Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
আদানি বিতর্কে রাহুল গান্ধীর প্রশ্নে মোদীর ক্ষিপ্ত হওয়া কী ইঙ্গিত করছে? | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

পরপর তিন দিন, ভারতের সংসদে গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার বাজারে কারচুপি করে শেয়ারের দর বৃদ্ধির যে অভিযোগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-স্থিত স্বল্প-বিক্রেতা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তুলেছে তাই নিয়ে বিতর্ক হল। গত ২৫শে জানুয়ারি থেকে ক্রমাগত মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম, কয়েক লক্ষ কোটি টাকা শেয়ার বাজার থেকে নিমেষে হাওয়া হয়ে গেছে। আর এই সব প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেস পার্টির সাংসদ রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাথে আদানির কথিত সুসম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংসদে। এর ফলে ক্ষিপ্ত হয়েছে শাসক বিজেপি। জবাব দেন মোদী, পরপর দুইদিন, কিন্তু আদানি বিতর্কে মোদী জবাব দিলেও নিশ্চুপ থাকেন মূল বিষয়েই। 

আদানি বিতর্কে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, বাম দলগুলোর পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ উঠেছে যে মোদী সরকারের সহায়তায় এই গোষ্ঠী ২০১৪ সাল থেকে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্পদে ও নানা শিল্পে নিজের একচেটিয়া মালিকানা কায়েম করেছে। বিজেপি যদিও আদানির সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার করেছে বারবার, বিরোধী দলগুলো অতীতের তথ্য তুলে দেখিয়েছে কী ভাবে শূন্য থেকে শুরু করেও মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন একজন শীর্ষ স্থানীয় পুঁজিপতি হয়ে ওঠেন গৌতম। তাঁর সংস্থার কাছে সস্তায় মুন্দ্রা বন্দরের জন্যে জমি হস্তান্তর করে মোদী নাকি গৌতমের উথ্বানের পথ প্রশস্ত করে দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এর আগেই গৌতম ও মোদী দুজনেই এই অভিযোগ নানা ভাবে নাকচ করেছেন। 

যদিও এর আগে আদানি গোষ্ঠীর সাথে সরকারের যোগসাজেশের অভিযোগ তুলে প্রকাশ হওয়া নানা তদন্তমূলক প্রতিবেদনের কারণে সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছে পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা ও রবি নায়ারের মতন সাংবাদিকদের, কিন্তু হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পরে হওয়া লগ্নিকারীদের গণ-আতঙ্কের মতন পরিস্থিতিতে কোনোদিনই পড়েননি গৌতম বা মোদী। যেহেতু হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সংস্থা ভারতের বাইরে অবস্থিত, তাই এই ঘটনায় আদানি গোষ্ঠীকে বেগ পেতে হচ্ছে। এর আগে আদালতে মানহানির মামলা করে আদানি গোষ্ঠী নানা পত্রপত্রিকার স্বাধীনতা কে ক্ষুণ্ণ করলেও এই যাত্রায় হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের মার্কিন আদালতে মামলা করার আমন্ত্রণ জানালেও কিন্তু এই বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার পরে আর কোনো কথা বলেনি গোষ্ঠীটি। তারা বিষয়টাকে ধামাচাপা দিচ্ছে।  

আদানি বিতর্ক নিয়ে গান্ধীর প্রশ্ন  

রাহুল গান্ধী সংসদে এসে তালিকা ধরে বিজেপির সরকারকে ও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে কিছু প্রশ্ন করেন। এই প্রশ্নের মূল বিষয় হল আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির সাথে আদানি গোষ্ঠীর আঁতাতের ব্যাপারে।  

মঙ্গলবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, রাহুল গান্ধী পাঁচটি প্রশ্ন মোদীর উদ্দেশে করেন। তিনি জানতে চান: 

“কতবার আপনি (মোদী) আদানির (আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম) সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে গেছেন?” 

“কতবার আদানি (গৌতম) আপনার (মোদীর) যাত্রায় (বিদেশে) পরে আপনার সাথে গেছেন?” 

“কতবার আদানি (গৌতম) কোনো বিদেশী রাষ্ট্রে আপনার (মোদীর) পরে গেছেন?” 

“আপনি (মোদী) যে সকল দেশে গেছেন তাদের মধ্যে কতগুলি আদানির সাথে চুক্তি করেছে?” 

“ইলেক্টরাল বন্ডের মাধ্যমে গত ২০ বছরে আদানি কত টাকা বিজেপি কে দিয়েছে?” 

আদানি বিতর্কে মোদীর বিড়ম্বনা ও জবাব  

স্বাভাবিক ভাবেই গান্ধীর আদানি বিতর্ক উস্কে দেওয়ায় ও তার সাথে সরাসরি মোদীর সম্পর্ক কে নিয়ে সংসদে মন্তব্য করায় তাঁর উপর বেজায় চটে যান বিজেপির সাংসদেরা। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে মঙ্গলবার সংসদের অধিবেশনে না এসে সংসদ ভবনে নিজের দফতরে বসে টিভিতে এই সব প্রশ্ন শোনেন বলে খবর। 

রীতিমত হৈচৈ করে বিজেপি ঘোষণা করে যে আদানি বিতর্ক নিয়ে গান্ধীর প্রশ্নগুলো নিয়ে এবার মোদী নাকি সংসদেই তাঁকে “ধুয়ে দিতে” তৈরি। পরপর দুইদিন, বুধবার, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ও বৃহস্পতিবার, ৯ই ফেব্রুয়ারি, মোদী সংসদের লোকসভা ও রাজ্য সভায় বক্তৃতা দেন। তাঁর দল বিজেপির মতে এই বক্তৃতায় নাকি কংগ্রেস কে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দেন মোদী।  

কিন্তু মোদী বুধবার ও বৃহস্পতিবার সংসদের লোকসভা আর রাজ্যসভায় তাঁর জবাবী ভাষণে একবারও কংগ্রেস পার্টির সাংসদ গান্ধীর নাম সরাসরি উচ্চারণ করলেন না, আদানির নামটাও উল্লেখ করলেন না। বরং লোকসভার জবাবী ভাষণে তিনি বুধবার বলেন যে তাঁর সরকারের আমলে কোটি কোটি মানুষ সরকারি সুবিধা পেয়েছে যা তারা আগে কখনো পায়নি। তিনি কংগ্রেস কে আক্রমণ করে বলেন যে সেই দলটির বিলীন হয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে নাকি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় রীতিমত নাকি গবেষণা করছে।  

লোকসভায় মোদী বুক বাজিয়ে নিজের সরকারের এমন সব কৃতিত্বের দাবি করেন যা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ বিরোধীরা আর কিছু সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে কাজ করা সংবাদ মাধ্যম আগেও তুলেছে। মোদী বারবার নিজেকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একক সেনাপতি হিসাবে চিহ্নিত করার চেষ্টাও করেন।  

বৃহস্পতিবার, রাজ্যসভায় তাঁর জবাবী ভাষণে মোদী কংগ্রেসের দিকে আবার আঙ্গুল তোলেন। অতীতে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কী ভাবে ইন্দিরা গান্ধী বারবার ৩৫৬ ধারা ব্যবহার করে বিরোধী শাসিত রাজ্যের সরকার ভেঙে দিয়েছেন সেই নিয়ে কথা বলেন, যদিও বর্তমানে বিজেপির বিরুদ্ধে নানা রাজ্যের বিরোধী দলের থেকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে যে ভাবে বিধায়ক কিনে সরকার ভাঙা-গড়ার খেলা চলছে সেই নিয়ে কিছুই বলেননি তিনি।  

কেন গান্ধী পরিবারের সদস্যেরা (ইন্দিরার পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধী ও তাঁর সন্তান রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী) দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরুর পদবী ব্যবহার করেন না, সেই প্রশ্ন তোলেন মোদী।  

যদিও কেন ফিরোজ গান্ধীর উত্তরাধিকারী পরিবারের সদস্যরা হঠাৎ নেহরু পদবী ব্যবহার করবেন সেটাও তেমন তিনি স্পষ্ট করে বোঝালেন না, তেমনি সেই পরিবারের থেকে তাঁর দল বিজেপির সদস্য ও সাংসদ হওয়া বরুণ গান্ধী ও তাঁর মা (ইন্দিরা পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর স্ত্রী) মানেকা গান্ধীও কেন নেহরু পদবী ব্যবহার করেন না সেই প্রশ্ন তিনি তোলেননি।  

মোদীর ‘জবাব’ কিন্তু আদানি বিতর্ক নিয়ে নীরব  

যদিও সংসদে আর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা মোদীর ভাষণ নিয়ে দারুণ উৎফুল হয়েছেন ও এই ভাষণটিকে রাহুলের মুখ বন্ধ করানোর যোগ্য দাওয়াই হিসাবে তুলে ধরছেন, এই দুইটি জবাবী ভাষণেই মোদী যে রাহুলের তোলা মূল প্রশ্নগুলো কে এড়িয়ে গেছেন সেই প্রসঙ্গটা চাপা দেওয়া হয়েছে।  

মোদী সরকারের সাথে আদানি গোষ্ঠীর ও গৌতমের মাখামাখি সম্পর্কের কথা সুবিদিত। অতীতে আদানি (গৌতম) ও মোদী কে একসাথে যেমন বিমানে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে তেমনি মোদীর নির্বাচনী প্রচারে আদানি গোষ্ঠীর চার্টার্ড বিমানের ব্যবহারও জন সমক্ষে এসেছে। এ ছাড়াও ২০১৪ সালের আগে কংগ্রেস ও বিজেপির যৌথ মদদে শূন্য থেকে বিশ্বের ১০৪তম ধনী ব্যক্তি হওয়া গৌতম কিন্তু মোদী শাসনকালে গ্যাস, বন্দর, বিমান বন্দর, বিদ্যুৎ সরবাহ আর খনির বরাত পেয়ে বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন সেটাও জনসমক্ষে এসেছে।  

এই বরাত পাওয়া নিয়ে আদানি গোষ্ঠী চিরকাল দাবি করেছে যে এর পিছনে মোদীর কোনো মদদ নেই আর সরকারের সব প্রকল্পের চুক্তি তারা টেন্ডার জমা দিয়ে পেয়েছে। যেহেতু টেন্ডার না পাওয়ায় অন্য কোনো গোষ্ঠী তাদের প্রতি বঞ্চনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেনি, তাই আদানি গোষ্ঠীর আর মোদী সরকার দাবি করে এসেছে যে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ রূপেই স্বচ্ছ থেকেছে।  

কিন্তু হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সংস্থার তদন্তে, যা নিয়ে আগেই ভারতেও নানা ভাবে অভিযোগ উঠেছে ও তদন্তমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় নায়ার এবং গুহঠাকুরতা কে রাষ্ট্রীয় দমন পীড়ন ও আইনী মামলা সইতে হয়, বেরিয়েছে যে এই গোষ্ঠী কারচুপি করে বিদেশে ভুয়া সংস্থা খুলে নিজেদের শেয়ারে নিজেরা লগ্নি করে কৃত্রিম ভাবে শেয়ারের দর বাড়িয়েছে আর সেই শেয়ারের ভিত্তিতে বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে, বিশেষ করে সরকারি ব্যাঙ্কগুলোর থেকে, বিপুল পরিমাণে ঋণ নিয়েছে।  

সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) আর জীবন বীমা কর্পোরেশন (এলআইসি) তাদের সম্পদের একটা বৃহৎ অংশ আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে লগ্নি করায় নাকি এই সংস্থাগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এই গোষ্ঠীর শেয়ারের দরের পতন হওয়ায়। এর ফলে আদানি গোষ্ঠীর কয়েক লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার বাজারে লোকসান হলেও, এর ফল যে সাধারণ, ক্ষুদ্র আমানতকারী ও লগ্নিকারীদের ভুগতে হবে সেই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।  

এখন প্রশ্ন হল মোদী সরকারের সক্রিয় সহায়তা ছাড়া কি আদানি গোষ্ঠী এসবিআই বা এলআইসি-র মতন সরকারি সংস্থার আমানতকারীদের টাকা লগ্নি হিসাবে পেত? সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কি তারা এই ভাবে স্টক এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এর মতন বাজার নিয়ন্ত্রণকারী ও তদন্তকারী সংস্থার প্রকোপ থেকে ছাড় পেত? কী ভাবে আদানি গোষ্ঠী এত শক্তিশালী হয়ে উঠলো বিগত আট বছরে তাও একটা বড় প্রশ্ন যা গান্ধী সংসদে তুলেছেন। 

গান্ধী-নেহরু পরিবার কে নিশানা করে মোদীর সরব হওয়া সত্ত্বেও আদানি বিতর্ক নিয়ে তাঁর মৌনতা কি এই ইঙ্গিত দিচ্ছে না যে বিজেপির নিশ্চয় এই ঘটনায় যোগ আছে ও সরকার নিশ্চুপ থেকে দেশের সাধারণ লগ্নিকারী ও আমানতকারীদের এই চরম ক্ষতি কে উপেক্ষা করার চেষ্টা করছে? এর ফলে কি নিজেদের প্রচারের ঢাক জোরে বাজিয়ে মোদী সরকার নিজের ভূমিকা কে চিরকালের জন্যে আড়াল করতে পারবে না আগামী দিনে আরও বেশি বেশি তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় বোঝা যাবে কী ভাবে একটি সংস্থা ও তার কর্ণধার ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন এমন সময় যখন অক্সফ্যাম রিপোর্ট দেখাচ্ছে যে ১% ধনীর কাছে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ রয়েছে।  

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla