গত ২৪ মার্চ ২০২০’র সন্ধ্যায় যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশব্যাপী ২১ দিন লকডাউন ঘোষণা করেন, তখন তাঁর ভাষণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার উদ্বেগ স্পষ্ট দেখা গেছিল। শুরুতেই বিশ্বের ধনীতম দেশগুলোয় সমস্ত ধরণের উন্নত মানের পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও  করোনাভাইরাস সংক্রমণের সামনে তাঁদের অসহায় হয়ে পরার কথা তিনি উল্লেখ করেছিলেন। এই ভাষণ শুনে যে কেউ এটা ভাবতে বাধ্য হবেন যে আমেরিকা, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি বা চীনের মতন দেশগুলো এই সংক্রমণ ঠেকাতে এতটা অসহায় হলে( যদিও পরবর্তী কালে চীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে) ভারতের মতন অনুন্নত তৃতীয় বিশ্বের দেশে এই করোনাভাইরাস কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে! 

লকডাউন ঘোষণার পরে দেখা গেল হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক মাথায়, কাঁধে, পিঠে  ব্যাগ ও সন্তান চাপিয়ে কয়েকশ মাইল দূরে তাঁদের গ্রামে ফেরার জন্য হাঁটতে শুরু করেছেন! হাজার হাজার শ্রমিক সংক্রমণের ভয় আর “স্যোশাল ডিসটেন্সিং” এর বিধি ভঙ্গ করে ভিড় করেছে দিল্লির আনন্দ বিহার বাস টারমিনাসে। অনেক শ্রমিক ভিড় বাসে সংক্রমণ হওয়ার ভয়ে বা ভাড়ার পয়সা না থাকায় হেঁটেই বাড়ি ফেরা ঠিক বলে মনে করেছেন। মাইলের পর মাইল হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্তিতে আর লড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন ২২ জন বলে খবর। এখনো লক্ষ লক্ষ  পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্যে নিজের কর্ম স্থলেই রয়ে গেছেন। 

সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জনস্বার্থ মামলা করে দাবি করেন ৪ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক এমন সব সেল্টার হাউসে থাকে যেখানে “স্যোশাল ডিসটেন্সিং” এর নীতি হাসির খোরাকে পরিনত হয়। NDTV‘র  রিপোর্ট অনুযায়ী দিল্লিতে ১১ এপ্রিল খাদ্য নিয়ে বচসার ফলে আগুন লেগে যাওয়া শেল্টার হাউসে ২০০-২৫০ জন  শ্রমিক থাকতেন। সুপ্রিম কোর্টে ভূষণ শ্রমিকদের কে সরাসরি সরকারের তরফে মজুরি দেওয়ার কথা বলেন। যদিও সুপ্রিম কোর্ট সরকারি নীতিতে হস্তক্ষেপ না করার অজুহাতে এই দাবি খারিজ করেছে। অনাহারে বা আধ পেটা খেয়ে দেশের শ্রমজীবী গরিব মানুষের  দিন চলছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনাহারে মৃত্যুর খবরও আসতে শুরু করেছে। 

লকডাউনের ফলে গোটা দেশ জুড়ে গরিব শ্রমজীবী মানুষেরা যে চরম হয়রানি, নির্যাতন এবং অপমানের শিকার হয়েছেন সেটা কি আমাদের দেশে অবশ্যম্ভাবী ছিল? এই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার মতন পর্যাপ্ত সম্পদ এবং পরিকাঠামো কি ভারতে সত্যি নেই? দেখা যাক তথ্য কী বলে?       

সরকার যদি মনে করতো যে যেখানে আছেন সেই শহরেই পরিযায়ী শ্রমিকদের হোম করেন্টাইনে রাখা হবে, তবে কি সেটা সম্ভব ছিল? 

২০১৯ সালের ১২ই জুনের বিজনেস টুডে থেকে জানা যাচ্ছে যে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ভারতের প্রধান ৩০ টি শহরে ১১ লাখ ৯০ হাজার ফ্ল্যাট না বিক্রি হয়ে পড়ে ছিলো। এর পরে এই সংখ্যাটা ৮% বেড়ে হয়  ১২ লক্ষ ৭৬ হাজার। এর পর যেহেতু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়নি বরং অবনতি হয়েছে, ফলে আমরা ধরে নিতেই পারি যে বিক্রি না হওয়া ফ্ল্যাটের সংখ্যা আরো বেড়েছে। শেষ হিসেব অনুযায়ী একটি ফ্ল্যাটে যদি গড়ে ৪ জন পরিযায়ী শ্রমিককে থাকতে দেওয়া হত তবে  ৫১ লাখ ৪ হাজারের অনেক বেশী মানুষ আরাম করে হু প্রস্তাবিত শারিরীক দুরত্ব বজায় রেখে থাকতে পারতন। এ ছাড়াও ধনীদের ক্লাবগুলোর ডর্মেটরি, হোটেল, ইত্যাদি, আমরা হিসাবের মধ্যে ধরলাম না। পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ নির্মাণ শ্রমিক। তাঁরা নিজেদের হাতে তৈরি উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট বাড়িগুলো দেখতে দেখতে নিজেদের গ্রামের দিকে হেঁটেছেন। এই ফ্ল্যাট গুলো কেউ কিনুক আর না কিনুক চরম বিপদের দিনেও সৃষ্টিতে স্রষ্টার কোনো জায়গা নেই!     

সরকার যদি সিদ্ধান্ত নিত যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের সুষ্ঠু ভাবে নিজেদের বাড়ি পৌঁছে দেবে, তবে কি তা সম্ভব ছিল?    

রেলওয়ে ইয়ার বুক ২০০১৮-১৯ অনুযায়ী দেশের সর্ববৃহৎ গণ পরিবহনের এই ক্ষেত্রে যাত্রী পরিবহনকারী কোচগুলোয় ( নন ইএমইউ) মোট আসন (বসার হিসাবে) সংখ্যা ৪০ লক্ষ ৩৯ হাজার। হু’র গাইডলাইন মেনে শারিরীক দূরত্ব বজায় রাখতে যদি কনভেনশনাল কোচগুলোর আসন সংখ্যা’র চার ভাগের একভাগ যাত্রী পরিবহন করা হত এবং যদি অর্ধেক ট্রেন (রোলিং স্টক) ব্যবহার করা হত তাহলে প্রত্যেকবারে পাঁচ লক্ষ মানুষকে পরিবহন করা সম্ভব হত। যেহেতু লকডাউনের কারণে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাই খুব সহজে এবং খুব দ্রুত খাবার সহ পরিযায়ী শ্রমিকদের বৃহৎ শহরগুলোর থেকে তাদের রাজ্য, যেমন বাংলা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা, ইত্যাদিতে, পৌঁছে দেওয়া যেত।                 

টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে ২ লক্ষ ৮০ হাজার বাস চালু আছে। আমরা ধরে নিই যে প্রতিটি বাসে গড়ে ৪০টি করে সিট আছে। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নিত যে শ্রমিকদের তারা হু’র পরামর্শ মেনে শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে বাসে চাপিয়ে নিজের নিজের জেলায় পৌঁছে দেবে, তবে এক একটি বাসে গড়ে ১০ জন করে বসলে, এক এক বারে ২৮ লাখ শ্রমিক রেল স্টেশন থেকে বাসে চেপে আরামে বাড়ি ফিরতে পারতেন। কাউকে জবাই হতে চলা মুরগী-ছাগলের মত গাদাগাদি হয়ে  বাড়ি ফিরতে হত না। সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকত না। বাস ছাড়া ম্যাটাডোর, ট্যাক্সি, ট্রেন ইত্যাদি যানবাহনের হিসেব আমরা না হয় করলামই না।   

সরকার যদি সিদ্ধান্ত নিত যে পরিযায়ী শ্রমিকদের আধার বা রেশন কার্ড ছাড়াই গণবন্টন ব্যবস্থা (পিডিএস) বা রেশনের মাধ্যমে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে তা কি সত্যিই সম্ভব ছিল? 

ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি’র নিজস্ব পত্রিকা সানডে গার্ডিয়ান ২১ মার্চ ২০২০ এ জানিয়েছিল যে বিগত পাঁচ বছরে ভারতের খাদ্য কর্পোরেশন (এফসিআই) গুদামগুলিতে ৩৮ হাজার মেট্রিক টন (এমটি) খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে প্রতি বছর চাল, গম ও ডাল সহ ৩ হাজার মেট্রিকটনেরও বেশি খাদ্যশস্য এফসিআইয়ের গোডাউনগুলিতে বা সেন্ট্রাল ওয়ারহাউজিং কর্পোরেশনের গোডাউনগুলিতে পচে যাচ্ছে।

এই বছর ২৬ মার্চ ইকনমিক টাইমস এর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে এফসিআইয়ের এর গুদামে ৫৮ লক্ষ ৪৯ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এ ছাড়াও রাজ্য সরকারগুলোর নিজস্ব খাদ্য ভাণ্ডার আছে। দেশের উৎপাদিত ফসলের সামান্য একটা অংশ সরকার কেনে। বাকিটা আড়ৎদার গুদামে জমা হয়। সুতরাং আড়ৎদারের গুদামগুলো অধিকার করলে বিপুল খাদ্য সম্ভার পাওয়া সম্ভব। শুধু মাত্র এফসিআই এর গুদামের খাদ্যশস্য ভারতের ১৩০ কোটি মানুষকে ভাগ করে দিলে এক এক জন ৪৪ কিলো ৯৯২ গ্রাম খাবার পাবেন! সুতরাং শুধু পরিযায়ী শ্রমিকরাই নন, দেশের কাউকেই অনাহারে থাকতে হবে না।           

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে ভারত সরকার যাদের বিদেশ থেকে উড়িয়ে নিয়ে এলো বা এর বাইরে যারা আমেরিকা বা ইউরোপ থেকে ভারতে এলো, সেই কিছু সংখ্যক মানুষকে যদি কোয়ারান্টিনে রাখা হত, তাহলে এই সংক্রমণ এত তীব্র ভাবে ছড়াত না এবং আজকে গোটা দেশকে লকডাউন করে হয়রান করতে হত না। ভারত সরকার গরীব শ্রমজীবীকে রাস্তায় পুলিশ দিয়ে পেটাতে পারে কিন্তু ধনীর কলারে সে হাত দিতে চায় না।। তাই সেই মুষ্টিমেয় কিছু বিদেশ-ফেরৎ মানুষকে লকডাউন করা হয়নি। যার ফল ভুগতে হচ্ছে গোটা দেশকে, বিশেষত শ্রমজীবী মানুষদের।     

নিউজ১৮ গত ২৭ মার্চ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চকে উদ্ধৃত করে দেখিয়েছে ২৫ মার্চ রাত ৮ টা পর্যন্ত মাত্র ২৪,২৫৪ জন ব্যাক্তির করোনাভাইরাস টেস্ট হয়েছে। ভারতে প্রতি দশ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র ১৮ জনের করোনাভাইরাস টেস্ট হচ্ছে। এত কম টেস্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা। টেস্ট না হলে জানাই যাবে না কারা কারা আক্রান্ত। কারা কারা আক্রান্ত না জানতে পারলে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়াও আটকানো সম্ভব নয়।         

যদিও IISER এর বিজ্ঞানী পার্থসারথি রায়ের দ্য উইক  পত্রিকাকে দেওয়া  সাক্ষাৎকার থেকে অন্য কথা জানা যাচ্ছে। ডাঃ রায় বলেছেন সরকার আতঙ্ক থেকে এবং টেস্ট না করাবার জন্য লকডাউনের সহজ পন্থা নিয়েছে। কিন্তু সত্যি কি আমাদের দেশে গণহারে করোনা টেস্টের পরিকাঠামো নেই? ডাঃ রায়ের দাবি অনুযায়ী আমাদের দেশে দশ হাজার এরকম ল্যাব আছে যেখানে করোনাভাইরাস পরীক্ষা সম্ভব! সুতরাং আমার অনুমান করতেই পারি একটি ল্যাব যদি দিনে অন্তত একটি টেস্ট করে, তবে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষের করোনাভাইরাস টেস্ট হওয়া সম্ভব। ডাঃ রায় আরও জানিয়েছেন যে ৭০০ টাকার মধ্যে একজনের করোনাভাইরাস টেস্ট সম্ভব এবং তিনি অবাক হয়েছেন যে সরকার প্রতি টেস্টে ৪,৫০০ টাকা ধার্য করেছে। 

সরকারি অব্যবস্থার ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও যে সমস্ত শ্রমিকদের বাস স্ট্যান্ডে ভিড় করতে বাধ্য হতে হল তাঁদের মধ্যে হিন্দুও ছিলেন আবার মুসলিমও ছিলেন। যারা ৬০০/৯০০ টাকার টিকিট কেটে জন্তু জানোয়ারের মত গাদা গাদি করে বাসে চেপে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হলেন তাদের মধ্যে হিন্দুও ছিলেন আবার মুসলিমও ছিলেন। যারা বাসে উঠতে না পেরে কয়েকশ মাইল হাঁটা লাগালেন তাদের মধ্যে হিন্দুও ছিলেন আবার মুসলিমও ছিলেন। যারা এখনো পেটের খিদে আর দুশ্চিন্তা নিয়ে ভিন রাজ্যে পড়ে রয়েছেন তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম সবাই আছেন। উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার কিন্তু হিন্দু-মুসলিম বাছ বিচার না করেই  শ্রমিকদের উপর জীবাণুনাশক স্প্রে করার মত নারকীয় কান্ডটা ঘটিয়েছে। গরিব হিন্দু শ্রমজীবীরা কিন্তু ধনীদের পয়সায় চলা হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের কাছ থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা পাননি। মুসলিম সহকর্মীদের সাথে তাঁদেরকেও ভুগতে হচ্ছে। 

যখন করোনা ভাইরাসের মহামারী স্পষ্ট ভাবেই ধনী-দরিদ্র, মালিক-শ্রমিক, শোষক-শোষিতের আঙ্গিকে জনগণকে ভাবতে বাধ্য করেছে, সমাজের বাস্তব কাঠামো কে সামনে নিয়ে এসেছে, ঠিক তখনই কর্পোরেট মিডিয়া নিজামুদ্দিন মার্কাযের ঘটনা কে বিকৃত ভাবে পরিবেশন করলো। প্রচার করলো  মুসলিমেরা নাকি উলঙ্গ হয়ে হাসপাতালে ঘুরছে আর থুতু ছেটাচ্ছে! এই নিয়ে দুই দিন ধরে গণ ছি ছিক্কারের পর রায়পুর এমস বিবৃতি দিয়ে জানালো যে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি! রায়পুর এমসের বিবৃতির পর ভুয়ো খবর রটানোর জন্য কোনো সংবাদ মাধ্যম কিন্তু ক্ষমা চাইলো না! কর্পোরেট মিডিয়া প্রচার করলো মসজিদে মুসলিমেরা “লুকিয়ে” আছে আর মন্দিরে হিন্দুরা “আটকে” পড়েছে। করোনাভাইরাস রোধে সরকারি অপদার্থতাকে দায়ী করার বদলে দোষ চাপানো হল মুসলিমদের উপর। জনগণ যখন শ্রেণী সচেতন হয়ে উঠতে শুরু করলেন, ঠিক তখনই কোটিপতিদের দ্বারা পরিচালিত সংবাদমাধ্যমগুলো ধর্মের নামে বিভাজন করতে আদা জল খেয়ে নেমে পড়লো। সংবাদ মাধ্যম চাইলো হিন্দুরা যাতে মুসলিমদের ঘৃণা করে, আর মুসলিমেরা যেন ভাবে যে শুধুমাত্র মুসলিম বলেই তাঁদের উপর যুক্তিহীন আক্রমণ করা হচ্ছে! সংকটাপন্ন শাসক ধর্মীয় বিভাজনকে কী ভাবে তার স্বার্থে কাজে লাগায় তার স্পষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে এই ঘটনা। 

ভারতের মতন আধা-ঔপনিবেশিক ও আধা-সামন্ততান্ত্রিক সমাজ তো বটেই, এমন কী ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকার উন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থাও যে সামান্য একটা ভাইরাসকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ তা আজ স্পষ্ট। এমন নয় যে এই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার মত রসদ তাদের কাছে নেই। বরং প্রয়োজনের অতিরিক্তই আছে। তবুও শ্রমজীবী মানুষের তৈরি এই বিপুল সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে না। কারণ কিছু মানুষকে বড়লোক হতেই হবে। মুষ্টিমেয় ধনী মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ সামাজের ব্যাপক মানুষের স্বার্থের বিপরীতে দাড়িয়ে আছে। 

এই প্রসঙ্গে টমাস ম্যালথাস আর কার্ল মার্কসের বিতর্কটি স্মরণ করা যেতে পারে। ম্যালথাস মনে করতেন জনসংখ্যা বৃদ্ধিই সামাজিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণ। তাই মহামারীকে সমাজের জন্য মঙ্গলজনক বলে প্রচার করেছিলেন তিনি। কারণ মহামরিতে সমাজের ফালতু অপ্রয়োজনীয় গরীব মানুষ মারা যায়, এর ফলে নাকি অর্থনীতির উন্নতি ঘটে। অন্যদিকে মার্কস জনগণকে বোঝা হিসেবে নয় বরং মানব সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করেন। ম্যালথাসকে তাত্ত্বিক ভাবে বেইজ্জত করে মার্কস দেখালেন পুঁজিবাদে জনসংখ্যার তুলনায় সম্পদের কোনো অভাব নেই। সমস্যাটা হলো সম্পদের বন্টনে বা পুঁজিবাদের মূল কাঠামোতে।                                                                      

বর্তমানে পর্যাপ্ত সম্পদ ও পরিকাঠামো  থাকা সত্ত্বেও, প্রতিটি দেশ একটি সাধারণ শ্বাসকষ্ট সিন্ড্রোম সৃষ্টিকারী ভাইরাস কভিড -১৯ এর থেকে পিছিয়ে পড়েছে  এবং তাদের মানব সম্পদ হারাচ্ছে, কারণ পুঁজিবাদের অধীনে শোষণমূলক এবং একচেটিয়া নিয়ন্ত্রিত বন্টন ব্যবস্থা জন কল্যানকে সবার শেষে স্থান দেয় এবং দরকারি বরাদ্দে বাধা দেয়। ভারতের ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি যে এমন ধারণা তৈরি করা হয়েছে যেন সম্পদের অভাব রয়েছে। আদতে সঙ্কটের সময়ে দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের সহায়তা করার জন্য পর্যাপ্ত বৈষয়িক সংস্থান থাকা সত্ত্বেও, যার অভাব রয়েছে তা হল রাজনৈতিক সদিচ্ছার, আর এ ছাড়াও রয়েছে বৃহৎ ধনী এবং শহুরে উচ্চ মধ্যবিত্তের স্বার্থহানির উদ্বেগ। এই শ্রেণীগুলোর স্বার্থ রক্ষার্থেই লকডাউন করা হয়েছে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সামাজিক অন্যায় যা সব চেয়ে বেশী দরিদ্র মানুষকে হত্যা করে তার মোকাবিলায় কখনই লকডাউনের মত কঠোর কর্মসূচী নেওয়া হয় না।          

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla