বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে চলছে ছাত্র বিক্ষোভ ভিসি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। বহুবার তাঁর পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রের পাঠভবনের হোস্টেলে অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ঘেরাও করে ভিসির বাসভবন, চলে দফায় দফায় বিক্ষোভ। এরই মাঝে, হঠাৎ রাজ্য পুলিশ ২৪শে এপ্রিল, ভর দুপুরবেলা তুলে নিয়ে যায় বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র, বোলপুরের বাসিন্দা টিপু সুলতানকে।
এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্নওয়ার্ডে চিকিৎসার অছিলায় ছুটি কাটিয়ে সবে বীরভূমের নিজের বাড়িতে ফিরেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল। যার পিছনে বীরভূমে কয়লা পাচার, গরুপাচার, ও কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া বগটুইয়ের গণহত্যা সহ একাধিক ‘নিম্নমানের’ অভিযোগের কারণে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা সিবিআই ঘুরছে বহুদিন ধরে, কিন্ত বিরোধীদের অভিযোগ সবটাই লোক দেখানো চলছে, জনগণের মন ভোলাতে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন অনুব্রত মন্ডলকে সিবিআই বাড়ি থেকে গিয়ে কেন গ্রেফতার করছে না, তিনি ষষ্ঠবারের মতন সিবিআই এর হাজিরা এড়ানোর পরেও?
টিপু সুলতানকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বোলপুরের বাড়ি থেকে। জনগণের একাধিক অভিযোগ থাকার সত্ত্বেও সিবিআই-র হাতে অনুব্রত মন্ডল রেয়াত পেলেও রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) থেকে ছাড় পায়নি ছাত্র নেতা টিপু। গত বছর দুর্গা পুজোর সপ্তমীতে, রাতের অন্ধকারে কোন ওয়ারেন্ট ছাড়াই বাড়ির থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করা হয়েছিল টিপুকে। এবারও তাকে সেই কায়দাতেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাড়ির ভেতর থেকে। তফাৎ শুধুমাত্র রাতটা দিন হয়েছে, এমনটাই অভিযোগ টিপুর বাড়ির লোকের। এরপর শান্তিনিকেতন ও বোলপুর থানা গিয়েও খোঁজ পায়নি ছেলের, টিপুর পরিবারের লোকজন এমনটাই দাবি করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে।
গতবার টিপু সুলতানের ‘অপরাধ’ ছিল ‘নাশকতা’ মূলক ষড়যন্ত্রের। বীরভূমের শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে জনগণকে সংগঠিত করার মতন ‘ভয়াবহ অপরাধ’ করেছিল টিপু সুলতান। কয়েক বছর আগে, জঙ্গলমহলের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে “মাওবাদী“ যোগ দেখিয়ে কালা আইন বেআইনী কার্যকলাপ (প্রতিরোধক) আইন (ইউএপিএ) অনুসারে গারদে পোৱা হয় টিপু সুলতান কে। প্রসঙ্গত, টিপু সুলতান আগের কেস থেকে বেলে মুক্তি পায় প্রায় তিন মাস আগে।
আজ দ্বিতীয়বার টিপু কে রাজ্য পুলিশের বিনা ওয়ারেন্টে ঘর থেকে দিনে দুপুরে তুলে নিয়ে যাওয়া তাই ভাবাচ্ছে সমস্ত গণতান্ত্রিক ব্যক্তিবর্গের মানুষকে। অনেকে আবার রাজ্য সরকার কে ‘ব্যঙ্গ’ করে বলছেন, “ধন্যবাদ টিপুকে আনিসের মতন পুলিশ দিয়ে মেরে না ফেলার জন্যে!” এর ব্যাখ্যায় তারা জানাচ্ছেন, প্রতিবাদী মুসলিম যুবক আনিসকে মেরে ফেলা হয়েছিল ঘরের ভেতরে, রাতের অন্ধকারে। যার অভিযোগের তীর তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য পুলিশের দিকে। কিন্ত টিপুকে প্রাণে মারা হয়নি অন্তত। টিপু সুলতানের বেঁচে থাকার “গণতান্ত্রিক অধিকার” রাজ্য সরকার এখনো রক্ষা করছে।
বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ‘বিপ্লবী ছাত্র ফ্রন্টের‘ তরফ থেকে গণআন্দোলন কর্মী টিপু সুলতানের দ্বিতীয়বারের গ্রেফতার নিয়ে এক বিবৃতিতে, কিছুদিন আগেই গ্রেফতার হওয়া জয়িতা দাস, প্রতীক, হাসিবুর, রূপা সহ দেশের সমস্ত রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার ও অবিলম্বে পথে নামার আর্জি জানানো হয়েছে। সেই বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার নাকি কেন্দ্রের হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসীবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পথে চলে গরিব মানুষের নূন্যতম অধিকার হরণে স্বার্থে রাজ্যের সক্রিয় গণআন্দোলন কর্মীদের মিথ্যে মামলায় হাজতে ভরছে।
তবে, বর্তমানে রাজ্যে ঘটে চলা অসংখ্য খুন,ধর্ষণ তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডা ও রাজ্য পুলিশের মিলিত সন্ত্রাস যেমন রাজ্যের শাসকদলের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নেতা-কর্মীদের ভাবাচ্ছে দল নিয়ে তেমনই যারা গত বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির বদলে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে আনবার আছিলায় রাজ্য থেকে “ফ্যাসীবাদ” নিশ্চিহ্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘর বেঁধেছিল, আনিস থেকে হাঁসখালির মতন মর্মান্তিক হত্যাকান্ড এবং একাধিক গণআন্দোলনের কর্মীদের কালা আইনে বন্দী করে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার তাঁদের মুখ পুড়িয়ে দিয়েছে। যা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরেও ঘোর অন্তর্কলহ সৃষ্টি হয়েছে বর্তমানে বলে জানা যাচ্ছে।
এখন দেখবার বিষয় জঙ্গলমহলে ‘হাই এলার্ট’ জারি রেখে রাজ্যসরকার “মাওবাদী” দমন এর নামে আরো কতজন গণআন্দোলন কর্মীকে বেআইনি ভাবে মিথ্যে মামলায় হাজতে ভরে সমাজে এক ভয়ানক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে, যা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের উপর আরো রাজনৈতিক সামাজিক আক্রমণ নামিয়ে আনতে সাহায্য করবে এবং পুরোপুরি প্রকাশ্যেই কেন্দ্রের হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসীবাদী বিজেপির পথ অনুসরণ করা রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে বুক ফুলিয়ে চলতে সাহায্য করবে এই বাংলার মাটিতে।