Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
দেউচা-বগটুই-আনিস খানের থেকে নজর ঘোরাতেই কি সরকার গ্রেফতার করলো জয়িতা, প্রতীক আর হাসিবুর কে? | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

গত ২১শে মার্চ পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া রামপুরহাটের বগটুই গণহত্যাকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনৈতিক সার্কাস চলার মধ্যেই গ্রেফতার হলেন ‘শ্রমিক-কৃষক একতা মঞ্চের’ প্রতীক ভৌমিক ও হাসিবুর শেখ নামের দুই যুবক। তাদের গ্রেফতার করে মুর্শিদাবাদের অন্তর্গত নওদা থানার পুলিশ। সূত্র মারফত জানা যায়, তাঁদের পুলিশ গত ২৩শে মার্চ রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বিনা ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদের কারণ দেখিয়ে। তারপর অনৈতিক ভাবে ৪৮ ঘন্টা পর পুলিশ তাঁদের আদালতে হাজির করে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ধারায় মামলা রুজু করে।

রাজ্য পুলিশ আনিস খান হত্যার দোষীদের ৪০ দিন পরেও ধরতে না পারলেও, যাঁরা দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল তাঁদের হাজতে পুরে ছিল। রাজ্যের পুলিশ ও গোয়েন্দা বগটুই এর গ্রামবাসীদের না বাঁচাতে পারলেও বেশ কয়েক মাস আগে এই ‘শ্রমিক-কৃষক একতা মঞ্চের’ আরো তিন কর্মীকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর অঞ্চল থেকে এই একই কায়দায় বেআইনিভাবে গ্রেফতার করতে পেরেছিল। সেই গ্রেফতারের পরপর’ই গ্রামে তল্লাশির নামে মূলত সন্ত্রাস চালিয়ে বারুইপুর এসডিপিও বাজারি সংবাদমাধ্যমে সালমান খান(দাবাং পুলিশ) হয়ে উঠে এসেছিল।

সাম্প্রতিককালে, হিন্দি মশলা সিনেমার স্ক্রিপ্টের ঢঙে গত ২৮ মার্চ, নদীয়ার জাগুলিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এই মঞ্চের আরেক কর্মী জয়িতা দাসকে। সূত্র মারফত জানা যায়, জয়িতা দাস সেদিন সেখানে ডাক্তার দেখানোর জন্যে যান আর তারপরই স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) এর আধিকারিকরা তাঁর পিছু নিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, দাসের ঠিকানা প্রতিক ও হাসিবুর কে জেরা করেই মিলেছে, দাস নাকি এখন পুরোদস্তুর একজন ‘মাওবাদী’ নেত্রী। পুলিশের আরো দাবি, বেশ কিছুদিন আগে ময়দান সংলগ্ন অঞ্চল থেকে তারা একটি ব্যাগে বেশ কিছু ‘মাওবাদী’ নথি, পোস্টার ও ডিভিডি পায়, সেই সূত্র ধরেই তারা গত ২৩ তারিখ গ্রেফতার করে প্রতিক ও হাসিবুর কে আর তাঁদের মারফত জয়িতা দাস কেও ধরা হয়।

কে এই জয়িতা দাস? জানা যায়, জয়িতা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী এবং খেটে খাওয়া মানুষের ন্যায্য লড়াইয়ের একজন কর্মী। দাস পূর্বে নন্দীগ্রামের বামফ্রন্ট সরকারের জমি অধীগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত গ্রামের কৃষকদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তারপর তিনি নোনাডাঙ্গা বস্তি উচ্ছেদের বিরুদ্ধেও বস্তিবাসীদের আন্দোলনের সাথী ছিলেন। মহিলাদের দাবিদাওয়া আদায়ে, সমকাজ-সমবেতনের দাবিতে মাতঙ্গিনী মহিলা সমিতি গড়ে তুলেছিল। 

ছাত্রী থাকাকালীন দাস ছাত্রসংগঠন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট ফেডারেশন (ইউএসডিএফ) এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এর আগেও তিনি খেটে খাওয়া মানুষের আন্দোলনে থাকার অপরাধেই ২০১৩ সালে চারুমার্কেট থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে সেই সময়ে কালা আইন বেআইনী কার্যকলাপ (প্রতিষেধক) আইন (ইউএপিএ) প্রয়োগ করেছিল সেইসময় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক পুলিশ। এইবারের ঘটনাতেও পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ধারা ১২৪-এ (রাষ্ট্রদ্রোহ) মতন কালা আইন সহ আরো চারটি ধারায় মামলা রুজু করেছে। পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, এই একই মামলায় প্রতিক ও হাসিবুরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৩০শে মার্চ, জয়িতা কে ব্যাংকশাল কোর্ট তুললে কোর্ট তাঁকে ৭ই এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।

এই ‘শ্রমিক কৃষক একতা মঞ্চের’ কর্মীদের পুলিশের অবাধে গ্রেফতারের ফলে সংবাদ মাধ্যম ও মানুষের মুখে মুখে এই সংগঠনের নাম বর্তমানে বহুল প্রচলিত। বিভিন্ন বাজারি সংবাদ মাধ্যম এই মঞ্চ কে মাওবাদীদের ‘মুখোশ সংগঠন’ বললেও মানুষের মতে আদতে তা শ্রমিক-কৃষক ও গণতান্ত্রিক ব্যক্তি বর্গের সংগঠন। এই সংগঠনের কাজ অনুযায়ী বেশ কিছু দাবী ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, যেমন- কৃষকের হাতে জমি, ফসলের ন্যায্য দাম, শ্রমিকের আট ঘন্টার স্থায়ী কাজ প্রভৃতি। স্থানীয় মানুষের মতে এই সংগঠন মানুষের সংগঠন। সরকারের আজ এই সংগঠনের কর্মীদের বেআইনিভাবে গ্রেফতার ও মাওবাদী যোগস্থাপন বেশ কিছু প্রশ্ন তুলছে রাজ্যের মানুষের কাছে।

মানবাধিকার সূত্রের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে রাজ্যে রাজনৈতিক বন্দী আছে প্রায় একশো বেশি মানুষ। যাদের মধ্যে রয়েছে ৭০ জন মাওবাদী ও ১২ জন এসইউসিআই বন্দী আর বাকি কিছু রয়েছে ইসলামিস্ট সংগঠনের রাজনৈতিক বন্দী মানুষজন।প্রসঙ্গত, সরকারের রাজনৈতিক শূন্যতার জায়গা থেকেই বাড়ে সাধারণত রাজনৈতিক বন্দীর সংখ্যা সমাজে। সরকার যখন ব্যর্থ হয় রাজনৈতিক সামাজিক সমস্যার সমাধানে তখন তারা বিভিন্ন কায়দায় দমনমূলক কালা আইনে হাজতে ভরে নিজের দেশের মানুষকেই আর বাড়ায় সমাজে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, চলে নিপীড়িত মানুষের উপর দমনপীড়ন।

যে কোন সরকার সাধারণত গরীব মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামকে ভয় পেয়েই সমাজে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে করে থাকে এমন। যা এর আগে করেছিল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস সরকার ও কিন্ত তাদের জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে হয়নি শেষ রক্ষা সেবারও। রাজনীতিবিদদের মতে যে দেশে রাজনৈতিক বন্দী সংখ্যা যত বেশি সেই দেশের সামাজিকভাবে রাজনৈতিক সমস্যা তত বেশি।

তবে, এই সময় দাঁড়িয়ে দেউচা সহ আরো বিভিন্ন জায়গায় কর্পোরেটদের স্বার্থে জমি অধীগ্রহণ করতে, পঞ্চায়েত স্তরের দুর্নীতি আরো বাড়াতে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের বাড়ির দুয়ারে এসে আনিস খানের মতন আরও যুবদের হত্যা করতে, রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের সামনে বগটুই এর মতন গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করেই পার পেয়ে যেতে, রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দাদের প্রতীক, হাসিবুর ও জয়িতাদের এই গ্রেফতার বর্তমানে ভীষণই তাৎপর্যপূর্ণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও তাঁর রাজ্য সরকারের কাছে।

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla