পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার অখ্যাত এলাকা শীতলকুচি-র নাম আজ মোটামুটি সবাই জেনে গেছে ভোট করাতে আসা কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর গুলিতে চার জন পরিযায়ী শ্রমিক মারা যাওয়ার পর। এই শ্রমিকেরা কেরলে কাজ করতেন; গ্রামে এসেছিলেন ভোট দিতে।এর পর পঞ্চম দফাতেও দেগঙ্গা বিধানসভার চাকলা পঞ্চায়েতের কুরুলগাছা গ্রামে ২১৪ ও ২১৫ নং বুথে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। যদিও হতাহতের কোনো খবর নেই। অন্যদিকে গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাহিনী।
পশ্চিমবঙ্গের চতুর্থ দফা নির্বাচন শেষ হওয়ার সাথে অন্য চারটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই আরও চার দফা নির্বাচন বাকি আছে। ফলে চতুর্থ দফা থেলে গুলি চালানো বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাড়াবাড়ির প্রভাব অন্য রাজ্যের নির্বাচনে পড়ার কথা নয়। এটা ঠিক যে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী হিংসা, বুথ জ্যাম বা দখলের ইতিহাস আছে। এবার শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়, তৃণমূল কংগ্রেস থেকে আসা নেতা ও কর্মীদের জোরে ভারতীয় জনতা পার্টিও (বিজেপি) একই প্রক্রিয়া নিয়েছে।
এই নির্বাচনী হিংসা বন্ধ হওয়া দরকার। কিন্তু নির্বাচনী হিংসা রোখার অজুহাতে নাগরিকদের উপর গুলি চালিয়ে তাঁদের হত্যা করা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় কাজ ও দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে।বিশেষত যখন এই অভিযোগও উঠছে যে বিজেপি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দলীয় কর্মীর কাজ করাচ্ছে।
এই প্রথম নির্বাচন করাতে এসে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি চালালো, এমনটা নয়। এর আগে, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় যাদবপুর কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) [সিপিআই(এম )] এর আঞ্চলিক কমিটি-র এক কর্মীর মৃত্যু হয়। যদিও এই ঘটনাটাকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখা হয়েছিল ও সামগ্রিক ভাবে নির্বাচন কমিশনের দিকে আঙুল তোলা হয়নি, কিন্তু এই বার শীতলকুচিতে গুলি চালানোকে আদৌ বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা উচিত নাকি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা বা নীতি হিসেবে দেখা উচিৎ, সেটা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ কমিশনের আচরণই তৈরি করেছে।
১১ই এপ্রিল আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে যে প্রথম দফার নির্বাচনে ছয়টি, দ্বিতীয় দফায় ১৮টি, ও তৃতীয় দফায় ১৩৪টি অভিযোগ কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তোলা হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কমিশনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে বামপন্থীরা তেমন অভিযোগ না করলেও তৃণমূল কংগ্রেস এবং খোদ মমতা বন্দোপাধ্যায় সহ তৃণমূল প্রার্থীরা বার বার কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং কমিশনের বিরুদ্ধে বিজেপি-র হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলে আসছে।।
প্রথম দফার নির্বাচন থেকেই টিভির পর্দায় দেখা যাচ্ছে যে কিছু গ্রামবাসী বা তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকরা অভিযোগ করছেন যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নাকি তাঁদেরকে বিজেপি কে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। চতুর্থ দফা নির্বাচনে খোদ সোনারপুর দক্ষিণ এর তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী লাভলী মৈত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজেপি-র পক্ষে কাজ করার অভিযোগ আনেন। পঞ্চম দফাতেও মধ্যমগ্রাম দিগবেড়িয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে বারাসতের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোট প্রভাবিত করার অভিযোগ করেছেন। প্রবীণদের রাস্তা থেকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া, বুথে অবাধে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ করেছেন তিনি।নির্বাচন কমিশন বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন সাংসদ।
গত ১১ই এপ্রিল পিপলস রিভিউ বাংলা-র তরফ থেকে আমি কথা বলি মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর কর্মী আলতাফ আহমেদের সাথে। তিনি নিজে একজন স্কুল শিক্ষক এবং দীর্ঘদিনের ভোট কর্মী। আহমেদ আমাদের জানান যে এই বারে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আলাদা মেজাজ দেখা যাচ্ছে। প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়াই বুথের ভিতর ঢুকছে বের হচ্ছে। কে কখন কোন গাড়িতে যাবে ইত্যাদি সব সিদ্ধান্তই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিচ্ছে। হাবে ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে তারা প্রিসাইডিং অফিসারের উপরে, ভোটে তারাই শেষ কথা।
আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার অধিকার একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। সরকারি সশস্ত্র বাহিনী যদি আক্রান্ত হয়ে তবে আত্মরক্ষার জন্য কিছু ধাপ অতিক্রমের পরে (সাবধান করা, লাঠিচার্জ, হাওয়ায় গুলি, পায়ে গুলি) বাহিনী গুলি চালাতে পারে এটাও সাধারণ জানা কথা। কিন্তু হঠাৎ ২৯ মার্চ দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশন আক্রান্ত হলে গুলি চালাবার হুকুম জারি করে। আলাদা করে আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালাবার হুকুমজারি করা নিঃসন্দেহে অন্য গুরুত্ব বহন করে না কি ?
অন্যদিকে শীতলকুচির গুলি চালানোর ঘটনার পরে নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনীর পক্ষে দাঁড়ায়। বাহিনী এবং কমিশনের দাবি ৩০০ জন গ্রামবাসী নাকি আক্রমণ করেছিল, বন্দুক ছিনতাই করতে এসেছিল, তাই আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে হয়েছে। যদিও গুলি চালিয়ে মেরে ফেলার আগে লাঠিচার্জ, শূন্যে গুলি, পায়ে গুলির কোনো ঘটনার কথা কিন্তু উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাতে পারেনি। শীতলকুচি-র ভিডিও বলে যে দুটো ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেখানে কোথাও ৩০০ জন লোকের জমায়েত, রাইফেল ছিনতাই, লাঠিচার্জ, ইত্যাদি, দেখা যাচ্ছে না।
শীতলকুচির ঘটনার পরে বিভিন্ন এলাকায় ভোট কর্মী হিসেবে কর্মরত স্কুল শিক্ষকরা নিজেদের ফেসবুক পোস্টে একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি, বিভিন্ন জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালাবার নির্দেশে আগাম সই করে রাখতে বার বার মানসিক চাপ দেয়। জলপাইগুড়ির স্কুল শিক্ষক অভিষেক ঝাঁ লেখেন “যে বাহিনী সুরক্ষা দেওয়ার ছুতোয় বুথে পৌঁছানো মাত্র ফায়ারিং অর্ডারে আগাম সই করে রাখতে চাপ দেয়, সই না করে রাখলে ‘যে কিছু ঘটে যেতে পারে, তখন কিন্তু আমাদের দায় নয়’ কথাটি আধঘন্টা অন্তর অন্তর বলতে থাকে; তাদের প্ল্যানড ব্লাড থার্স্ট নিয়ে যদি আপনার মনে এক ফোঁটাও সন্দেহ আসে জানবেন যে আপনিও ব্লাড থার্স্টি।”
ঝাঁ-র পোস্টে অন্যান্য ভোট কর্মীরাও তাদের একই অভিজ্ঞতার কথা জানান। এমনকী চাপ দেওয়ার কেন্দ্রীয় বাহিনীর দায়িত্বশীলরা সাম্প্রদায়িক ঘৃণার প্রকাশ ঘটান বলে অনেকের অভিযাগ। এরকমও ওয়াটাসাপের স্ক্রিন শট এসেছে যেখানে একজন আতঙ্কিত প্রিসাইডিং অফিসার তাঁর বন্ধুকে জানাচ্ছেন যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তারা তাঁর উপর চাপ তৈরি করে গুলি চালাবার নির্দেশে সই করিয়ে নিয়েছে।
শীতলকুচির ঘটনাকে যখন তৃণমূল-বাম-কংগ্রেস সহ রাজ্যের বুদ্ধিজীবীরা নিন্দা করেছে তখন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ বিজেপি নেতারা বিভিন্ন সভায় আরও অনেক শীতলকুচি ঘটাবার হুমকি দিয়েছেন। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বা তরুণ জ্যোতি তিওয়ারী আবার কম মৃত্যু হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর সমালোচনা করেছে। সিপিআই(এম) নেতারা গুলি চালাবার ঘটনাকে নিন্দা করলেও এর সাথে বন্দোপাধ্যায়ের ‘উস্কানিমূলক’ ভাষণ কে দায়ী করেছে যেখানে বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করতে। এতে গুলি চালাবার ঘটনাকে কোথাও ঘুরিয়ে লঘু করে দেওয়া হয় কারণ কেন্দ্রীয় বাহিনী তো আর পাড়ার গুন্ডা নয় যে উস্কানিতে গুলি চালিয়ে দেবে! গণতন্ত্রে এত সহজে কি নাগরিকদের উপর গুলি চালানো যায়?
পঞ্চম দফার ভোটের আগের দিন বন্দোপাধ্যায়ের সাথে শীতলকুচির তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পার্থ প্রতিম রায়ের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। এই ফোনালাপে শোনা যাচ্ছে বন্দোপাধ্যায় শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে খোজ নিচ্ছেন এবং গুলি চালানোয় অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ভাল উকিল দিয়ে মামলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। যা অত্যন্ত স্বাভাবিক। সশস্ত্র বাহিনী গুলি চালালেও সেটা খুনের মামলাই হয়। আর মৃতের পরিবারের ন্যায় পাওয়ার অধিকারও আছে।
এই অডিও টেপ ফাস হওয়ার পর বিজেপির কুখ্যাত আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য সাংবাদিক সম্মেলন করে বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ আনেন। যেন সশস্ত্র সরকারি বাহিনী দেশের আইন এবং জনগণের প্রশ্নের উর্ধ্বে! যেন গুলি চালিয়ে নাগরিকদের খুন করাটা সরকারি বাহিনীর জন্মগত অধিকার! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাকি বিজেপি নেতারাও এই সুরেই অডিও টেপ প্রসঙ্গে বন্দোপাধ্যায় কে আক্রমণ করেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল বন্দোপাধ্যায়ের সাথে তার দলের নেতার ব্যক্তিগত ফোনালাপ বিজেপির হাতে গেল কী ভাবে? ভারতবর্ষের কোন রাজ্যে কারুর ফোন ট্যাপ করতে গেলে আইনী কিছু পদক্ষেপ নিতে হয় আর তার সাথে গৃহমন্ত্রকের অনুমোদন লাগে। একমাত্র সন্দেহজনক বা জাতীয় সুরক্ষার পক্ষে বিপজ্জনক লোকেদেরই টেলিফোন ট্যাপ করা যায় আইনী প্রক্রিয়া পালন করে।
পশ্চিমবঙ্গের গৃহমন্ত্রী বন্দোপাধ্যায় নিজে। তাহলে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর টেলিফোন ট্যাপ হল কী করে? আর যদি এই কাজ কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ করিয়ে থাকেন তাহলে প্রশ্ন উঠবে কোন আইনের সাহায্যে তিনি এই কাজ করেছেন? কী এমন অভিযোগ আছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নামে যে তাঁর ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে? আর যদি নিয়ম ভেঙে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ফোন শাহ ট্যাপ করতে পারেন তাহলে তো তিনি যে কোন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের, সাধারণ মানুষেরও ফোন আইন কে কাঁচকলা দেখিয়ে ট্যাপ করতে পারেন। ভাবুন দেশের গৃহমন্ত্রক আপনার অজান্তেই আপনার ফোনে আড়ি পাতছে।
এবার যদি ধরেও নেওয়া গেল যে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রক শাহের হুকুমে বন্দোপাধ্যায়ের ফোন আর চারটে জঙ্গী বা স্মাগলারের মতন ট্যাপ করছে এবং এই কথোপকথন তারা রেকর্ড করেছে। তাহলে এই অডিও টেপ বিজেপি কে দিল? তাহলে কি দেশের সরকার আর বিজেপি-র সংগঠনের মধ্যে কোন চীনের প্রাচীর আর দাঁড়িয়ে নেই? তাহলে কি ‘গঙ্গাধরই শক্তিমান’ গোছের ফর্মুলা মেনে এটা স্বীকার করতে হবে যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারই বিজেপি আর বিজেপিই সরকার?
১৭ই এপ্রিল বন্দোপাধ্যায় তাঁর ব্যাক্তিগত কলরেকর্ড ফাঁস করার ঘটনার সিআইডি তদন্তের কথা বলেন। এর পর সমস্যা বুঝে বিজেপি নেতৃত্ব তড়িঘড়ি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন করতে বন্দোপাধ্যায়ই নাকি এই অডিও টেপ ফাঁস করেছেন। তবে মজার ব্যাপার হল বিজেপি-র পেটোয়া টিভি৯ বাংলা সহ বিভিন্ন মিডিয়া তাদের ইউটিউবের ডেস্ক্রিপশনে জানিয়েছে এই অডিওটি বিজেপির তরফে ফাঁস করা হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে এটা বন্দোপাধ্যায়ের গলা। যদিও এই টেপের সত্যতা কোন সংবাদমাধ্যম যাচাই করেনি।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এই ভোটে অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছে সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী।নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকারের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিল্লীর রাইফেল। পশ্চিমবঙ্গে এযাবৎকাল পর্যন্ত লেখক সরকারি সশস্ত্র বাহিনীর এই রকম বাড়াবাড়ি ভূমিকা নির্বাচনের ময়দানে অন্তত দেখেননি। প্রশ্ন থেকে যায়, এই ভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দিয়ে ভোট করিয়ে বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন ভারত কি ক্রমশ সংসদীয় সেনা-শাসিত রাষ্ট্র হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে?