Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
মোদীর কোয়াড আর ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে ভারতবাসী কী বাছবে? | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জনগণের কোটি-কোটি টাকা খরচ করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে জাপানে বসে যখন চীন-বিরোধী যুদ্ধ উন্মাদনার রুটম্যাপ সাজাতে ব্যস্ত, তখন দেশের আর্থিক পরিস্থিতি ক্রমশ বেজায় খারাপ পর্যায় পৌঁছাছে সাথে বাড়ছে মানুষের সাথে মানুষের সামাজিক- বৈষম্যমূলক সম্পর্ক প্রতিটি ক্ষেত্রে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ভারত এখন বেকারত্বের নিরিখে বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে।

বিশ্ব বৈষম্য রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২২ সালে ভারতের আর্থিক অবস্থা প্রচণ্ড দুর্বল হয়েছে এবং সামাজিক ভাবে তা প্রবল বৈষম্যমূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতির ভাষায় ‘K’ আকার আরো তীক্ষ্ণ হচ্ছে। এক শ্রেণী ক্রমশ ধনবান হয়ে K-এর উপরে অংশে উঠছে, আরেক শ্রেণীর মানুষ তীব্র গতিতে নিচে পড়ছে। জাতীয় আয়ের নিরিখে ২২% এর দখল দেশের মোট জনসংখ্যার ১% এর হাতে।

এই রিপোর্ট অনুসারে জানা যাচ্ছে, রোজগারের ভিত্তিতে দেশের সর্বোচ্চ আয়ের অধিকারী ১০% এর হাতে রয়েছে দেশের ৫৭% সম্পদ। বর্তমানে এই শ্রেণীর সম্পদই আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে দেশের একদম তলানিতে থাকা ৫০% এর হাতে রয়েছে জাতীয় আয়ের মাত্র ১৩%। এছাড়া দেশের ১৫% মানুষের মাসিক আয় ₹৫,০০০ টাকার থেকে কম। 

যাদের হাতে রোজগার সব থেকে বেশি, তাদের হাতে রয়েছে জাতীয় আয়ের ৫-৭% অংশ। সেই তথ্য থেকে আরো জানা যাচ্ছে, ২০১৯-২০২০ সালে দেশের রোজগার করা অংশের মধ্যে ৪৫.৭৮% ছিল সেলফ-এমপ্লয়েড বা স্বনির্ভর। স্যালারিড ক্লাসের বা বেতন পাওয়া শ্রেণীর পরিমান ৩৩.৫% আর ক্যাজুয়াল ওয়ার্কার বা অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ২০.৭১%। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে এই সেলফ-এমপ্লয়েড অংশটি রোজগারের ভিত্তিতে সবথেকে পিছিয়ে পড়া অংশ। এই অংশেই দশ ভাগের এক ভাগ অবস্থান করছে বেকারত্বের তালিকায়।

ইন্ডিয়ান ইকোনমিক এডভাইসারি কাউন্সিল-এর রিপোর্টে বলা হচ্ছে, দেশের শহরাঞ্চলে পুরুষদের গড় রোজগার ₹১৯,১৯৪। গ্রামাঞ্চলে পুরুষের গড় রোজগার ₹১৩,৯১২। শহরের চাকুরীজীবী নারীদের গড় রোজগার ₹১৫,০৩১, গ্রামাঞ্চলের নারীদের গড় রোজগারের পরিমান হল ₹১২,০৯০। 

এর ফলে, গ্রামের সাথে শহরে রেষারেষি’র সম্পর্ক ক্রমশ বাড়ছে। গ্রামের পুরুষের সাথে শহরের পুরুষের নতুন ধরণের ভেদাভেদ তৈরী হচ্ছে আবার তৈরী হচ্ছে গ্রামের নারীর সাথে শহরের নারীর ভেদাভেদ। তাছাড়াও বৃদ্ধি পাচ্ছে শহর-গ্রাম মিলিয়েই নারী-পুরুষের এক চরম বৈষম্যমূলক সম্পর্ক। যেহেতু মানুষের রোজগারের সাথে তার খাওয়া-দাওয়া, পোশাক, আচার-আচরণ, ভাষা-সংস্কৃতি যুক্ত, সেহেতু অর্থনীতি তলানিতে ঠেকার সাথে সাথে এগুলোও দিন-দিন মৃত্যুর অতল গহ্বরে বিচরণ করছে। 

চলমান আর্থিক সঙ্কটে কাজ হারিয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। চরম বেকারত্বের থেকে সৃষ্টি হতশার ফলে মানুষের মস্তিকে ‘বিকৃতি’ ঘটছে। সমাজে গরিবের সাথে গরিবের যুদ্ধ-খুনোখুনি বাড়ছে। বাড়ছে শ্রমজীবী মানুষের জাত-ধর্মের যুদ্ধ (সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার) আর হিংসার প্রবণতা, যা পারিবারিক সম্পর্কগুলিও নষ্ট করছে, হিংসার সৃষ্টি করে। নষ্ট হচ্ছে বাপ-ছেলের সম্পর্ক থেকে ভাই-বোনের সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক।

মানুষের সাথে মানুষের নূন্যতম বিশ্বাসের সম্পর্কের ভীত শেষ করে মানুষ দিনদিন হয়ে উঠছে চরম আত্মকেন্দ্রিক। যা তাদের হতাশা-আবসাদগ্রস্ত করে তুলছে। অথচ এই নিয়ে কোনো সারা শব্দ নেই রাজ্য কিংবা কেন্দ্র সরকারের। নেই কোনো সচেতনতা নিজের দেশের নাগরিকের শারীরিক-মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে। উল্টে এমনটাই হলে যেন তাদের আরো মঙ্গল হচ্ছে ব্যক্তিস্বার্থের সামাজিক-রাজনীতি আরো দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে। যেন শাসকশ্রেণী এই সমস্তটাই বুঝে-সুঝে মিলিত ভাবে করে চলেছে। কিন্ত এর ফলে আদৌ শাসকশ্রেণীরও কি কোন লাভ হচ্ছে ভবিষ্যতের বৃহত্তর-ক্ষেত্রে? এরাও কি দিনদিন শেষ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে না এসবেরই ফলে?

২০২২ সালে কেন্দ্রের বাজেট অনুযায়ী দেখা গেছে যুদ্ধ পরিস্থিতির উপরেই বেশিমাত্রায় জোর দিতে। কৃষি, শিল্প, সার্ভিস-সেক্টরে তুলনামূলক ভাবে অর্থ ব্যায় কমিয়ে যুদ্ধের রসদ সাজাতে জনগণের টাকায় সামরিক সাজসরঞ্জাম বাড়িয়েছে। তার স্বার্থেই যুদ্ধের পণ্য সরবরাহে অরুণাচলের চীনা বর্ডারে ও গুজরাটের পাকিস্তান বর্ডারে রাস্তা বাড়ানোয় বিশ্বব্যাংকের থেকে ঋণ নেওয়া অধিকাংশ টাকা ব্যায় করতে হয়েছে। এর সমর্থনে মোদী সরকারের তরফে দেখানো হয়েছে প্রতিবেশী দেশ চীন, পাকিস্তানের ‘আক্রমণ’। এই বছরে কেন্দ্রীয় বাজেটে গত আর্থিক বছরের বাজেটের তুলনায় সামরিক খাতে ১৩% বেশি ব্যায় করা হয়েছে, এই যুদ্ধের আর উগ্র দেশপ্রেমের দামামা বাজিয়ে। ফলত, ক্ষুধার্থ মানুষের দেশের সামরিক বাজেটের অনুপাত গত বাজেটের ৪৬% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৯% হয়েছে। 

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে এই নিয়ে মুখে বিরোধিতা করতে শোনা গেলেও কাজে তাদের গতি-প্রকৃতি একই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজ্যের কৃষির অবস্থা ভীষণ খারাপ জায়গায়। ফসলের দাম না পেয়ে বাড়ছে কৃষকের আত্মহত্যা। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূল নেতাদের কৃষকের জমি বে-আইনি ভাবে ছিনিয়ে নেওয়া ও কৃষকের হাতে বিকল্প কোনো কাজ না থাকার ফলে তাদের ঘরের ছেলেরা কাজের সন্ধানে অন্য রাজ্যমুখী হচ্ছে। রাজকোষে অর্থে টান পড়ায় গ্রামে ১০০ দিনের কাজও বেশিরভাগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। 

শহরের কল-কারখানায় মালিকের অধিক মুনাফার লোভে ‘চুক্তি ভিত্তিক’ শ্রমিক নিযুক্তির কারণে বাড়ছে শ্রমিক ছাঁটাই ও কল-কারখানা বন্ধ হাওয়ার সংখ্যা। কাজ হারানো শ্রমিকের আত্মহত্যা এবং মানসিক ও অবসাগ্রস্ততা শ্রমিক পরিবারের সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাছাড়াও রয়েছে রাজ্যের সার্ভিস সেক্টর গুলিতে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের অজস্র দুর্নীতি। 

অথচ তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার এইসবের সমাধানে কোনো আগ্রহ না দেখিয়ে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) ও তার সংসদীয় সংগঠন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পরিচালিত কেন্দ্রের হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদী মোদী সরকারের আদব কায়দা অবলম্বন করে, বৃহৎ দেশি-বিদেশী কর্পোরেটদের হাতে আদিবাসী-কৃষকের জমি তুলে দিতে বদ্ধ পরিকর হয়েছে। রাজ্যের খেটে-খাওয়া মানুষের আন্দোলন-বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ-প্রশাসন ও রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তর কে ব্যবহার করছে, জনগণের টাকা বাড়তি ব্যায় করে। কাজের টোপে মানুষকে ‘চুক্তি ভিত্তিক’ হোমগার্ড আর সিভিক ভলেন্টিয়ারের লোভ দেখাচ্ছে, আদিবাসী-কৃষকের জমি অধিগ্রহণের স্বার্থে। যদিও অবাধে দুর্নীতি চলছে সেখানেও তেমনটাই মানুষের অভিযোগে। 

প্রসঙ্গত: আজ বিশ্ব দরবারে লগ্নিপুঁজির মুখ থুবড়ে পড়ায় অর্থনৈতিক সংকট ও যুদ্ধের মুখোমুখি সমস্ত দেশ। আমেরিকা ও ব্রিটেন(পশ্চিমা দেশগুলি) অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে যখন নিজেদের তৈরী করা ‘কৃত্রিম শত্রু’র বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধ সাজাচ্ছে। ‘শত্রু’ যাতে ‘আক্রমণ’ করে সেই রাস্তা তৈরী করে  ভারত সরকারকে ‘ইউক্রেনের উপর বর্বর রাশিয়ার আক্রমন’-দেখিয়ে রাশিয়ার সাথে সমস্ত ব্যবসা অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছে, তখন ইউরোপের তাবড় দেশগুলিই রাশিয়ান মুদ্রায় (রুবলে) রাশিয়ার থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি করে রাশিয়াকেই পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধ চালানোর অর্থের যোগান দিচ্ছে। 

এখান থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের ‘দ্বিচারিতা নীতি’ আরো সু-স্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে এবং যুদ্ধ যে এই পরিস্থিতিতে তাদের কাছে সব থেকে মূল্যবান রসদ তা ভাল ভাবেই বোঝা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই, ইউক্রেনের পর ফিনল্যান্ড কে “ন্যাটো” ভুক্ত করার ফরমান দিয়ে আমেরিকা আরেকটা যুদ্ধ তৈরী করতে চাইছে যা নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। 

পুতিন ও রাশিয়া কে আন্তর্জাতিক ভাবে এক ঘরে করার জন্যে যে ধরনের আর্থিক অবরোধ আর নিষেধাজ্ঞা আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো চালিয়েছিল তার ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি আর রুবেলের দর দুটোই যেমন শক্তিশালী হয়েছে তেমনি বিশ্বের পণ্য যোগান ব্যবস্থা ধাক্কা খাওয়ার ফলে পশ্চিমী পুঁজির সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে যার প্রভাব ভারতের মতন দক্ষিণ এশিয়ার দেশে সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে।

এই আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমী বিশ্ব কে খুশি করতে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে কোটি-কোটি টাকা খরচ করে আমেরিকার সাথে ‘কোয়াড’-চুক্তি করে বিদেশে গিয়ে যুদ্ধের পরিকল্পনা করছেন। সেই সময়ে দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে যে সামাজিক-‘যুদ্ধাংদেহী’ মনোভাব ক্রমশ বাড়ছে তা আস্তে-আস্তে সরকার বিরোধী মনভাবেও রূপান্তরিত হচ্ছে। যা আগামীদিনে আরও তীব্র হবে বলেই রাজনীতির বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। 

এখন দেখার বিষয় বিদেশী শক্তির সাথে যুদ্ধ করতে ভারত সরকার ও তার দোসররা(রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলগুলি) আমেরিকার ‘কোয়াড’ এর খাতে কোটি-কোটি টাকা দিয়ে নিজেদের ভরসা আরেক বিদেশী শক্তির (যারা বিশ্বের জনতার প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে) উপর বাড়াতে থাকে নাকি দেশের মানুষের রুজিরুটির স্থায়ী সমাধানে সেই টাকা খরচ করে দেশের গরিব মানুষের মন জয় করতে পারে। আদতে যে সরকার যুদ্ধ উন্মাদনা সৃষ্টি করে ভোটে জেতে আর সামাজিক হিংসা ছড়িয়ে ক্ষমতা ধরে রাখে সে যে কোনোদিনই মানুষের স্বার্থ নিয়ে মাথা ঘামাবে না সে কথা কিন্তু বলাই বাহুল্য। তাহলে আগামী দিনে কি এই সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রোশে গর্জন করবেন খেটে খাওয়া মানুষ, বেকারত্বের শিকার আর ফসলের দাম না পাওয়া চাষী? এর উত্তর আগামীই দেবে।

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla