Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wp-hide-security-enhancer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
ভারতে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে মোদী-বাইডেনদের দ্বিচারিতা | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

পশ্চিমা গণতন্ত্রের পীঠস্থান বলে বাজারজাত হওয়া মার্কিন মুলুকে অভিনব এক রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর দলের পৃষ্টপোষকতায় ভারতে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ খারিজ করেন। ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরে প্রথম বারের মতন গররাজি হয়েও সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হয়ে জানান যে ভারতের ধমনীতে গণতন্ত্র বইছে, এই দেশে নাকি কারুর উপরই কেউ নির্যাতন করে না। 

তবে ভারতে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে মোদীর মার্কিন সফরে করা দাবিগুলির স্বরূপ কিন্তু বিরোধীদের খুলতে হয়নি, তাঁর শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মহারথীগণ এবং সেই পার্টির সরকার সেই কাজ করে দেখালো।

প্রথম ধাক্কা অবশ্য লাগলো প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার থেকে। যিনি প্রায় বেশ কয়েকটি দেশে হাজার হাজার বোমা নিক্ষেপ করে হাজার খানেক মানুষ হত্যা করে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই ওবামাই আবার মার্কিন টিভি চ্যানেল সিএনএন এর সঞ্চালক কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে তাঁর উত্তরসূরী জো বাইডেনের উচিত মোদীর সাথে ভারতে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করা, কারণ তিনি মনে করেন এহেন পরিস্থিতি না বদলালে, ভারত ভেঙে পড়তে পারে, তাতে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদেরই নয়, ক্ষতি হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদেরও।

এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল যে ২০১৯ সালে হিন্দি সিনেমা অভিনেতা অক্ষয় কুমার কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মোদী বলেছিলেন যে তাঁর সাথে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ওবামার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব রয়েছে; তাঁরা নাকি ইংরাজীতে “তুই তোকারি” করে কথা বলেন। সেই ওবামা ভারতে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করায় তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোদী তো কিছুই বলেননি, কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব আর অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অবশ্যই তেড়েফুঁড়ে উঠেছেন।

বিজেপির তরফ থেকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীথারামন ওবামা কে এই বলে সমালোচনা করলেন যে তাঁর আমলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের নানা মুসলিম দেশে রেকর্ড সংখ্যক বোমা নিক্ষেপ করেছিল। অন্যদিকে যখন টুইটারে সাংবাদিক রোহিণী সিংহ প্রশ্ন করেন যে অসমে ওবামার নামে পুলিশে হওয়া নালিশের তদন্ত কী ভাবে হবে, তখন শর্মা তাঁর টুইট কে রিটুইট করে বলেন আগে দেশের মধ্যেকার নানা “হুসেন ওবামাদের” বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতির ইসলামী মধ্য নাম ব্যবহার করে শর্মা ঠিক সেই বার্তাই দিলেন —রাষ্ট্রীয় মদদে ভারতে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ—যা মোদী ওয়াশিংটনে খারিজ করেছিলেন।

এর সাথেই আবার যে সাংবাদিক মোদী কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, তাঁকে তাঁর মুসলিম পরিচয়ের জন্যে তীব্র ভাবে আক্রমণ শুরু করে সমাজ মাধ্যমে থাকা মোদী ভক্তরা বা বিজেপির ভাড়াটে বাহিনী। এই আক্রমণগুলি অবশ্যই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে ভরা, যা প্রমাণ করে দিল যে মোদী ডাহা মিথ্যা বলছেন, ভারতের ধমনীতে সমালোচনা শোনার কোনো গুণ নেই।

তার মধ্যে অবশ্য মোদীর রাজ্য গুজরাট— যেখানে ২০০২ সালে হওয়া মুসলিম গণহত্যায় অভিযুক্ত হওয়ায় মোদী কে দীর্ঘ ১২ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর পশ্চিমা দেশগুলো ভিসা দেয়নি—অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মোদী মার্কিন সফরে যাওয়ার আগেই, গত ১৪ই জুন, গুজরাটের জুনাগড় শহরে একটি মাজার ভেঙে ফেলার সরকারি নোটিশ সামনে আসতেই অঞ্চলের অভিবাসী ও পুলিশের মধ্যে খন্ড যুদ্ধ হয়, যাতে একজনের মৃত্যু হয় ও অসংখ্য মানুষ ও কিছু পুলিশ কর্মী আহত হন। এর পরে, ১৬ই জুন, পুলিশ সেখানকার বেশ কয়েকজন মুসলিম কে ধরে নিয়ে গিয়ে মাজারের সামনে বেঁধে তাঁদের প্রকাশ্যে প্রহার করে, যার ভিডিও সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

এই ঘটনা ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে গুজরাটের খেরা জেলায় পুলিশ দ্বারা প্রকাশ্যে মুসলিমদের বেঁধে পেটানোর স্মৃতি কে উস্কে দেয়। সেই সময়, পুলিশ আদালতে জানিয়েছিল যে অপরাধীদের শিক্ষা দিতে এই পদক্ষেপ নাকি নেওয়া হয়েছিল এবং আদালতও এই স্বীকারোক্তি পাওয়ার পরেও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার জন্যে পুলিশ কে শাস্তি দেয়নি।

মোদী ও বাইডেনের সখ্যতা ও ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় ওঠা নিয়ে যখন মার্কিন ও ভারতীয় মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলো স্তুতির বন্যা বইয়ে দিতে ব্যস্ত, তখন জুনাগড়ের মুসলিমদের প্রকাশ্যে পেটানোর, বা অন্যান্য রাজ্যে মুসলিমদের উপর চলমান আক্রমণের ঘটনাগুলো কে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল অন্তরালে, যাতে কোনো ভাবেই এই বিব্রতকর দৃশ্যগুলো অপ্রীতিকর প্রশ্ন না করতে পারে। 

যখন মোদী কে বাইডেন চীন কে টেক্কা দিতে গলা জড়িয়ে বরণ করে নিচ্ছিলেন, যখন তাঁর প্রশাসন ভারতে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে রইলো—যদিও একই সময় তারা চীনের কাল্পনিক উইঘুর মুসলিম নিপীড়নের গল্প শুনিয়েছে—তখন ভারতের যে রাজ্য থেকে মোদীর উত্থান আর যে রাজ্যগুলো এখন মোদী মডেলে তৈরি হচ্ছে সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিয়ে সরকারের মনোভাব আর বিদ্বেষ প্রমাণ করতে থাকলো যে এই দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদে, সাধারণ নাগরিকের জীবন যাপন করতে পারছেন না।

বাইডেন প্রশাসন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখ চেয়ে যে সব উদারনৈতিক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা মোদীর মুন্ডুপাত করে তারাই আবার ওয়াশিংটনের মৌন ব্রত দেখে নিজেরাও এই বিষয়ে মুখে কুলুপ দিয়েছে। তাদের সমস্যা আরও জটিল। তারা যদি মোদীর পক্ষ নেয় তাহলে দেশে তাদের জনভিত্তি যে ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নানা জায়গায় নির্ভরশীল সেটা ভেঙে যাবে, আর যদি তারা জোর গলায় বাইডেনের দ্বিচারিতার বিরোধিতা করে, তাহলে তাদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে তাদের মার্কিন প্রশাসন ও মার্কিন পুঁজির মন যুগিয়ে যেমন চলতে হবে তেমনি মোদী বিরোধিতার মুখোশ পরেও থাকতে হবে।

তবে ভারতে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার দ্বিচারিতা প্রকাশ করে প্রমাণ করেছে যে পশ্চিমা বিশ্ব তার মানবাধিকার আর ধর্মীয় স্বাধীনতার বুলি শুধুমাত্র চীন, রাশিয়া, ইরান, গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (উত্তর কোরিয়া), কিউবা, ভেনেজুয়েলা, প্রভৃতি মার্কিন একাধিপত্য-বিরোধী স্বাধীন দেশগুলোর জন্যেই ব্যবহার করবে, কোনো বড় বাজার বা সামরিক পেয়াদার ক্ষেত্রে নয়, তেমনি নূপুর শর্মা নামক বিজেপির এক নেত্রীর করা হযরত মোহাম্মাদ সম্পর্কে কটূক্তি নিয়ে যে তথাকথিত ইসলামী বিশ্ব প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল, তারাও সাধারণ, গরীব মুসলিমদের উপর নানা বিজেপি-শাসিত রাজ্যে চলমান নির্যাতন নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেছে কারণ নয়া দিল্লীর সাথে তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন কে তারা কোনো ভাবেই প্রভাবিত করতে চায় না।

অতএব, এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো ভাবেই ভারতে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে বিশ্বের কোনো দেশই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যাবে না বা ভারতের আক্রান্ত সংখ্যালঘুদের পক্ষে দাঁড়াবে না। বিজেপির হাতে যেহেতু ক্ষমতা, তাই ভোটারদের ধর্মীয় মেরুকরণ করার জন্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ যেমন ছড়ানো হবে তেমনি ফ্যাসিবাদী কায়দায় একের পর এক জায়গায় মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষও আক্রান্ত হবেন। এর হাত থেকে বাঁচার রাস্তা পরিচয় ভিত্তিক রাজনীতি নয়, কারণ দেশের ২০% এর কম সংখ্যালঘুরা একত্রে ৮০% মেরুকরণ হওয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ব্যাঙ্ক কে কোনো ভাবেই হারাতে পারবে না। যেটা দরকার সেটা হল খাদ্য, কর্ম সংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দাবিগুলো সব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে দেওয়া। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মের অনুগামী কোটি কোটি ভারতবাসী কে প্রশ্ন করতে শেখানো যে বিজেপির স্বপ্নের “হিন্দু রাষ্ট্র” যদি প্রতিষ্ঠা পায় তাহলে বৈষয়িক ভাবে, বস্তুগত ভাবে শ্রমজীবী সাধারণ জনগণ কতটা ও কী ভাবে লাভবান হবে? 

কারণ এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে গেলেই মানুষ নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝবেন যে “হিন্দু রাষ্ট্রের” দাবি শুধুই তাদের পকেট কেটেছে আর লাভবান হয়েছে ধনিক শ্রেণী, পুঁজিপতি শ্রেণী। এবং গত নয় বছরের মোদী শাসনে, আপামর খেটে খাওয়া হিন্দুরা জেগে উঠে দেখেছেন যে আদানি – আম্বানি গোষ্ঠী সব চেটে পুটে খেয়ে নেওয়ার পরে তাদের হাতে রয়েছে শুধুই পেন্সিল।

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla