Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
মার্কিন-পশ্চিম শক্তি কে শয়তান ও ঔপনিবেশিক বললেন পুতিন, জানালেন উদীয়মান নয়া বিশ্বের কথা | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

গত ২৪ থেকে ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২২ অবধি দনবাস অঞ্চলের দোনেৎস্ক ও লুগানস্ক গণপ্রজাতন্ত্রে, এবং রাশিয়ার দ্বারা মুক্ত করা ইউক্রেনের রুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ জাপোরোজিয়ে ও খেরসন অঞ্চলে রাশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাবের উপর গণভোট আয়োজিত হয়। এই গণভোটগুলোর ফলাফলে দেখা যায় যে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের রায় রাশিয়ার সাথে সংযুক্ত হওয়ার পক্ষে গেছে। এর পরে, রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার এই গণপ্রজাতন্ত্র ও ইউক্রেনীয় নয়া-নাৎসিদের থেকে মুক্ত করা প্রদেশগুলোর রাশিয়ার প্রজাতন্ত্রে সংযুক্তিকরণের চুক্তি সই করে।  

১লা অক্টোবর, রাষ্ট্রপতি পুতিন এই বিষয়ে জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন, যাতে তিনি খোলাখুলি পশ্চিমী শক্তিগুলোর, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, পররাষ্ট্র নীতি কে নয়া-ঔপনিবেশিক ও স্বৈরতান্ত্রিক আখ্যা দেন ও বলেন যে সারা বিশ্বের জনগণ ও জাতিগুলো আজ এই পশ্চিমী পেশী আস্ফালনের বিরুদ্ধে, যুদ্ধবাজদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ও ঔপনিবেশিক অভিযানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন।  

মস্কোর ক্রেমলিনের সেন্ট জর্জ হলে পুতিন যে ভাষণ দেন সেখানে তিনি এই গণভোটের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের নয়া-নাৎসি ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সরকারের ও তার পৃষ্টপোষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমী শক্তিগুলোর বিরোধিতা কে নস্যাৎ করে বলেন, “এটি নিঃসন্দেহে তাঁদের (ওই সব অঞ্চলের জনগণের) অধিকার, যা জাতিসংঘের এক নম্বর ধারা অনুসারে, যা সরাসরি সমান অধিকারের ও জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের কথা সরাসরি ব্যক্ত করেছে, তাঁদের একটি জন্মগত অধিকার।”  

তিনি আরও বলেন, “তথাকথিত পশ্চিম সীমান্তের (জাতীয়) অলঙ্ঘনীয়তা কে পদদলিত করেছে, আর আজ তারাই ঠিক করছে, নিজেদের ইচ্ছা মতন, কাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের অধিকার আছে আর কাদের নেই, কারা তার (এই অধিকারের) অযোগ্য।”  

“এই কারণেই ক্রিমিয়া, সেভাস্তোপল, দোনেৎস্ক, লুগানস্ক, জাপোরোজিয়ে এবং খেরসনের জনগণের পছন্দ তাদের প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করে তোলে। পশ্চিমাদের গণতন্ত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কে রায় দেওয়ার, এমনকি একটি শব্দও উচ্চারণেরও কোনো নৈতিক অধিকার নেই। এটা (এই অধিকার) তাদের নেই এবং কখনও ছিলও না।” 

পুতিন আরও বলেন, “পশ্চিমা অভিজাতরা শুধু জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনকেই অস্বীকার করে না, তাদের আধিপত্য সর্বগ্রাসীতা, স্বৈরতন্ত্র এবং বর্ণবাদের বৈশিষ্ট্যগুলির নিদর্শন আজ অবধি দিয়েছে। তারা নির্লজ্জভাবে বিশ্বকে তাদের তাঁবেদার ——তথাকথিত সভ্য দেশগুলিতে——এবং বাকিদের মধ্যে বিভক্ত করেছে, যারা আজকের পশ্চিমা বর্ণবাদীদের নকশা অনুসারে, বর্বর এবং বর্বরদের তালিকায় যুক্ত করা উচিত। “দুর্বৃত্ত দেশ” বা “স্বৈরাচারী শাসন” এর মতো কুৎসার লেবেলগুলি ইতিমধ্যেই চালু রয়েছে, এবং সমগ্র জাতি এবং রাষ্ট্রগুলোকে কলঙ্কিত করতে ব্যবহৃত হয়, যা নতুন কিছু নয়। এর মধ্যে নতুন কিছু নেই: গভীরভাবে, পশ্চিমা অভিজাতরা একই উপনিবেশবাদী রয়ে গেছে।” 

তিনি বলেন, “পশ্চিমা দেশগুলি বহু শতাব্দী ধরে বলে আসছে যে তারা অন্যান্য জাতির জন্য স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নিয়ে আসে। এর চেয়ে বড় মিথ্যা আর কিছুই হতে পারে না। গণতন্ত্র আনার পরিবর্তে তারা দমন ও শোষণ করেছে এবং স্বাধীনতা দেওয়ার পরিবর্তে তারা দাসত্ব ও নিপীড়ন করেছে। একমেরুর বিশ্ব স্বাভাবিকভাবেই গণতন্ত্রবিরোধী এবং অমুক্ত; এটা চরম ভাবে মিথ্যা এবং ভণ্ড।” 

পশ্চিমের তথাকথিত নিয়ম-ভিত্তিক বিশ্ব ব্যবস্থা কে সমালোচনা করে পুতিন বলেন, “এবং আমরা যা শুনি তা হল, পশ্চিম একটি নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থার উপর জোর দিচ্ছে। সেটা (নিয়ম ও আইন) কোথা থেকে এসেছে? কে কখনো এই নিয়ম দেখেছেন? কে তাদের সম্মত বা অনুমোদন করেছে? শুনুন, এটা একটা বাজে কথা, সম্পূর্ণ প্রতারণা, দ্বিচারিতা, এমনকি ত্রিচারিতা! তারা অবশ্যই আমাদের বোকা ভাবছে!” 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ  

পশ্চিমী দেশগুলোর প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন যে মার্কিনরা ইউরোপের শিল্প শেষ করে দিতে চায়। তিনি বলেন ইউরোপীয় অভিজাত শ্রেণী মার্কিনিদের সাথে রাশিয়ার বিরুদ্ধে হাত মিলিয়ে আসলে নিজেদের জনগণের সাথেই বেইমানি করছে। “ওয়াশিংটন রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও বেশি নিষেধাজ্ঞার দাবি করে এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় রাজনীতিবিদ বাধ্যতার সাথে তা মেনে নেয়। তারা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে রাশিয়ার জ্বালানি এবং অন্যান্য সংস্থান সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ ইউরোপীয় বাজার তার হাত পেতে কার্যত ইউরোপকে শিল্পহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই ইউরোপীয় অভিজাতরা সবকিছু বোঝে – তারা অবশ্যই বোঝে, কিন্তু তারা অন্যদের স্বার্থে কাজ করতে পছন্দ করে। এটি আর দাসত্ব নয় বরং তাদের নিজস্ব জনগণের সাথে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা।” 

তিনি নর্ড স্ট্রীম পাইপলাইনে বিস্ফোরণের জন্যে সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমী শক্তি কে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “এটি অবিশ্বাস্য মনে হয়, কিন্তু এটি একটি বাস্তবতা যে বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে যাওয়া নর্ড স্ট্রীমের আন্তর্জাতিক গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে, তারা আসলে ইউরোপের সমগ্র জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংসের সূচনা করেছে। এটা প্রত্যেকের কাছে পরিষ্কার যে কে লাভবান হয়েছে এর ফলে। যারা লাভবান হবে তারা অবশ্যই দায়ী।” 

গণভোটের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটবে না মস্কো  

পুতিন জেলেনস্কি সরকার কে বলেন যে তারা (ইউক্রেন ও তার পৃষ্টপোষক পশ্চিমী শক্তিগুলো) যেন আশা না করে যে এই গণভোটের বিধান কে উল্টে দেওয়া যাবে ও পুনরায় এই অঞ্চলকে তারা দখল করতে পারবে। পুতিন জেলেনস্কি কে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানান কিন্তু স্পষ্ট করে দেন যে গণভোটের রায় নিয়ে রাশিয়া জনগণের সাথে প্রতারণা করবে না।  

পুতিন বলেন, “অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সমস্ত শত্রুতা বন্ধ করার জন্য, ২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের সমাপ্তি এবং আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার জন্য কিয়েভ সরকারকে আমরা আহ্বান জানাই। আমরা এর জন্য প্রস্তুত, যেমন আমরা একাধিকবার বলেছি। তবে দোনেৎস্ক, লুগানস্ক, জাপোরোজিয়ে এবং খেরসনের জনগণের রায় নিয়ে আলোচনা করা হবে না। একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, এবং রাশিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। কিয়েভের বর্তমান কর্তৃপক্ষের উচিত জনগণের ইচ্ছার এই স্বাধীন অভিব্যক্তিকে সম্মান করা; অন্য কোনো উপায় নেই। এটাই শান্তির একমাত্র পথ।” 

২০১৪ সাল থেকে চলমান দনবাসের যুদ্ধ 

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের নির্বাচিত সরকার কে একটি অভ্যুথানের মধ্যে দিয়ে উৎখাত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ, তার তাঁবেদার ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির সমাহার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) এবং তাদের সামরিক জোট উত্তর অতলান্তিক চুক্তি সংগঠন (ন্যাটো)। এর পরে একদিকে ইউক্রেন কে ইইউ ও অন্যদিকে ন্যাটো অন্তর্ভুক্তির প্রয়াস শুরু হয়।  

এর বিরুদ্ধে রুশ জনজাতির মানুষেরা ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিক শ্রেণী আন্দোলন শুরু করতেই মে ২০১৪ থেকে তাদের উপর হিংসাত্মক আক্রমণ শুরু করে ইউক্রেনের নয়া-নাৎসি বাহিনী –– আজোভ ব্যাটালিয়ন। এই সময়ে দোনেৎস্ক, লুগানস্ক থেকে শুরু করে ক্রিমিয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ-বিরোধী শক্তি জোট বাঁধে ও কিয়েভের মদদপুষ্ট আজোভ ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সংগঠনগুলোর থেকে অনেক সদস্য এই সময়ে দোনেৎস্ক ও লুগানস্ক এ আসেন ও এদের ইউক্রেন থেকে স্বাধীন হওয়ার সংগ্রামে যোগ দেন।  

অভিযোগ যে এই আট বছরে ইউক্রেনের সরকার আর আজোভ ব্যাটালিয়ন দনবাস অঞ্চলে ব্যাপক গণহত্যা চালায় ও প্রায় ১২,০০০ নর-নারী ও শিশু কে হত্যা করে। এই আক্রমণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে কমিউনিস্ট ও রুশ ভাষী জনগণ লড়াই চালিয়ে গেলেও রাশিয়া সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনি। যদিও রাশিয়ার সরকার ও প্রধান বিরোধী দল রুশ ফেডারেশনের কমিউনিস্ট পার্টি (কেপিআরএফ) এই যুদ্ধে সহযোগিতা করে এসেছিল গেরিলাদের।  

কিন্তু এরই মধ্যে ইউক্রেন ন্যাটো জোটে সামিল হওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে, যার ফলে মার্কিন ও পশ্চিমী শক্তির ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউক্রেনের মাটিতে রাশিয়ার দিকে তাক করে বসানো সহজ হয়ে যেত। এই কারণে রাশিয়া কে এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখ ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালাতে হয়। দনবাস ও বিভিন্ন রুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল কে ইউক্রেন থেকে মুক্ত করে রুশ সেনা ও দনবাসের গেরিলারা। 

দনবাসের গণহত্যা ও কিয়েভের ফ্যাসিবাদী আক্রোশ নিয়ে পুতিন বলেন, “দীর্ঘ আট বছর ধরে, দনবাসের জনগণ গণহত্যা, গোলাগুলি এবং অবরোধের শিকার হয়েছিলেন; খেরসন এবং জাপোরোজিয়েতে, রাশিয়ার প্রতি ঘৃণা জন্মানোর জন্য, রাশিয়ান সবকিছুর জন্য একটি অপরাধমূলক নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল। এখনও, গণভোটের সময়, কিয়েভ সরকার স্কুলশিক্ষক, নির্বাচন কমিশনে কাজ করা মহিলাদের প্রতিশোধ এবং মৃত্যুর হুমকি দিয়েছিল। তাঁদের ইচ্ছা প্রকাশ করতে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষকে কিয়েভ দমন পীড়নের হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু দনবাস, জাপোরোজিয়ে এবং খেরসনের জনগণ ভেঙে পড়েনি এবং তাঁরা তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেছেন (নির্বাচনের মাধ্যমে )।” 

যুদ্ধ শুরুর আগেই অবশ্য রাশিয়ার সরকার দোনেৎস্ক ও লুগানস্ক গণপ্রজাতন্ত্র কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর আপত্তি সত্ত্বেও স্বীকৃতি দেয় ও তাদের সাথে কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এর মধ্যে দিয়েই পূর্ব সীমান্ত থেকে ইউক্রেন কে আক্রমণ করা রাশিয়ার পক্ষে সম্ভব হয়। দীর্ঘ সাত মাসের যুদ্ধে ইউক্রেনের রুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো কে যেমন নিজের দখলে নিয়েছে রাশিয়া তেমনি আবার নয়া-নাৎসি আজোভ বাহিনী কে নিশ্চিহ্ন করেছে নানা জায়গায়।  

এর ফলে ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর অস্ত্র ও অর্থ পেলেও, জেলেনস্কির সরকার কোনো ভাবেই রাশিয়ার মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়নি। যদিও পশ্চিমী মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যম সেই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে লাগাতার, প্রতিদিন রাশিয়ার ব্যর্থ হওয়ার ভবিষৎবাণী শোনাচ্ছে ও ইউক্রেনের জয়ের কল্প কাহিনী শুনিয়ে মানুষের মন ভোলাচ্ছে। 

পশ্চিমের ‘শয়তান’ ঔপনিবেশিক নীতি 

তাঁর ভাষণে, পুতিন বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমী তল্পিবাহকদের দিকে আঙ্গুল তোলেন ও তাদের খ্রিস্ট ধর্মে বর্ণিত শয়তানের সাথে তুলনা করেন। পুতিন বলেন যে এই সকল দেশগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রাশিয়া কে একটি দুর্বল জাতিতে পরিণত করতে ও তার জনগণ কে ঔপনিবেশিক গোলামে পরিণত করার জন্যে যুদ্ধ চক্রান্ত করে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার “মিত্র শক্তি” শুধু বিশ্বের উপর প্রভুত্ব করে ব্যাপক মুনাফা আয় করতে চায় অধিকাংশ মানুষকে চরম দারিদ্র্য ও অনাহারের দিকে ঠেলে দিতে। 

পুতিন বলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টিকে আছে শুধুই “পশ্চিমী নব্য-ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখতে, ডলার ও প্রযুক্তির আধিপত্যের কারণে লুণ্ঠন করতে, মানবতার কাছ থেকে খাজনা আদায় করতে, ও এই ভাবে আধিপত্যের মাধ্যমে তোলা তুলে নিজের অর্জিত সমৃদ্ধির প্রাথমিক উৎস বের করতো। এই ভাবে বার্ষিক আয় নিশ্চিত করাই হল তাদের (টিকে থাকার) প্রধান, বাস্তব এবং একেবারে স্ব-সেবামূলক প্রেরণা।” 

তিনি বলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দেশগুলো কে জোর করে আধিপত্য মানতে বাধ্য করে। কোথাও আবার তা স্থানীয় শাসক শ্রেণী স্বেচ্ছায় করে। “কিছু দেশে, শাসক অভিজাতরা স্বেচ্ছায় এটি (তাঁবেদারি) করতে সম্মত হয়, স্বেচ্ছায় তল্পিবাহক হতে সম্মত হয়; অন্যদের ঘুষ দেওয়া হয় বা ভয় দেখানো হয়। এবং যদি এগুলো কাজ না করে, তারা মানবিক বিপর্যয়, ধ্বংসযজ্ঞ, ধ্বংসাবশেষ, কোটি-কোটি মানুষের জীবন বিধ্বস্ত করে, সন্ত্রাসী অঞ্চল, সামাজিক বিপর্যয় অঞ্চল, প্রটেক্টরেট, উপনিবেশ এবং আধা-উপনিবেশ বানানোর মাধ্যমে সমগ্র রাষ্ট্রগুলো কে ধ্বংস করে দেয়। তারা কাউকে পাত্তা দেয় না। তারা শুধু তাদের নিজেদের সুবিধার চিন্তা করে।” 

তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমী মিত্রদের ঔপনিবেশিক শাসনকালের ইতিহাস মনে করিয়ে দেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে বিশ্বের নানা প্রান্তে উপনিবেশগুলোর স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা ও তাদের প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের ও সংহতির চিত্রটি তুলে ধরেন।  

পুতিন বলেন, “এটা মনে করিয়ে দেওয়ার মতো বিষয় যে পশ্চিমীরা তাদের ঔপনিবেশিক নীতি শুরু করেছিল মধ্যযুগে, তার পরে বিশ্বব্যাপী দাস বাণিজ্য, আমেরিকায় ভারতীয় উপজাতিদের গণহত্যা, ভারত ও আফ্রিকার লুণ্ঠন, চীনের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের যুদ্ধ। যার ফলশ্রুতিতে চীনকে আফিম ব্যবসার জন্য বন্দর খুলে দিতে বাধ্য করা হয়। তারা যা করেছিল তা হল সমগ্র জাতিকে মাদকের প্রতি আবদ্ধ করে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমগ্র জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছিল জমি ও সম্পদ দখল, পশুর মতো মানুষ শিকার করার জন্য। এটা মানুষের স্বভাব, সত্য, স্বাধীনতা ও ন্যায়ের পরিপন্থী।” 

“যদিও আমরা গর্বিত যে বিংশ শতকে আমাদের দেশ ঔপনিবেশিক-বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল, যা বিশ্বের অনেক মানুষের জন্য উন্নতি করার, দারিদ্র্য ও অসমতা হ্রাস করার এবং ক্ষুধা ও রোগকে পরাস্ত করার সুযোগ খুলে দিয়েছে।” 

এর সাথে বর্তমানে চীন-বিরোধী যুদ্ধ চক্র তৈরি করার মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন পুতিন। তিনি বলেন, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদেশগুলো সব গায়ের জোরে চাপানো হয় আর সারা বিশ্বের কোনে কোনে সামরিক জোট তৈরি করা হচ্ছে যে দেশ বা সরকার মার্কিন-বিরোধী তাকে শত্রু বানিয়ে। এই ঘটনায় তিনি অস্ট্রেলিয়া-ব্রিটেন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে এইউকেইউএস সামরিক জোটের নাম নিয়ে সমালোচনা করেন। সম্প্রতি ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া কে নিয়ে নানা ধরণের চীন-বিরোধী সামরিক অক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার মধ্যে দিয়ে পশ্চিমের পুনঃউত্থান  

পুতিন তাঁর বক্তব্যে তাঁর পূর্বসূরী বরিস ইয়েলৎসিন ও সদ্য প্রয়াত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম ও শেষ রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্বাচেভ কে নাম না করে পশ্চিমের বাড়াবাড়ি ও বর্তমান আগ্রাসনের জন্যে দায়ী করেন। তিনি তাদের পশ্চিমের মিষ্টি কথায় ভুলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার তীব্র নিন্দা করলেও স্পষ্ট ভাষায় জানান দেন যে তাঁর সরকার নতুন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন গড়তে চায় না কারণ তা এখন ইতিহাস। পুতিন বলেন “সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ নেতারা, ১৯৯১ সালের গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইচ্ছার প্রত্যক্ষ অভিব্যক্তির বিপরীতে, আমাদের মহান দেশকে ধ্বংস করেছিল।” 

উল্লেখ্য যে ১৯৯১ সালের গণভোট হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে এবং সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সোভিয়েত নাগরিক চেয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন কে টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু রাশিয়ার ইয়েলৎসিন, ও বেলারুশ এবং ইউক্রেনের সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের নেতারা বেলোভেজ চুক্তি নামক একটি বোঝাপড়ার মাধ্যমে বাকি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোর মতামত না জেনেই  সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন পশ্চিমী শক্তিগুলো কে খুশি করতে। এই চুক্তির ফলে গর্বাচেভ, যিনি তখন কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হওয়ায় পার্টিহীন এক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন ও এই চুক্তিকে তিনি বেআইনী বলেন।  

ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে গর্বাচেভ বলেছিলেন, “তিন প্রজাতন্ত্রের নেতাদের ইচ্ছায় বহুজাতিক রাষ্ট্রের ভাগ্য নির্ধারণ করা যায় না। সমস্ত সার্বভৌম রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে এবং তাদের সমস্ত নাগরিকের ইচ্ছাকে বিবেচনায় নিয়েই শুধুমাত্র সাংবিধানিক উপায়ে এই প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। যে বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে ইউনিয়নব্যাপী আইনী নিয়ম কার্যকর হওয়া বন্ধ হবে তাও বেআইনী এবং বিপজ্জনক; এটি কেবল সমাজে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যকে আরও তীব্র করতে পারে।” কিন্তু নখ-দন্তহীন গর্বাচেভের কোনো ক্ষমতা ছিল না এই চুক্তি আটকাবার। 

বর্তমানে রাশিয়া যে ১৯৯০ সালের সেই বিধ্বংসী দিনগুলো কে পার করে এসেছে, সেই সম্বন্ধে পুতিন বলেন, “সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে, পশ্চিম ভেবে নিয়েছিল যে সারা বিশ্ব এবং আমরা (রাশিয়া) সবাই স্থায়ীভাবে তার হুকুম মেনে নেব। ১৯৯১ সালে, পশ্চিমীরা ভেবেছিল যে রাশিয়া কখনই এই ধরণের ধাক্কা খেয়ে উঠবে না এবং নিজেরাই ভেঙে পড়বে। এটা প্রায় ঘটেওছিল। যদি আমরা ভয়ঙ্কর ১৯৯০-এর দশকের কথা মনে করি, যা ছিল ক্ষুধার্ত, ঠান্ডা এবং আশাহীন। কিন্তু রাশিয়া টিকে থেকেছে, পুনঃজীবিত হয়েছে, শক্তিশালী হয়েছে এবং বিশ্বে তার সঠিক স্থান দখল করেছে।” 

তিনি বলেন এর পরেও কিন্তু পশ্চিমী শক্তি থেমে থাকেনি। পুতিন বলেন “এদিকে, পশ্চিমারা আমাদের উপর আঘাত হানার, রাশিয়াকে দুর্বল ও ভেঙে ফেলার আরেকটি সুযোগ খুঁজতে থাকে। যে স্বপ্ন তারা দেখে এসেছে–– আমাদের রাষ্ট্রকে বিভক্ত করার এবং আমাদের জনগণকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করাবার এবং তাদের দারিদ্র্য ও বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেওয়ার। তারা এটা জেনে স্বস্তি পেতে পারে না যে পৃথিবীতে এই বিশাল ভূখণ্ডে এমন একটি মহান দেশ রয়েছে, যার প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ এবং মানুষ অন্য কারুর হয়ে দরদাম করবে না, করতে পারবেও না।” 

বিশ্বে একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজি যে বারবার করে অন্য দেশের ঘাড় ভেঙে প্রভূত অর্থ সঞ্চয় করে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছে সেই কথা স্মরণ করিয়ে পুতিন বলেন, “এবং এখানে এটি স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ যে পশ্চিম প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাথে বিংশ শতকের প্রথম দিকের চ্যালেঞ্জগুলি থেকে নিজেকে রক্ষা করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের থেকে অর্জিত মুনাফা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শেষ পর্যন্ত মহামন্দা কাটিয়ে উঠতে এবং বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে ও দুনিয়ার উপর একটি বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবে ডলারের শক্তি চাপিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। এবং ১৯৮০-এর দশকের সঙ্কট——এই ১৯৮০-এর দশকে সঙ্কটগুলো আবার মাথাচাড়া দেয়——থেকে পশ্চিমীরা গা বাঁচিয়ে বের হতে পেরেছিল মূলত ভেঙে যাওয়া ও বিলুপ্ত হওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যাপক সম্পদ ও ধন লুঠ করে। এটাই ঘটনা।” 

পুতিন সাবধান করেন এই বলে যে বর্তমানে তাদের সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে পশ্চিমী শক্তি কিন্তু রাশিয়া কে ধ্বংস করার ও ভাগ করার পরিকল্পনা করছে তার বিপুল সম্পদের অধিকারী হওয়ার লোভে। “এখন, নতুন চ্যালেঞ্জের জাল থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য, তাদের যে কোনও মূল্যে রাশিয়ার পাশাপাশি অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিকে, যারা উন্নয়নের সার্বভৌম পথ বেছে নিয়েছে, ভেঙে ফেলতে হবে সেই সব দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে নিজেদের জরাজীর্ণ দশা কে ঢেকে দেওয়ার জন্যে। যদি এই ভাবে কার্যসিদ্ধি না হয়, তাহলে আমি উড়িয়ে দিতে পারি না যে তারা পুরো ব্যবস্থার পতন ঘটাতে চেষ্টা করবে এবং এর জন্য সবকিছুকে দোষারোপ করবে, বা, ঈশ্বর রক্ষা করুন, যুদ্ধের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পুরানো ফর্মুলা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেবে।” 

মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে জাগ্রত নতুন বিশ্বের কথা  

বিশ্বের উপর মার্কিন আধিপত্যের দিন শেষ বলে পুতিন ঘোষণা করেন যে, “বিশ্ব একটি মৌলিক, বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। নতুন ক্ষমতার কেন্দ্র গড়ে উঠছে। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করে –– আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা শুধুমাত্র তাদের নিজ স্বার্থ ঘোষণা করার জন্য নয়, তাদের রক্ষা করতেও প্রস্তুত। তারা তাদের সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করার একটি সুযোগ দেখে বহুমুখীতায়, যার অর্থ প্রকৃত স্বাধীনতা, ঐতিহাসিক সম্ভাবনা এবং তাদের নিজস্ব স্বাধীন, সৃজনশীল এবং স্বতন্ত্র বিকাশের অধিকার, একটি সম্প্রীতিমূলক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে।” 

পুতিন বলেন যে “একমেরুর আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি মূলত মুক্তিকামী, ঔপনিবেশিক-বিরোধী আন্দোলন সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় দেশ ও সমাজগুলোয় গড়ে উঠছে। সময়ের সাথে সাথে এগুলোর শক্তি বাড়বে। এই শক্তিই আমাদের ভবিষ্যৎ ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা নির্ধারণ করবে।” 

রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হঠবে না  

এর সাথেই যুদ্ধ যে রাশিয়া তার নিজ শর্তে শেষ করবে এবং পশ্চিমী সন্ত্রাসের আগে মাথা ঝোঁকাবে না, সেই কথার ইঙ্গিত দিতে পুতিন বলেন, “যে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়তি এবং ইতিহাস আমাদের ডেকেছে তা আমাদের জনগণের জন্য, মহান ঐতিহাসিক রাশিয়ার জন্য একটি যুদ্ধক্ষেত্র। মহান ঐতিহাসিক রাশিয়ার জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য, আমাদের সন্তান, নাতি-নাতনি এবং তাঁদের সন্তানদের জন্য। আমাদের অবশ্যই তাঁদের দাসত্ব এবং দানবীয় সব গবেষণার থেকে রক্ষা করতে হবে যা তাদের মন ও আত্মাকে পঙ্গু করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।” 

পুতিন আরও বলেন, “আজ, আমরা লড়াই করছি যাতে কেউ এটা মনে না করে যে রাশিয়া, আমাদের জনগণ, আমাদের ভাষা বা আমাদের সংস্কৃতিকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে। আজ, আমাদের একটি সুসংহত সমাজ দরকার, এবং এই একত্রীকরণ শুধুমাত্র সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, সৃষ্টি এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে হতে পারে। আমাদের মূল্যবোধ হল মানবতা, করুণা ও সহানুভূতি।” 

পশ্চিমী শক্তির কড়া প্রতিক্রিয়া 

পুতিনের ভাষণের উপর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন বলেন যে পুতিনের ভাষণ “বেপরোয়া শব্দে আর হুমকিতে ভরা” এবং তাঁরা এতে ভয় পাবেন না। বাইডেন বলেন, “আমেরিকা ও তার মিত্ররা ভয় পাবে না।” এর সাথে সাথে যুদ্ধ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জিইয়ে রাখতে চায় সেই ইঙ্গিত করে বাইডেন বলেন যে, “আমেরিকা আমাদের ন্যাটো মিত্রদের সাথে, ন্যাটো ভূখণ্ডের প্রতি ইঞ্চি রক্ষা করতে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত”, আর যোগ করেন “মিঃ পুতিন, আমি যা বলছি তা ভুল বুঝবেন না: প্রতি ইঞ্চি।” এর মাধ্যমে বাইডেন ইঙ্গিত দিলেন জেলেনস্কির সরকারের ন্যাটোতে ঢোকার রাস্তা তাঁরা প্রশস্ত করতে পারেন। 

ইইউ নেত্রী উরসুলা ভন ডের লেইন বলেন, “পুতিন কর্তৃক ঘোষিত অবৈধ সংযুক্তি কিছুই পরিবর্তন করবে না।” তিনি বলেন যে ইইউ কোনো ভাবেই গণভোটের রায় কে সম্মান জানাবে না, রুশ-ভাষী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কে মেনে নেবে না ও নয়া-নাৎসি ইউক্রেনের পক্ষেই থাকবে। “রুশ হানাদারদের বেআইনী ভাবে দখল করা সমস্ত অঞ্চল ইউক্রেনীয় ভূমি এবং সর্বদা এই সার্বভৌম জাতির অংশ থাকবে,” বলে মন্তব্য করেন লেইন। কিন্তু কেন জাতি সংঘের প্রথম ধারায় উল্লেখিত জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কে ইইউ অস্বীকার করবে সেই প্রসঙ্গে কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। 

শান্তি থাকলো অধরাই 

ভবিষ্যতে রুশ যে যুদ্ধক্ষেত্রের থেকে নতজানু হয়ে পিছিয়ে আসবে না সে কথা যেমন স্পষ্ট ভাবে পুতিন জানিয়েছেন তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ যুদ্ধক্ষেত্রে চরম ভাবে বিপর্যস্ত হওয়া ইউক্রেন কে দাবার ঘুঁটির মতন মস্কোর বিরুদ্ধে যে ব্যবহার করতেই থাকবে সে কথাও বাইডেন আর লেইন জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেখট হঠাৎ ইউক্রেনে যান ও নয়া-নাৎসি বাহিনীর সৈন্যদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তিনি জানান যে জার্মানি ইউক্রেন কে আরও অস্ত্র সরবাহ করবে। তিনি আইরিস-টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন নয়া-নাৎসি বাহিনী কে।  

একদিকে পশ্চিমী আগ্রাসন ও ন্যাটোর ক্ষমতা বিস্তারের বিরুদ্ধে ও অন্যদিকে রুশ জনজাতির গণহত্যায় জড়িত নয়া-নাৎসি বাহিনী কে নিকেশ করতে ইউক্রেনে যে বিশেষ সামরিক অভিযান পুতিন শুরু করেছিলেন, তার থেকে রাশিয়ার লাভ হল দনবাস সহ নানা অঞ্চলের রুশ জনজাতির মানুষের ব্যাপকহারে নিজেদের ভূমি কে রাশিয়ার সাথে সংযুক্ত করার গণভোট।  

এর ফলে এই অঞ্চলে আগামী দিনে যে কোনো সামরিক অভিযান বা আক্রমণ কে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসাবে দেখা হবে। যদিও পশ্চিম এই জনতার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মেনে নেবে না, কিন্তু পুতিন কে শুধু এই অঞ্চলগুলো রক্ষা করলেই চলবে না বরং রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে বিস্তৃত অঞ্চলে বাফার জোন তৈরি করতে হবে আগামী দিনের ন্যাটো আক্রমণ থেকে দেশ কে বাঁচাতে।  

দুই পক্ষের এই সংঘর্ষে যার স্বার্থ সবচেয়ে বেশি বিঘ্নিত হচ্ছে তা হল শান্তির। আর ন্যাটো এবং রাশিয়ার সংঘর্ষে কোনো পক্ষই শান্তির প্রশ্ন কে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে বিশ্বে আপাতত নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়া দেশগুলো মনে করছে। চীন, ভারত সহ রাশিয়ার অন্যান্য মিত্র দেশগুলো মস্কো কে আলোচনার টেবিলে বসে সকল দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছে। অথচ এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো পক্ষের কাছে কেউই সরাসরি যুদ্ধ থামানোর ও শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়নি, যা অনেককেই অবাক করছে। ইউক্রেন থেকে মুক্তাঞ্চলে ও নয়া-নাৎসি মুক্ত ইউক্রেনের বাকি ভূমিতে শান্তি ফিরলে, যুদ্ধ শেষ হলেই শ্রমজীবী মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরতে পারে ও অসংখ্য নিরীহ মানুষের প্রাণ বাঁচতে পারে, যে দিকে এই মুহূর্তে সব পক্ষেরই নজর দেওয়া উচিত। 

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla