাবিক নাগরিক হিসেবে মেনে নিয়েছিল বলেই কোন আইনি স্বীকৃতির প্রয়োজন পড়েনি। তার উত্তর কিন্তু সংবিধানের ৫ ও ৬ নং ধারা। কারা স্বাভাবিক নাগরিক সেখানে স্পষ্ট বলা আছে। সংবিধান প্রারম্ভের পর যাঁরা আসবেন তাঁদের কোন উল্লেখ নেই। ভারত রাষ্ট্র যে বিশেষত পূর্ব পাকিস্তান ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিক হিসাবে স্বীকার করে না, তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটতে শুরু করে রাজীব গান্ধির প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়কাল ১৯৮৬ সাল থেকে।

উদ্বাস্তুদের দিকে লক্ষ্য রেখে নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী আনা হয়। আইন করা হয়, বাবা ও মায়ের মধ্যে একজনকে অবশ্যই ভারতের বৈধ নাগরিক হতে হবে, তবেই সন্তান জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব অর্জন করবে। এরপর ২০০৩ সালে “হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী” বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এল কে আদবানির শাসনকালে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইনে বিরাট পরিবর্তন এনে উদ্বাস্তুদের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেওয়া হল। সংশোধিত আইনে বলা হল, বাবা ও মা দু’জনকেই ভারতের নাগরিক হতে হবে অথবা একজনকে তো নাগরিক হতেই হবে কিন্তু অন্যজন “অবৈধ অভিবাসী” হলে চলবে না। দ্বিতীয়ত, ওই আইনে উদ্বাস্তুদের কবরে পুঁতে দেওয়ার ব্যবস্থা ষোল আনা পাকা করে ফেলা হল। বলা হল, যাঁরা বিদেশ (এক্ষেত্রে উদ্বাস্তুদের বুঝতে হবে মূলত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ) থেকে পাসপোর্ট/ভিসা বা ট্রাভেলিং ডকুমেন্টস সহ ভারতে এসে ফরেনার্স ডিপার্টমেন্টে নাম নথিভুক্ত করে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা নেননি এবং যাঁরা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও এদেশে রয়ে গেছেন তাঁরা সবাই “অবৈধ অভিবাসী” বা “অনুপ্রবেশকারী” এবং এই অবৈধ অভিবাসী বা অনুপ্রবেশকারীরা কখনোই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

এই সংশোধিত আইনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়ে গেল কেন সংবিধান ও নাগরিকত্ব আইনের কোথাও “উদ্বাস্তু” শব্দটির বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই এবং কেন সংবিধানে ও নাগরিকত্ব আইনে উদ্বাস্তুদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। যখনই উদ্বাস্তুদের “অবৈধ অভিবাসী” বা “অনুপ্রবেশকারী” ঘোষণা করা হল, তখনই তাঁদের শিক্ষিত ও কম/বেশি আইন বোঝা একটি অংশ বুঝতে পারলেন, ভারতরাষ্ট্র উদ্বাস্তুদের এতদিন নাগরিক সুবিধা দিয়ে এলেও তাঁদের ” নাগরিক” হিসাবে মেনে নেয়নি এবং মেনে নিতে রাজিও নয়। তখন থেকেই নাগরিকত্বের দাবিতে বিভিন্ন উদ্বাস্তু ও মতুয়া সংগঠনের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হল। কিন্তু রাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত থেকে সাধারণভাবে যে পিছু হটতে রাজি নয়, তা আর এক দফা প্রমাণ হয়ে গেল ২০১৯ সালের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন দ্বারা।

এই আইনে পাসপোর্ট/ ভিসা ছাড়া ভারতে আসা “অবৈধ অভিবাসী” করে দেওয়া কয়েক কোটি উদ্বাস্তুর কাউকেই শরণার্থীর স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, ২০০৩-এর আইনেও বিন্দুমাত্র আঘাত করা হয়নি। বস্তুত, উদ্বাস্তুদের কোন বিষয়ই নয় এই আইন অর্থাৎ সিএএ ২০১৯। শুধুমাত্র পাসপোর্ট/ভিসায় আসা আর ফরেনার্স ডিপার্টমেন্টে নাম নথিভুক্ত করে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা নিয়ে থাকা ৩১,৩১৩ জনকে শরণার্থী ঘোষণা ও নাগরিকত্বের আবেদন করার অধিকার দেওয়ার আইন হল ২০১৯-এর নাগরিকত্ব (সংশোধনী)আইন। আর এই সংশোধিত আইনকে কেন্দ্র করে বিজেপি উদ্বাস্তুদের ও দেশের অমুসলিম জনগণকে বোকা বানিয়ে বিভাজনের খেলা খেলে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার ও এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন বিপথে চালিত করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে গেল।

আন্দোলনকারী নেতৃত্বের একাংশের গোঁয়ার্তুমি, উদ্বাস্তু আন্দোলনের একাংশের বেইমানি আর বিপুল সংখ্যক  উদ্বাস্তু ও অমুসলিম জনগণের অজ্ঞতার কারণে এখনও পর্যন্ত সফল বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের দূরভিসন্ধি।  এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনে, এনআরসি-এনপিআর-সিএএ বাতিলের দাবি উঠেছে। বলতে কী, এ যাবৎ আনা নাগরিকত্ব আইনের সমস্ত সংশোধনীই  নাগরিকত্ব হননকারী, তাই সেগুলো বাতিলের দাবি যথার্থ।

সিএএ ১৯৮৬ এবং সিএএ ২০০৩ বাতিল হলে এনআরসিও যে বাতিল হয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু উদ্বাস্তুরা ২০০৩-এর (সংশোধিত) আইন অনুসারে “অবৈধ অভিবাসী”-র তকমা থেকে কতটা মুক্ত হতে পারবেন বা আদৌ মুক্ত হতে পারবেন কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। কারণ, পাসপোর্ট আইনে অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত ও গ্রেফতার করার বন্দোবস্ত আছে। ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতার, কারাবাস, হয়রানির  বহু উদাহরণ আছে। (২০০৩ সালের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ধাক্কায় ২০০৬ সালে ভোটার তালিকা থেকে ১২ লক্ষ ৯৮ হাজার নাম বাদ যায়–সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৩/০২/২০০৬। ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড থাকা সত্ত্বেও ‘বাংলাদেশি’ অজুহাতে গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন বেশ কয়েকশ’ মানুষ। গ্রেপ্তার ও হয়রানির অসংখ্য সংবাদ বেরিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা সহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে।) 

সুতরাং যেহেতু  সংবিধানে কিংবা নাগরিকত্ব আইনে উদ্বাস্তুদের  নাগরিকত্বের কোনও স্বীকৃতি নেই, তাই তাঁদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে হয়রানির ধারাবাহিকতা নি:সন্দেহে জারি রাখবে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদানে অসম্মত এই ভারত রাষ্ট্র। তাই উদ্বাস্তুদের  “নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করা”র দাবি অযৌক্তিক তো নয়ই বরং যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত। তাই নয় কি? ভারতের সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদের তল্পিবাহক ব্রাহ্মণ্যবাদী দলগুলো উদ্বাস্তুদের “অবৈধ অভিবাসী” বা “অনুপ্রবেশকারী” বানালেও এই ভূখন্ডের মূলবাসী, আদিবাসী, দলিত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কিন্তু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবিতে সোচ্চার, তাঁরা ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের জন্যও তৈরি। কারণ, এনআরসি দ্বারা তাঁদেরও বে-নাগরিক বানিয়ে দাস-মজুর বানাতে চায় রাষ্ট্র। নাগরিকত্বের প্রশ্নে ভারত রাষ্ট্র উভয়েরই সাধারণ শত্রু। সুতরাং তাঁদের নাগরিকত্ব রক্ষার লড়াই আর উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব অর্জনের লড়াইয়ের মধ্যে তাঁরা কোন বিরোধ দেখছেন না, বরং অভিন্ন লড়াই হিসেবে দেখছেন। তাই তাঁরা আদিবাসী-দলিত-উদ্বাস্তু-সংখ্যালঘু জোট তৈরি করেছেন, জোটকে শক্তিশালীও করছেন।

আরেকটি বিষয় সংক্ষেপে আলোচনা করা দরকার। যতই সংবিধানের ৩২৬ নং ধারায় কিংবা জনপ্রতিধিত্ব আইনে নাগরিকেরই একমাত্র ভোটাধিকার থাকতে পারে বলে বলা হোক না-কেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে তার কার্যকারিতা হারিয়েছে — বিশেষত তাঁদের ক্ষেত্রে সরকার যাঁদের নাগরিক হিসেবে গন্য করে না। তাই এসব প্রশ্ন তুলে জলঘোলা করে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবিকে নস্যাৎ করার দরকার আছে কি? আর দশকের পর দশক ধরে বসবাস করে আসা উদ্বাস্তুরা (যাঁরা বর্তমান এই ভূখন্ডের বাকি মানুষদের মতো দেশবিভাগের জন্য দায়ী নন) নাগরিকত্বের দাবি তুললে যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন তাঁদের সমস্যাটা কোথায়? তাহলে কি ধরে নিতে হবে তাঁদের কেউ কেউ সচেতনভাবে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব চাইছেন না? 

বর্তমান বিজেপি সরকার তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে চাইছে না, প্রতারণা করছে, তাহলে বিজেপি-র সাথে এঁদের পার্থক্য কোথায়? একটু ভেবে দেখুন!   সত্যিই তো দুটো দাবির মধ্যে, দুটো লড়াইয়ের  (উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব অর্জনের লড়াই আর অন্যদের নাগরিকত্ব রক্ষার লড়াই) মধ্যে কোন চীনের প্রাচীর নেই। তাহলে জোর করে চীনের প্রাচীরটা না-রেখে, আসুন, একে ভেঙে ফেলি। দুর্বার গণআন্দোলনে, প্রয়োজনে প্রতিরোধ আন্দোলনে উভয় দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করি।

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla