সেই ২০১৩-১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চেষ্টা চালিয়ে আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মসনদে তাঁর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কে বসাতে, যার ফলস্বরূপ বর্তমানে তাঁর দলটি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস-এর প্রধান প্রতিপক্ষে পরিণত হয়েছে এবং ২০২১ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে কেরামতি করে ক্ষমতা দখল করতে উদ্যোগী হয়েছে। এই বিধানসভা নির্বাচনের আট পর্যায়ের ভোট গ্রহণের তারিখ ভারতের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করার পরে রবিবার, ৭ই মার্চ ২০২১-এ কলকাতায় মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ থেকে রাজ্যের মসনদ দখলের অভিযান সরাসরি শুরু করলো বিজেপি। এই ব্রিগেড সভার থেকে মোদী স্বভাবসিদ্ধ ভাবে মিথ্যার ফুলঝুরি ছুটিয়ে বিজেপির দিকে বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ অংশটিকে টেনে আনার চেষ্টা চালালেন। এই সভার থেকে শুরু হল মিথ্যা প্রতিশ্রুতির এক নয়া খেলা, যে খেলায় অবশ্যই বিজেপি ভাল ভাবে হাত পাকিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেস এর দুর্নীতি আর স্বজনপোষণ এর বিরুদ্ধে জনগণ কে রুখে দাঁড়াতে বলে মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল “আসল পরিবর্তন” এর, কারণ প্রধানমন্ত্রীর মতে ২০১১ সালে যে “পরিবর্তন” এর ঝড় তুলে মমতা বন্দোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেছিলেন সেই পরিবর্তন নাকি মিথ্যা ছিল। তাই আগামী ২৫ বছরে বাংলা কে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে “সোনার বাংলা” (মোদী ও বিজেপি নেতাদের উচ্চারণে “সুনার বাঙ্গালা”) গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেন দেশের ৭১ বছর বয়সী বৃদ্ধ প্রধানমন্ত্রী। কী করে ২৫ বছরে বাংলা “সোনার বাংলা”-য় রূপান্তরিত হবে তার কোন সুস্পষ্ট রূপরেখা তিনি দেননি। এবং দেননি যথাযথ কারণেই। মোদী কারণ বা পরিকল্পনায় বিশ্বাস করেন না, করেন শুধু ভাষণ দিয়ে মানুষ কে তাঁতিয়ে তুলে নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করার পদ্ধতিতে। সেই পদ্ধতি অন্য রাজ্যে কাজে আসলে পশ্চিমবঙ্গে কেন আসবে না?
বন্দোপাধ্যায় আর তৃণমূল কংগ্রেস কে খোঁচা দেওয়ার সময়ে বারবার দুর্নীতি আর অপরাধ নিয়ে কথা বলেছেন মোদী। সেই কথা বলার আগে অবশ্য তিনি পিছনে ফিরে দেখেননি যে কারা তাঁর মঞ্চ আলো করে দাঁড়িয়ে আছেন। মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ এর জন্যে বিজেপির পিতৃপ্রতীম সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) চেয়েও বেশি অবদান হল তৃণমূল থেকে গেরুয়া শিবিরে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের নাম সিবিআই বা ইডি-জাতীয় দুর্নীতি তদন্তকারী সংস্থাগুলোর থেকে মুছে ফেলার প্রচেষ্টা করা নেতাদের। শুভেন্দু অধিকারী বা মুকুল রায়, যাঁদের ঘাড়ে পা দিয়ে বাংলা না জানা ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সাথে সম্পর্কহীন বিজেপি ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা করছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কুখ্যাত সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি, নারদা কান্ড, রোজভ্যালি কাণ্ডের পথিকৃৎ। তাঁদের মতন তৃণমূল কংগ্রেসের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বজনপোষণে তুখোড় খেলোয়াড়দের নেতৃত্বে কী “খেলা হবে” বাংলার মাটিতে সেটা কেন মোদী তাঁর ব্রিগেড সভার থেকে বললেন না বোঝা গেল না।
আরএসএস দীর্ঘদিন ধরে চেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ কে কুক্ষিগত করে বঙ্গবাসী সকল অমুসলিমদের হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান নীতির গোলাম বানিয়ে তাঁদের স্বাধীন জাতিসত্তা কে, তাঁদের হিন্দি ও উত্তর ভারতীয় হিন্দু ধর্মের থেকে যে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব এত কাল ছিল তা ধ্বংস করে সকল নমঃশূদ্র, আদিবাসী, দলিত সম্প্রদায় ও তফসিলি উপজাতিগুলো কে হিন্দুকরণ ও হিন্দি ভাষী করে বঙ্গ ভূমি কে গুজরাটি-মাড়োয়ারি বেনিয়াদের শোষণ ও লুন্ঠনের মৃগয়া ভূমিতে পরিণত করতে। সেই কথাই মোদী বললেন বিজেপির উপর থেকে “বহিরাগত” তকমা হঠাতে। তিনি জানান দিলেন যে মীরজাফরের বংশধর, বাংলা ভাগের পান্ডা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী-র পদচিহ্ন অনুসরণ করেই বিজেপি চলতে চায়। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ কে বিদেশী একচেটিয়া-লগ্নি পুঁজির কাছে আর তার দালাল দেশী বৃহৎ মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিদের কাছে বিক্রি করতে চায়।
আর চলার পথে যেহেতু তৃণমূল কংগ্রেস একটি কাঁটা—যদিও সেই দলের নেতা-নেত্রীরা নির্বাচনের টিকিট না পেয়ে বা দুর্নীতির তদন্ত থেকে বাঁচতে ভেড়ার পালের মতন ছুটে ছুটে বিজেপিতে যোগদান করছে—তাই সেই কাঁটা উপড়ে ফেলতে মোদী ভরসা করছেন শুভেন্দু আর মুকুলদের মতন আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের উপর। তিনি ভরসা করছেন অর্জুন সিং এর মতন গুন্ডাদের উপর। তিনি ভরসা করছেন সেই জীতেন্দ্র তিওয়ারি-র মতন নেতাদের উপর যাঁরা এযাবৎ কাল অবধি বিজেপি কর্মীদেরই পিটিয়ে এসেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস না বিজেপি, কোনদিকে থাকলে বেশি লুট করা যাবে, বেশি কাটমানি আয় করা যাবে, বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে রাজত্ব করা যাবে, বাংলার সমস্ত সংসদীয় বেনিয়াদের সামনে এটাই আজ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ উপলক্ষ্যে এই দিন বিজেপিতে যোগদান করেন প্রাক্তন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী, যিনি ২০১৪ থেকে ২০১৬ অবধি তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন। উনি ভরা মাঠে হিন্দি ও অল্প বাংলা মিশিয়ে ঘোষণা করেন যে তিনি নাকি ঢোড়া সাপ না বরং কেউটে। তবে কেন হঠাৎ নিজেকে কেউটে বলে পরিচিতি দিয়ে লোক হাসানোর বন্দোবস্ত করলেন এই সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ তা বোঝা না গেলেও এটা বোঝা গেল যে বিজেপি তে যোগদান করে শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়, প্রভৃতি তৃণমূলের এককালীন রাঘব বোয়ালদের মতন তাঁর ঘাড়ের উপর থেকেও সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের খাঁড়া নেমেছে। হয়তো এরই মধ্যে নিজের ছেলের ও স্ত্রীর নামে এক অভিনেত্রীর করা ধর্ষণের অভিযোগও বিজেপি হাপিস করে দেবে। ফলে এবার তিনি স্বস্তিতে আবার রাজনীতির ময়দানে নিজের অবসরকালীন আয়ের বন্দোবস্ত করে নিতে পারবেন অনায়াসেই।
এরই মধ্যে অনেক বেকার যুবদের, যাঁরা টেট উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাননি, রাজ্যের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চাকরি পাননি, আর এই দরজা ওই দরজা ঘুরে বেড়িয়েছেন একটা চাকরির খোঁজে, তাঁদের জন্যে মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে এসেছে একটি সুসংবাদ। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি জিতলে তাঁদের চাকরির বন্দোবস্ত হবে বলে জানান দিল গেরুয়া শিবির। তবে কী করে হবে সেটা জানতে হলে তাঁদের দেখতে হবে কী ভাবে মোদী ক্ষমতায় আসার আগে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রতি বছর দুই কোটি করে পাঁচ বছরে দশ কোটি বেকারদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরেই ভারতের বেকারত্বের হার বেড়ে হয়ে যায় চার দশকের সর্বোচ্চ ৬.১% যা জানাজানি হওয়ায় মোদী সরকার বিপাকে পড়ে। কারণ এর পিছনে ছিল মোদী সরকারের নোটবন্দি আর পণ্য ও পরিষেবা (জিএসটি) কর চাপাবার সিদ্ধান্তগুলি।
বর্তমানে মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ থেকে কিন্তু এটা জানানো হয়নি যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় করোনা-পূর্ববর্তী ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতের গড় বেকারত্বের হার সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনোমি (সিএমআইই)-র হিসাবে বেড়ে হয় ৭.৬৩% যদিও সেই একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের গড় হার থাকে ৬.৩৬%, যার মানে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের থেকে কম। তাও মোদী স্পর্ধা দেখান বাংলার বেকার যুবসমাজ কে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফুঁসলিয়ে বিজেপি-আরএসএস এর শিবিরে এনে তাঁদের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর পদাতিক সৈনিকে পরিণত করার।
গত সাত বছরে মোদী সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের পুলিশ ও মিলিটারি ছাড়া অন্য সমস্ত খালি পদ পূরণ করা বন্ধ করে দেওয়ায় দেশজুড়ে এক বিরাট আর্থিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল করোনা ভাইরাস এর উৎপত্তির আগেই। গাড়ি শিল্প থেকে শুরু করে বিস্কুট এর মতন পণ্য বা রিয়েল এস্টেট এর মতন ক্ষেত্রে চরম সংকট দেখা দেয় ও লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মসংকোচনের শিকার হন। মোদী সরকার বা বিজেপি তা নিয়ে কোন উদ্বেগ দেখায়নি ও করোনা ভাইরাসের থাবা পড়ার আগে দেশের মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোও বেকারত্ব নিয়ে বেশি কথা বলেনি। রাষ্ট্রীয়-মালিকানাধীন সংস্থাগুলো কে শক্তিশালী করে তাদের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার জায়গায় মোদী সরকার সেগুলো বিক্রি করা শুরু করেছে। ভারতীয় রেল, এয়ার ইন্ডিয়া, এলআইসি, শিপিং কর্পোরেশন থেকে শুরু করে সেল, ভেল, প্রভৃতি বিক্রি করা শুরু হয়েছে। চৈত্র মাসের শুরুর আগেই দেশ জুড়ে চৈত্রের সেল লেগেছে আর তাতে যে বঙ্গের কর্মহীন যুবদের ভাগ্য বদলাবে না তা বলাই বাহুল্য।
মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ থেকে জানানো হয়েছে কৃষকদের জন্যে সুসংবাদ। তাঁরা নাকি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের শাসনের অবসানের পরে বিজেপি জিতলেই পাবেন ফসলের দাম। সেই ২০১৪ সালের প্রতিশ্রুতির কথা আবার মনে পড়লো। ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকের যায় দ্বিগুণ করার নাম করে স্বামীনাথন কমিশনের রিপোর্টের আসল অংশ কে বাদ দিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে কর্পোরেটদের ঢোকার অবাধ সুযোগ করে দিয়ে আজ মোদী দেশজুড়ে কৃষক বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছেন। হরিয়ানা, পাঞ্জাব আর পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ-এর জাঠ অধ্যুষিত জেলাগুলোর থেকে বিজেপি ও আরএসএস কে উৎখাত করেছেন কৃষকেরা নিজের উদ্যোগে। দিল্লীর সীমানায় গত ১০০ দিন ধরে বিদ্রোহের পতাকা উড়িয়ে কৃষকেরা জানান দিলেন যে তাঁরা কোন ভাবেই কর্পোরেট-বান্ধব তিনটি কৃষি আইন বাতিল বাদে ও আইন করে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল কেনার ব্যবস্থা না করলে আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না আর বিজেপি কে উত্তর ভারতে নিশ্বাস নিতেও দেবেন না।
অথচ সেই কৃষকদের বাদ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী আর দলিত কৃষকদের বাড়িতে যখন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা ভুঁড়ি ভোজ করেন খেতে না পাওয়া কৃষকের ঘাড় ভেঙে, তখন গ্রামের মানুষ বোঝেন যে কী ভাবে বিজেপি তাঁদের মঙ্গল করতে চায়। তাঁরা বোঝেন কী ভাবে বিজেপি তাঁদের জমি রক্ষা করবে যখন তাঁরা দেখেন শুভেন্দুর মতন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ঘাড়ে চেপে রাজনীতিতে পরিচিত হওয়া জোতদার বাড়ির ছেলে, দিলীপ ঘোষের মতন আর এক জোতদারের ছেলের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে ঘোষণা করেন যে কেন নন্দীগ্রাম থেকে সিঙ্গুরের কর্পোরেট আগ্রাসন এর বিরুদ্ধে কৃষকের জমি রক্ষার লড়াই ভুল ছিল।
পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম-বিদ্বেষী লোকেদের কাছেও সুসংবাদ এনেছে মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ। জানা গেছে যে রান্নার গ্যাসের দাম ৯০০ টাকা সিলিন্ডার হয়ে নির্বাচনের পরে ১,০০০ টাকা হয়ে গেলেও, পেট্রোলের আর ডিজেলের দাম ১০০ টাকা লিটার হলেও, আলু থেকে চাল, সর্ষের তেল থেকে কাঁচা মরিচের দাম চরম ভাবে বেড়ে গেলেও বিজেপি আসলে রাজ্যের মুসলিমেরা শায়েস্তা হবে। তাঁদের যে “বাড়” বেড়েছে তা কমবে। শুভেন্দুর ভাষায় মমতা যেমন ভাবে নাকি বাংলাদেশী মুসলিমদের আর রোহিংগাদের খালা আপনজন হয়েছেন তা নাকি আর হবে না আর জাতীয় নাগরিকত্ব পঞ্জী (এনআরসি) করে সব মুসলিমদেরই তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
অথচ সমস্যা হল নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, ২০০৩ (সিএএ ২০০৩) এর মাধ্যমে বেনাগরিক হয়ে রয়েছেন হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে কোটি কোটি মানুষ যাদের কাছে ১৯৪৮ সালের জুলাই মাসের আগের ভারতে থাকার দলিল নেই। এর ফলে এনআরসি হলে নাগরিকত্ব হারাবেন সকলেই আর যেহেতু সিএএ ২০১৯ এ, যাকে খুড়োর কলের মতন ঝুলিয়ে মোদী ও তাঁর সাগরেদ অমিত শাহ রাজ্যের অমুসলিম উদ্বাস্তু আর মতুয়াদের বোকা বানাচ্ছেন, মাত্র ৩১,৩১৩ জন ছাড়া আর কারুরই নাগরিকত্ব-এর জন্যে আবেদন করারও কোন সুযোগ থাকবে না তাই তাঁরাও যে বেনাগরিক সস্তা শ্রমিক হবেন সেটা মানতে এই লোকেদের একটু সময় লাগবে। আর সেই সময়টুকুতে একটু বেশি দামে তাঁদের পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস বা কেরোসিন কিনে চালাতে হবে। যে চাল মোদী সরকার ঢালাও বিজ্ঞাপন করে বিনামূল্যে দিয়েছিল সেই চালের ধানের মূল্য যে সস্তা শ্রমিক বানিয়ে গরিব মানুষের থেকে কড়ায় গন্ডায় আদায় করা হবে সেটা জানলে অনেকেই হয়তো আঁতকে উঠবেন।
তবুও মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ কে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি সরগরম হবে। চায়ের দোকানের তর্কে বাঙালি সাবর্ণ ভদ্রলোকেরা একদিকে তুফান তুলবেন, ঠিক তেমনি গরিব, দিনমজুর, কৃষক, দলিত, আদিবাসী জনগণ বাঁচার একটু রসদ খোঁজার অভিলাষ নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকবেন কারণ তৃণমূল বা বিজেপি, বামফ্রন্ট বা কংগ্রেস, কেউই তাঁদের আপন না জেনেও তাঁদের কাছে কোন বলিষ্ঠ রাজনৈতিক বিকল্প না থাকায় তাঁদের এই ডাকাতদের বখরা নিয়ে ঝামেলার অংশ হতেই হবে। আর যদি তাঁদের সেই পরিণতির দিকে না ঠেলে দিয়ে বরং তাঁদের সংগঠিত করে ফ্যাসিবাদ কে উচ্ছেদ করার, সামন্ততন্ত্র আর মুৎসুদ্দি পুঁজিবাদ কে উচ্ছেদ করার সংগ্রাম করতে হয়, তাহলে অবশ্যই ফ্যাসিবিরোধী প্রগতিশীল শক্তিগুলো কে এগিয়ে এসে নিজেদের ঐতিহাসিক দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে নির্বাচনী পাঁকের বাইরে। রুটি-রুজি আর ইজ্জতের জন্যে রাজনৈতিক সংগ্রাম কে গড়ে তুলে। তা না হলে মিঠুনের মতন হাজার হাজার কালসাপ বঙ্গের মানুষ কে ছোবল মারবে মোদী আর হিন্দুত্বের পোষ্য হয়ে।