Notice: Undefined property: stdClass::$height in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-content/plugins/youtube-embed-plus/youtube.php on line 3124

৪ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে প্যারালিম্পিক। ঠিক তার আগের দিন, ৩ মার্চ, প্যারালিম্পিক কমিটি রাশিয়া এবং বেলারুশের খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। রাশিয়ার সিনেমা মুক্তি বন্ধ করার ঘোষণা করেছে ডিজনি, সোনি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স। সংবাদ সংস্থা বিবিসি রাশিয়ার ক্লায়েন্টদের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করেছে। এ ছাড়াও বহু দেশ এবং প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাশিয়াকে বয়কট করেছে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিবাদে। নিশ্চিত ভাবে এই পদক্ষেপ গুলো যুদ্ধ বন্ধে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে রাশিয়াকে চাপে ফেলার প্রকট কৌশল।

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ইউরোপ আমেরিকার লিবারেল বিবেকের প্রতিনিধি এই প্রতিষ্ঠানগুলো কি লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ইত্যাদি দেশে আমেরিকা বা উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংগঠন (ন্যাটো) বাহিনীর যুদ্ধ অভিযানের বিরুদ্ধে এই রকম কোনো পদক্ষেপ নিয়ে ছিল?
মিথ্যা অভিযোগে ইরাক আক্রমণ করে ৪ লাখ ৬০ হাজার, আফগানিস্তানের ১ লাখ ৭৬ হাজার মানুষকে হত্যার পরে, মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে আকাশ থেকে কার্পেট বোম্বিং করে গোটা সভ্যতা গুড়িয়ে দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে শরণার্থী হতে বাধ্য করার জন্য কি বিবিসি আমেরিকানদের লাইসেন্স বিক্রি বন্ধ করেছিল কোনো দিন? কোনো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান আমেরিকা বা ন্যাটোভুক্ত দেশকে টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে? বিশ্ব মানবিকতার জ্যাঠা মশাইরা কখনো আমেরিকাকে এক ঘরে করার ডাক দিয়েছে?

কিন্তু কেন এই পার্থক্য? নির্দিষ্ট পুঁজিবাদী শিবিরের প্রতি পক্ষপাতিত্ব ছাড়াও অন্য একটা কারণ অবশ্যই ইউরোপ আমেরিকার মিডিয়াগুলো তাদের প্রতিবেদন সমূহে নিজেরাই ঘোষণা করেছে। সিবিএস নিউজের সাংবাদিক বলেছেন “এটা ইরাক, আফগানিস্তান নয়, এটা তুলনামূলক সভ্য, তুলনামূলক ইউরোপীয় শহর”।

কেন পোল্যান্ডে এশিয়ার থেকে যুদ্ধ জনিত কারণে আসা শরনার্থীদের সাথে ইউক্রেনীয়দের পার্থক্য করা হচ্ছে তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এনবিসির প্রতিনিধি কেলি কোবিএলার বক্তব্য, “স্পষ্টত বলতে গেলে বলা দরকার, তাঁরা সিরিয়া থেকে আসা কোনো শরণার্থী নয়, তাঁরা ইউক্রেনের… তাঁরা খ্রিস্টান, তাঁদের চামড়া সাদা। তাঁরা অবিকল আমাদের মতন।”

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ব্রিটিশ সদস্য ড্যানিয়েল হান্নান দ্য ডেলি টেলিগ্রাফে লিখেছেন “তাঁরা তো অবিকল আমাদেরই মতন। এটি অতিশয় বেদনাদায়ক। ইউক্রেন একটি ইউরোপীয় দেশ। তার বাসিন্দাদের (আমাদের মতন) নেটফ্লিক্স, ইনস্টাগ্রাম রয়েছে।” এই রকম অসংখ্য পশ্চিমী (অ)সভ্যাতার নিদর্শন পাওয়া যাবে সংবাদমাধ্যম গুলোর খবর ঘাঁটলেই

বলা হয়, ব্রিটিশ শাসিত ভারতে এক সময় কিছু অভিজাত রেস্তোরাঁর বাইরে লেখা থাকতো “ভারতীয় এবং কুকুরদের প্রবেশ নিষেধ”। তথাকথিত উদার গণতান্ত্রিক পশ্চিমী মিডিয়ার ইউক্রেনের সাথে এশিয়ার দেশগুলোর তুলনা টানা সেই জাতিবিদ্বেষী, বর্ণবাদী, উগ্র-দক্ষিণপন্থার পরিচয় নয় কি?

পশ্চিম মিডিয়া এমন সময় তার পক্ষপাতিত্ব এবং দাম্ভিক বর্ণবাদ প্রদর্শনের মেলা বসিয়েছে, যার কিছুদিন আগে ২০ বছরের যুদ্ধের পর আফগানিস্তান থেকে দখলদার আমেরিকান বাহিনীকে ল্যাজে গোবরে হয়ে ফিরে যেতে হল; চীনের বাণিজ্যিক-সামরিক অগ্রগতি ‘সুপার পাওয়ার’ আমেরিকানদের ঢোক গেলাচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলোর বিদেশ নীতিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে; রাশিয়ান বাহিনীর সামরিক অভিযান ন্যাটো কে মিম মেটেরিয়ালে পরিনত করেছে!

পশ্চিমী মিডিয়া এবং সাদা চামড়ার রাষ্ট্রনায়কদের হাবভাব দেখে ভোজপুরি বাণিজ্যিক সিনেমার অভিনেতা রবি কিষাণের একটি জনপ্রিয় সংলাপের কথা খুবই মনে পড়তে পারে “জিন্দেগি ঝান্ড-বা, ফিরভি ঘমন্ড-বা” (জীবনের দফারফা হয়ে গেছে, তবুও দম্ভ অটুট)।

এই সমস্ত বৃহৎ একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির মালিকানাধীন পশ্চিমী মিডিয়া এবং তাদের থেকে নকল করা ভারতীয় মিডিয়ার বড় অংশ আমাদের বুঝিয়েছে ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল রাশিয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসী পাঠিয়ে দখল নিতে চাইছিল, এখন খনি শিল্প সমৃদ্ধ ডনবাস দখল নিতে সামরিক অভিযান শুরু করেছে।

ইউক্রেনে নব্য নাৎসিদের সন্ত্রাস শুধুই রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের অপপ্রচার। রাশিয়া এবং পুতিনের নাম করে যেটা ঢেকে দেওয়া হচ্ছে সেটা শুধু হাড় হিম করা নাৎসি সন্ত্রাসই নয়, ইউক্রেনের জনগণের সশস্ত্র নাৎসি সন্ত্রাস-বিরোধী প্রতিরোধ, সামনের সারিতে যার নেতৃত্ব দিচ্ছে লেনিনবাদী, সোভিয়েতপন্থী কমিউনিস্টরা।

পশ্চিমী মুন্না ভাই কর্পোরেট মিডিয়া, বুদ্ধিজীবীগণ এবং তাদের ভারতীয় সার্কিটরা এরকম একটা ধারণা প্রচার করেছে যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলোতে নাকি পূর্বের অপশাসনের জন্য এখন আর কমিউনিস্টদের খুজে পাওয়া যায় না, সবাই নাকি আমেরিকান নয়া উদারবাদী পথে যাত্রা করেছে।
কিন্তু বাস্তব হল রাশিয়া, ইউক্রেন ইত্যাদি দেশে কমিউনিস্ট পার্টি বেশ শক্তিশালী, শ্রমিক সংগ্রামে এবং নির্বাচনের ফলাফলে তার পরিচয় মেলে।

পূর্বতন সোভিয়েত ভুক্ত দেশগুলোতে আরেকটা বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, এই সমস্ত দেশের অকমিউনিস্ট নেতাদেরও একটা অংশ প্রবল ভাবে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতিস্বীকার করতে নারাজ। বিশেষত শ্রমিক শ্রেণী ১৯৯১ সালের পর ক্ষমতা হারিয়ে দেশের যে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করেছে তাতে পুঁজিবাদের সাথে সমাজতন্ত্রের স্পষ্ট পার্থক্য তারা টানতে পারছে।

পোল্যান্ড, রোমানিয়া সহ পূর্বের কমিউনিস্ট শাসিত বহু দেশে কমিউনিস্ট প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে বা নিষিদ্ধ করেও গণবিক্ষোভের চাপে পিছিয়ে আসতে হয়েছে।কমিউনিস্ট প্রতীকের সাথে নাৎসি প্রতীক নিষিদ্ধ করে লিবারাল-সুলভ নিরপেক্ষতার ভন্ডামি করা হয়েছে। কারণ নাৎসিরা উগ্র জাতীয়তাবাদী, সবাই নিজের জাতিকেই সেরা বলে ঘোষণা করে, প্রত্যেক দেশে নাৎসিদের প্রতীক আলাদা, এমন কি একই দেশে বিভিন্ন নাৎসি দলের বিভিন্ন প্রতীক আছে। সুতরাং স্বস্তিকা চিহ্ন নিষিদ্ধ করলেও ফ্যাসিস্ট/নাৎসিদের কিছুই যায় আসে না।

ভারত সহ পৃথিবীর বহু প্রান্তে নাৎসিরা নিজেদের নাৎসি বলতেও অস্বীকার করে এবং অন্যকে নাৎসি বা ফ্যাসিস্ট বলে আক্রমণ করে। যদিও উগ্র বিভেদকামী মতাদর্শের দূর গন্ধে তাদের চিনতে পারা যায়। অন্যদিকে কমিউনিস্টরা আন্তর্জাতিকতাবাদী হওয়ায়, গোটা পৃথিবীতেই তাঁদের প্রতীকগুলো প্রায় এক।

ইউক্রেনিয়ান বৃহৎ পুঁজিপতিদের সমর্থনে আমেরিকা এবং কিছু ইউরোপীয় শক্তির গুপ্তচর বাহিনীর সাহায্যে, ২০১৪ সালের সংগঠিত অভ্যূথানে (যার পোশাকি নাম ময়দান বিপ্লব) এর বিরুদ্ধে ব্যাপক গণ বিক্ষোভ শুরু হয় এবং গণ ভোটের দাবি করা হয়। এই বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিলো কমিউনিস্টরা।

২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪তে, ইউক্রেনের পার্লামেন্টে সংখ্যালঘু রুশ জনজাতি অধ্যুষিত প্রদেশগুলোতে রুশ ভাষার ব্যবহার কমিয়ে আনার প্রস্তাব আসে। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ তৈরি হয়।

ইউক্রেনের কমিউনিস্ট পার্টি রুশ সংখ্যালঘুদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন জানায়। ১৩ এপ্রিল ২০১৪, সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে দঃ পূর্ব ইউক্রেনে সেনার ব্যাপক দমন পীড়ন শুরু হয়।
সেই বছরেই মে দিবসে ওডেসা শহর জুড়ে বিশাল বিশাল মিছিল বের হয় কমিউনিস্টদের লাল ঝান্ডা নিয়ে, নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার এবং গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ আরো বাড়তে থাকে।

এই বিক্ষোভের পালটা হিসেবে, পরের দিন, ২ মে, ট্রেড ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ে নাৎসিরা আগুন ধরিয়ে কমিউনিস্টদের জীবন্ত জ্বালিয়ে মারে। যারা পালাতে যায় তাদের লোহার রড, চেন দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অনেকের মাথায় গুলি চালিয়েও হত্যা করা হয়। সরকারি হিসেবে ৪৮ জন ওডেসার এই গণহত্যায় প্রাণ হারায়।

সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা বলছে প্যাট্রিয়ট অফ ইউক্রেন আর সোশ্যাল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি নামক দুই নব্য নাৎসি সংগঠন, যাদের বিরুদ্ধে লাগাতার সংখ্যালঘু এবং শরণার্থীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ আছে, তারা এজভ ব্যাটেলিয়ান তৈরি করে। সশস্ত্র নয়া-নাৎসি স্বেচ্ছাসেবক মিলিশিয়া এজভ ব্যাটেলিয়ান ২০১৪ সালের ক্যু-তে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল।

এই এজভ ব্যাটেলিয়ানের জন্মের সংযোগ আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারকে সাহায্যকারীদের সাথে। ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর এজভ ব্যাটেলিয়ানকে রেজিমেন্টের স্বীকৃতি দিয়ে ইউক্রেনিয়ান ন্যাশনাল গার্ডের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইউক্রেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রেত্রো পোরোসেনঙ্কো প্রকাশ্যেই এজভ ব্যাটেলিয়ানকে ইউক্রেনের “সেরা যোদ্ধা”, “সেরা স্বেচ্ছাসেবক”, ইত্যাদি বলে প্রশংসা করেছিলেন।

ফার্স্ট পোস্টের একটি প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান বিশ্বে এখনো পর্যন্ত ইউক্রেন হল একমাত্র দেশ, যেখানে অতি দক্ষিণপন্থী মিলিশিয়া কে সরকারি বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সম্প্রতি ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ড একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে এজভ ব্যাটেলিয়ানের এক সদস্য চেচনিয়ার মুসলিম সৈনিকদের উদ্দেশ্যে শুকরের চর্বিতে বুলেট চুবিয়ে রাখছে।
টুইটার এই ভিডিওটা তাদের বিধি লঙ্ঘন করছে বলে জানালেও, “জনস্বার্থে” ভিডিওটি তারা সরিয়ে দেয়নি। ফেসবুকের পলিসি অনুযায়ী এজভ ব্যাটেলিয়ানের উগ্র জাতি বিদ্বেষী বক্তব্যের জন্য অতীতে তাদের ব্যান করলেও, হঠাৎ নীতি বদলে তাদের প্রচার করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।

এই রকম পরিস্থিতিতে কিছু পশ্চিমী মিডিয়া দাবি করেছে যে ইউক্রেনের নয়া নাৎসি ব্যাপারটা নাকি পুরোটাই পুতিনের অপপ্রচার কারণ ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভোলোদিমির জেলেনেস্কি ইহুদি, তাই তিনি নাৎসি হতে পারেন না! ঠিক যেমন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা মুক্তার আব্বাস নাকভি হওয়ার কারণে ভারতের শাসকদল ইসলামবিদ্বেষী হতে পারে না, বা আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা হওয়ার ফলে আমেরিকায় বর্ণ বিদ্বেষ থাকতে পারেনা।

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ভারখোভনা রাদা (ইউক্রেনের পার্লামেন্ট) কমিউনিস্ট এবং নাৎসি প্রতীক বা চিহ্নপ্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আইন পাস করায়। ডিসেম্বর মাসে দেশের সমস্ত কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন বা অন্য কোনো সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বা বাজানোর জন্য শাস্তি হিসেবে পাঁচ বছরের জেল নির্ধারিত করা হয়। ইউক্রেন জুড়ে ব্যাপক নাৎসি নির্যাতনের মুখে রাশিয়ান সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু মানুষ, রাজনৈতিক ভাবে কমিউনিস্টরা, ডনবাসে এসে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন।

লেনিনবাদী দল, ইউক্রেইনের প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা পাভেল গুবারেভ এর নেতৃত্বে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ‘ডনবাস পিপলস মিলিশিয়া’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইনি ডনেটস্ক ওবলাস্টের ‘পিপলস গভর্নর’ পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইউক্রেনের প্রাক্তন এবং বর্তমানে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ডনেটস্ক পিপলস রিপাবলিক এর নেতা ভ্লদমির বিদ্যভকা হলেন পিপলস কাউন্সিল অফ ডনেটস্ক পিপলস রিপাবলিক এর চেয়ারম্যান।

নব গঠিত ডনেটস্ক কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পুনঃগঠিত কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর ইউনিয়ন-সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি-র সদস্যতা নিয়েছে। এছাড়াও, ডনবাস পিপলস মিলিশিয়ায় আছে রাশিয়ান মাওবাদী পার্টি সহ বিভিন্ন ধারার দেশি-বিদেশি কমিউনিস্ট পার্টির যোদ্ধারা।

এ ছাড়াও স্পেন, রাশিয়া, স্কটল্যান্ড, গ্রীস, ভারত, আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট-বিরোধী বাম স্বেচ্ছাসেবকরা ডনবাস পিপলস মিলিশিয়ায় যোগ দিয়েছেন। ভারতের চন্ডীগড়ের মার্কসবাদ-লেনিনবাদী, ২৪ বছরের ছাত্র রবি সিং নিউজিল্যান্ডে পড়তে গিয়ে ছিলেন, সেখান থেকে চলে গিয়ে ডনবাসে যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। রাসেল বেন্টলি নামের টেক্সাসের বাসিন্দা এক প্রাক্তন মার্কিন সেনা যোগ দিয়েছেন পিপলস মিলিশিয়ায়। বছর ২৪ এর জেভিয়ার বেনিটৎ চিকিৎসক হিসেবে ডনবাসে যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন স্পেন থেকে। রাশিয়া থেকেও গেছেন বহু স্বেচ্ছাসেবক।

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা “ইন্ডিপেন্ডেন্ট” জানাচ্ছে এই বিদেশী স্বেচ্ছাসেবকরা, যারা ফেসবুকে ছবি দিয়ে পিপলস মিলিশিয়ায় যোগদানের কথা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকে নিজের দেশে ফিরে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। ২০১৫ সালে সাত জন স্পেনের যোদ্ধা ডনবাস থেকে দেশে ফেরার পর গ্রেফতার হন।
তা ছাড়া, পুতিনের রাশিয়ার সরকারও এই বিদেশীদের ভিসা নবীকরণ করতে টালবাহানা করছে। কারণ পুতিন চাইছেন না যে ডনবাসে বিদেশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী এই যুদ্ধে বেশিদিন জড়িয়ে থাকুক। ডনেটস্ক আর লুগান্সকের পিপলস রিপাব্লিককে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পুতিন সরকারের উপর রাশিয়ান কমিউনিস্টরাই চাপ তৈরি করেছিল

ইউক্রেন সেনা এবং নয়া নাৎসিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৪ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশী নাগরিককে তারা হত্যা করেছে। রাশিয়া টুডের তথ্যচিত্র শুরু হয়েছে লুগান্সকের একটি গণকবর দেখিয়ে। ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে এই গণ কবরে ৩০০-৫০০ জন নাগরিককে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

গণকবর নিয়ে তদন্তকারী দলের সাথে ঘুরে বেরানো মার্কিন সাংবাদিক জর্জ এলাইসন ডকুমেন্টারিতে বলছেন –তখনো পর্যন্ত কবর থেকে যে পাঁচটা দেহ উদ্ধার করা হয়, তার সব কটারই মাথা কাটা। তিনি বলেছেন সরকারি সেনা কখনো কারো মাথা কাটে না, হয়তো আইসিস এমন করে থাকে! কী পার্থক্য এদের?

রাশিয়া টুডে (আর টি) ডকুমেন্টারি

ডকুমেন্টারিতে অভিযোগ করা হয়েছে ইউক্রেনের সেনাদের নেতৃত্ব দিয়েছে সশস্ত্র নাৎসি বাহিনী। সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকেও জানা যাচ্ছে ডনবাসের যুদ্ধে সামনের সারিতে নাৎসি বাহিনীই থাকছে। এলাইসন বলেছেন তিনি ক্রমাগত ইউরোপ এবং আমেরিকার সংবাদ মাধ্যমে ডনবাসের গণহত্যা সম্পর্কে সংবাদ পাঠিয়ে থাকেন এই আশাতে যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই মানবতা-বিরোধী অপরাধগুলো উঠে আসবে।

যদিও ডনবাস গণহত্যা নিয়ে গুগল সার্চ করলে দেখা যাবে যে, নামি মূলস্রোতের মিডিয়া সংস্থাগুলো এটাকে পুতিনের ভুয়া রটনা হিসেবে প্রচার করছে। বৃহৎ একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির মালিকানাধীন পশ্চিমী মূলস্রোতের মিডিয়ার আধিপত্য এবং ইউক্রেনে সংগ্রামরত বামপন্থীদের লড়াই বা দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে খবর না থাকার কারণে প্রগতিশীল মানুষদের যুদ্ধবিরোধী জাগ্রত বিবেকের তাড়নায় ভুল অবস্থানে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে খুবই। যা ভুলবশতঃ প্রচ্ছন্ন ভাবে মার্কিন আগ্রাসনের পক্ষ অবলম্বন করতে পারে।

পূর্বের বোঝাপড়া লঙ্ঘন করে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো ক্রমাগত ভাবে রাশিয়াকে ঘিরে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে পুতিন অবশ্যই চাইবেন যাতে তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলোতে আমেরিকা-বিরোধী সরকার বসুক। এই দ্বন্দ্বকে কমিউনিস্ট শক্তি সমুহ কাজে লাগাচ্ছে। ইউক্রেনে আমেরিকার পুতুল সরকার এবং নাৎসি বাহিনীর ক্রমাগত ডনবাসে গণহত্যাকারী যুদ্ধ অভিযান পুতিনের কপালে চিন্তার ভাজ ফেলেছে।

নিরাপত্তা হীনতাজনিত রাশিয়ার এই মরিয়া সামরিক অভিযান কিন্তু এশিয়ার দেশগুলোতে মার্কিন আগ্রাসনের সাথে পার্থক্য টেনেছে। রাশিয়া এখনো সাধারণ মানুষের উপর কার্পেট বোম্বিং করেনি। যদিও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা করতে গিয়েও সাধারণ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এর কারণ সম্ভবত এটাই যে পুতিন জানেন ইউক্রেনের জনসংখ্যার এক বড় অংশই আমেরিকা এবং নাৎসি-বিরোধী সাধারণ মানুষ। যদিও এই রুশ হামলা নাৎসি-বিরোধী সাধারণ মানুষের অনেককেই “বিদেশি” রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে দেশ রক্ষার আবেগে ভাসিয়ে নাৎসি বাহিনীর দিকেই ঠেলে দেবে। আগামী দিনে এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কমিউনিস্টরা কী করে সমাধান করেন, সেটাই দেখার।

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla