Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wp-hide-security-enhancer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
অতঃপর আফগানিস্তান: তালিবানের উথ্বান ও উৎকণ্ঠা বনাম তথ্য | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

বর্তমানে সবাই আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ হয়েছেন। মূলধারার সংবাদ মাধ্যমেও দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট, বেকারত্ব, রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা নিয়ে খবর না করে সেই ২০০১ সালের মতন ঝুড়ি ঝুড়ি সুত্রহীন তথ্য দিয়ে বোঝানো হচ্ছে যে আফগানিস্তানে তালিবান জিতে যাওয়ায় কত ক্ষতি হচ্ছে সেই দেশের মানুষের। মজার কথা, এই ইসলাম বিদ্বেষ মেশানো বিষাক্ত প্রচার কিন্তু শুধুই ভারতের হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের ভক্তরা করছে না, তথাকথিত “বাম” আর “উদারনৈতিক” শিবিরের বুদ্ধিজীবীরাও সেই একই হেঁসেলের রান্না পরিবেশন করছেন। 

সত্যিই কি আফগানিস্তান মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পদানত হয়ে দুর্দান্ত রকমের স্বাধীনতা ভোগ করছিল? মার্কিন আর ইউরোপীয় শক্তির উপনিবেশ হিসাবে আফগানিস্তান কি সত্যিই একটি স্বাধীন দেশ ছিল? আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় ফিরে আসায় নারী স্বাধীনতা শেষ হয়ে গেছে বলে যাঁরা শোরগোল করছে, তাঁরা কি বিশ্বাস করেন যে মার্কিন-ন্যাটো শাসনে আফগান নারীরা কি এক স্বর্গ রাজ্যে বাস করছিলেন? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আফগানিস্তানে তালিবান যে দীর্ঘ দুই দশক ধরে বিশ্বের তাবড় সামরিক শক্তির সাথে যুদ্ধ করে ক্ষমতা দখল করেছে, সেটা কি ভুল হয়েছে? তাঁদের কি অবিলম্বে ক্ষমতা ত্যাগ করা উচিত? 

আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা দখল করার আগে, ফ্রিডম হাউজের মতন পশ্চিম-ঘেঁষা “স্বাধীনতা” মাপা সমীক্ষা, যাঁরা ভারতের মতন হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের শাসনাধীন একটি রাষ্ট্র কেও পূর্ণ স্বাধীনতা বলে ঘোষণা করে, তাঁরাও ২০০৫-২০০৮ সালে শুধু আফগানিস্তান কে অর্ধ স্বাধীন বলে চিহ্নিত করার পর থেকেই দেশটিকে “নট ফ্রি” বা স্বাধীন নয় বলে চিহ্নিত করে আসছে। “রিপোর্টার্স সানস বর্ডারস” (সীমানাহীন সাংবাদিক) এর সমীক্ষা অনুসারে, ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে যদিও ভারতের ১৪২-র চেয়ে ভাল অবস্থায়, ১২২-এ, আফগানিস্তানের স্থান, তবুও বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় তা অনেক নীচে।  

বিলেতের দ্য ইকোনমিস্ট এর ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ডেমোক্রেসি ইনডেক্স ২০১৯ এ যখন ভারতের মতন হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদের শাসনাধীন রাষ্ট্র ৫১ নম্বরে ছিল, তখন আফগানিস্তান ছিল ১৩৯-এ, অর্থাৎ স্বৈরতন্ত্রের অধীন। যদি কেউ বলে যে ১৯৭৯ সাল থেকে, সোভিয়েত আগ্রাসনের সাথে সাথে, আফগানিস্তানে স্বৈরতন্ত্রের পত্তন হয়েছে তাহলে তাঁরা তার আগের দাউদের শাসনকাল আর রাজা জাহির শাহের শাসনকালের স্বৈরতন্ত্র কে কী বলবেন?  

নারী স্বাধীনতার কথা বললে, আমেরিকার তল্পিবাহক সৌদি আরব আর জায়নবাদী ইজরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনের নারীরা কতটা স্বাধীনতা ভোগ করেন? কে তাঁদের কাছে জবাব চান? আফগানিস্তানে তালিবান ২০২১ সালে যুদ্ধে জিতে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার আগে, বিলেতের বিবিসি কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তালিবানদের মুখপাত্র সুহেল শাহীন ও পরে তালিবান নেতৃত্ব কাবুলে জানান দেন যে তাঁরা নারীদের শিক্ষা বা পেশাগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন না। সৌদি আরবে এখনো নারীরা পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাইরে যান না। চাকরি করা দূরের কথা। 

১৯৯৬-২০০১ এর শাসনকালে আফগানিস্তানে তালিবান সরকারের অত্যাচারের ঘটনা যে ভাবে রঙ চড়িয়ে বাজারি সংবাদ মাধ্যম প্রচার করেছিল, বিশেষ করে যে ভাবে ব্রাক্ষণ নারী সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ইসলাম বিদ্বেষে পরিপূর্ণ কাহিনী বাজারে ছড়িয়ে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের মুসলিমদের সম্পর্কে তৈরি ন্যারেটিভ কে সমর্থন করেছিলেন, তার ফলে তালিবান কে নারী স্বাধীনতা হননকারী হিসাবেই বিশ্বে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ, তালিবান ক্ষমতায় আসার আগে, ২০১৯ সালে, জাতি সঙ্ঘের বিকাশ প্রকল্পের (ইউএনডিপি) মানব বিকাশের তালিকায় (হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স বা এইচডিআই)  ১৮৯টি দেশের মধ্যে আফগানিস্তানের স্থান ১৬৯ ছিল, আর লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষেত্রে ১৬২ এর মধ্যে ১৫৭ ছিল।  

মার্কিন-ন্যাটো শাসনকালে, ২০১৯ সালে, মাত্র ১৩.২% নারী মাধ্যমিক অবধি শিক্ষা লাভ করতেন। সেই তুলনায় ৩৬.৯% পুরুষ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করতে পারতেন। যখন ১৫ বছর বয়সের উর্দ্ধে ৭৪.৭% পুরুষ দেশে শ্রম বিক্রি করছিলেন ২০১৯ সালে, তখন মাত্র ২১.৬% নারী বাড়ির বাইরে কাজ করছিলেন। তাহলে তালিবান আমলে কী এমন অবনতি হতে পারে এই পরিস্থিতির?  

এই সময়েই কিন্তু ভারতের স্থান লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষেত্রে ১২৩ ছিল। ভারতের মাত্র ২৭.৭% নারী, ৪৭% পুরুষের তুলনায়, মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করতে পেরেছিলেন। এই ২০১৯ সালেই কিন্তু ১৫ বছর ও তার উপরের ৭৬.১% পুরুষের তুলনায় মাত্র ২০.৫% ভারতীয় নারী কর্মরত ছিলেন। আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসার ফলে তাই নারী স্বাধীনতা শিকেয় উঠেছে, এই কথা ভারতীয় উচ্চ জাতির বুদ্ধিজীবীদের বিলাপ করা কি দ্বিচারিতা নয়? 

আবার যদি নারীদের প্রতি হওয়া অত্যাচার ও অপরাধের সমীক্ষা দেখি, তাহলে, মার্কিন-ন্যাটো শাসনকালে কী অবস্থা ছিল আফগানিস্তানের? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন (হু) ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছে বিশ্বের যে ১৯টি দেশে জীবনসঙ্গীর/অন্তরঙ্গ সঙ্গীর দ্বারা ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীর উপর অত্যাচার সব চেয়ে বেশি (৪০-৫৩%) তাদের মধ্যে আফগানিস্তানও ছিল (৪৬%) আর বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্ট, ২০১২ সালের ইউনিসেফের পরিসংখ্যান ব্যবহার করে দেখিয়েছে যে ২-১৪ বছর বয়সী ২২,০৪০ জন আফগান মেয়ের উপর করা সমীক্ষায় পাওয়া গিয়েছিল যে ৬৮% মেয়েদের শারীরিক ভাবে অত্যাচারিত হতে হয়েছে পারিবারিক শাসনের নামে, ৩৭% মেয়েকে চরম শারীরিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল। ২০১২ সালের ২-১৪ বছর বয়সী মেয়েদের বেশির ভাগই তালিবান শাসনের অবসানের পরে, মার্কিন-ন্যাটো দখলদারি আর ঔপনিবেশিক শাসনকালেই জন্মেছিলেন।  

এ ছাড়াও, আফগানিস্তানের সামন্ততান্ত্রিক সমাজে নারী কেনা বেচা আজও একটি প্রথা, যা এক কালে তালিবান গায়ের জোরে বন্ধ করেছিল ১৯৯৬-২০০১ সালে। মার্কিন-ন্যাটো শাসনকালে তা চলে একই ভাবে। খরিদ করা নারীদের যে কোন সময়ে হত্যা করার অধিকার থাকে তাঁদের মালিকদের। যেমন দাই কুন্ডি রাজ্যে, আফগান ভাষায় একটি কথা প্রচলিত আছে “দা জার খারিদিম, দা সাং মেকশিম” যার অর্থ, আমরা তোকে টাকা দিয়ে কিনেছি আর তোকে পাথর দিয়ে মারবোও। ২০০৮ সালের একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল যে ১১.৫% আফগান নারী ধর্ষিত হয়েছেন। সেটাও তালিবান কালে না। 

একই সময়ে, তালিবান নিষিদ্ধ করেছিল “বাচ্চা বাজি” বা বাজার থেকে কেনা বালকদের সাথে সমকাম করা। শিশুদের যৌন দাস বানানোর প্রথাও তাঁরা সেই সময়ে বন্ধ করেছিলেন।  

অথচ তথ্য নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, ভারতের বুদ্ধিজীবীরা আফগান নারীদের অধিকার নিয়ে আজ বড় চিন্তিত। তালিবান ক্ষমতায় এসে নারীদের উপর অত্যাচার করছে, পশ্চিমী মিডিয়ার এই সুত্রহীন সংবাদ পরিবেশন কে ধর্মীয় বাণী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে তাই নিয়ে মাতামাতি শুরু করেছেন এই বুদ্ধিজীবীরা, বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে।  

যেহেতু তালিবান আজ ইরান, চীন আর রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট হয়ে, নিজের সামন্তবাদী ও সাম্রাজ্যবাদের সেবকের চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখেও, আফগানিস্তান কে বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর অন্তর্গত একটি কেন্দ্রীভূত ও মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর ও তাই যেহেতু তাঁরা আজ অন্য যুদ্ধবাজ সামন্তপ্রভুদের, হয় যুদ্ধ দিয়ে না হয় কূটনীতির মাধ্যমে, প্রভুত্ব খতম করার চেষ্টা করছে, তাই তাঁদের অবশ্যই ধর্মীয় বিধি নিষেধ কে বাজারের স্বার্থেই শিথিল করতে হবে, একটি বাজার-মিত্র রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। ফলে এই তালিবান আজ আফগানিস্তানে ১৯৯৬-২০০১ এর মডেল অনুসরণ করে শাসন করতে পারবে না। 

আর যদি কোনো বুদ্ধিজীবীর এই নিয়ে সমস্যা থাকে যে কেন আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা দখল করলো, তাহলে তাঁদের কে জিজ্ঞাসা করা উচিত, তাহলে আফগানিস্তানে কার ক্ষমতা দখল করা উচিত ছিল? আর তাঁরা কেন তা করতে পারলো না? তার মানে তাঁদের হয় রাজনৈতিক ভাবে বা সাংগঠনিক ভাবে কোনো খামতি ছিল। তাঁরা নিশ্চয়ই মার্কিন-ন্যাটো জোটের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অপারগ থেকেছেন। তাহলে কী ভাবে তাঁদের ক্ষমতা দখল করা সম্ভব হতো? 

তালিবান সামন্ততান্ত্রিক হলেও, তাঁরা একটা বৃহৎ সামরিক শক্তিকে, বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে, দীর্ঘ ২০ বছর যুদ্ধ করে হারিয়েছেন। আজ যদি ইরান, চীন, রাশিয়া, প্রভৃতি আফগানিস্তানে তালিবান কে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করছে, তবুও এই শক্তিগুলো জানে তারা যদি জোর করে, প্রত্যক্ষ ভাবে ঔপনিবেশিক শাসন জারি করে আফগানিস্তানে, তাহলে ব্যাপক জনরোষের চাপে তাদের অবস্থাও সোভিয়েত বা মার্কিন-ন্যাটো জোটের মতন হবে। ফলে আফগানিস্তানে তালিবান ততদিন শাসন করবে, যতদিন না কোনো প্রগতিশীল শক্তি, কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি যুদ্ধ করে তাদের পরাস্ত না করে আর ক্ষমতা দখল না করে। 

আজ আফগানিস্তানে তালিবান যুদ্ধে জিতে ক্ষমতায় এসেছে। কোনো ভাবেই তাঁদের আজ বিদেশী সাহায্য ছাড়া—মার্কিন সাহায্য ছাড়া—নর্দ্যান অ্যালায়ন্স (উত্তর জোট), যা আর একটি সামন্ত প্রভুদের সংগঠন, হারাতে পারবে না। আফগানিস্তানে এই মুহূর্তে তালিবান-বিরোধী কোনো রাজনৈতিক ভাবে প্রগতিশীল শক্তি নেই। ফলে, দক্ষিণ কলকাতার ড্রয়িং রুমে বসে বা খাটে শুয়ে, বিজলী পাখার হাওয়া খেতে খেতে আফগান জনগণের কী করা উচিত আর কেন তালিবান খারাপ সে বৃত্তান্ত না দিয়ে অন্য কিছু করেও উচ্চ জাতির, উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্ত বাঙালি রাতের খাবার হজম করতে পারবেন।

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla