সারা রাজ্য জুড়ে যখন গণ বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারের দ্বারা নির্দিষ্ট ভাবে বরাদ্দ করা খাদ্য দ্রব্য গরিব মানুষের মধ্যে বিলি করা নিয়ে চরম গরমিল দেখা দিচ্ছে এবং দিকে দিকে এই নিয়ে জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ছেন কিছু অসাধু রেশন ডিলার ও তৃণমূল কংগ্রেসের নিচুতলার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে, ঠিক সেই সময়ে এই সব ঘটনার দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পুলিশ কারুর অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলানোয় আক্রমণ নামিয়ে আনছে গণআন্দোলনের কর্মীদের উপর, স্বাধীন জনতা’র সাংবাদিকদের উপর। বেশ কিছুদিন ধরে কলকাতা পৌরসভার ৯৮ নং ওয়ার্ডে রেশন বিলি সংক্রান্ত গরমিলের খবর আসতে থাকায় তা নিয়ে তদন্ত করতে যাওয়া পিপল’স রিভিউ সহ অন্যান্য জনতা’র সংবাদ মাধ্যমের সংবাদদাতা ও গণআন্দোলনের কর্মী সৌম্য মন্ডল কে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ এবং তাঁকে নেতাজি নগর থানায় রাখা হয়েছে। এই রিপোর্ট লেখা অবধি তাঁর উপর কোন চার্জ দেওয়া হয়নি।

ঘটনার সূত্রপাত হল শুক্রবার, ১লা মে। রেশন দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করে একটি প্রবন্ধের কাজে বাঁশদ্রোণী অঞ্চলের ওয়ার্ড নং ৯৮ এর বস্তি এলাকায় যান মন্ডল। তিনি গিয়ে এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে ও সরেজমিনে তদন্ত করে দেখেন যে এলাকার গরিব মানুষেরা গত এক মাসে তাঁদের জন্যে সরকারের দ্বারা নির্দিষ্ট করা পরিমানের খাদ্য দ্রব্য এলাকার রেশন ডিলারের থেকে পাননি। এর ফলে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল কিন্তু সরকারি নির্দেশ সম্পর্কে তাঁদের কিছু না জানা থাকায় তাঁরা রেশন দোকানের মালিকের উপর চাপ দিতে পারেননি। মন্ডলের বোঝানোর পরে তাঁদের মধ্যে অনেকেই দোকানে যান ও তাঁদের পাওনা গন্ডা বুঝে নেন। খবর পেয়ে সেই সময়ে এলাকার কাউন্সিলরও আসেন এবং তাঁর সাথে মন্ডলের কথাও হয়। সেই সময়ে কাউন্সিলরও স্বীকার করেন যে তাঁর কাছেও রেশন বিলি নিয়ে দুর্নীতির নালিশ এসেছে। জনগণের সামনে তাঁদের পাওনা তাঁদের বুঝিয়ে, রেশন ডিলারের বক্তব্য রেকর্ড করে মন্ডল ফিরে আসেন। তবে এলাকায় অসন্তোষ বাড়তে থাকে। সবার সাথে আলোচনা করে বস্তির মানুষ বোঝেন যে তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।

শনিবার, ২রা মে, সকালে মন্ডল কে বস্তিবাসীরা ডেকে পাঠান তাঁদের বাকিদের সরকারের নির্দিষ্ট করা রেশনের নিয়ম কানুন বোঝাতে। মন্ডল সেখানে গিয়ে তাঁদের সরকারি নির্দেশিকা দেখিয়ে বোঝান যে মুখ্যমন্ত্রী বন্দোপাধ্যায় তাঁদের জন্যে মাথাপিছু কতটা খাদ্যদ্রব্য বরাদ্দ করেছেন প্রতি মাসে এবং কেন তা রেশনের দোকানদারদের দিতেই হবে। এই সব বোঝানোর সময়ে কিছু তৃণমূল কংগ্রেস-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মন্ডলের উপর হামলা করে এবং এর ফলে স্থানীয় মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ও তাঁরা প্রতিরোধ করেন। এর মধ্যে স্থানীয় নেতাজি নগর থানার থেকে পুলিশ আসে এবং মন্ডল কে তুলে নিয়ে যায়। তাকে বেশ কয়েক ঘন্টা থানায় ডিটেন করে রাখার পরে ছেড়ে দেওয়া হলে তিনি ওই বস্তিতে ফেরেন কিছু কাজে আর এই সময়ে তাঁকে আবার নেতাজি নগর থানার পুলিশ তুলে নিয়ে যায় এবং তাঁর ফোন সুইচ অফ করে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পরে পুলিশের তরফ থেকে তাঁকে কী কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটা জানানো হয়নি। এই সামগ্রিক ঘটনাটা সাজানো হয়েছে এমন ভাবে যাতে দুর্নীতিগ্রস্ত স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও অসাধু কিছু রেশন দোকানের মালিকদের মধ্যেকার অশুভ আঁতাতটা রক্ষা পায় এবং জনগণের জন্যে সরকারের দ্বারা বরাদ্দ করা তাঁদের অধিকারের খাদ্য বস্তু যাতে তাঁরা না পান। এটা সরাসরি ভাবে গরিব মানুষের অধিকারের উপর থাবা মারা ছাড়া আর কিছুই না। নানা মানবধিকার সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব অবিলম্বে সৌম্য মন্ডলের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন এবং অসাধু রেশন ব্যবসায়ী ও তৃণমূলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের আঁতাত ভাঙার দাবিও জানিয়েছেন।

এই ব্যাপারে নিজের দলের উপর রাশ না টেনে বা নিজের অধীন যে পুলিশ, তাকে এহেন দুর্নীতিগ্রস্তদের মৌরসি পাট্টা ভাঙার কাজে না লাগিয়ে বন্দোপাধ্যায় কি এই বার্তা দিতে চাইলেন না যে সারা রাজ্যে চলমান অসাধু কিছু রেশন ডিলার ও তৃণমূলের ভুঁইফোড় নেতাদের আঁতাতে তাঁর আপত্তি নেই এবং এই ইস্যুই ব্যবহার করে যে আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী’র ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) — যে পার্টি বর্তমানে জাতীয় বিপর্যয় আইন, ২০০৫, অনুসারে করোনা ভাইরাসের দোহাই দিয়ে বকলমে রাজ্য শাসন করছে — পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষ কে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলবে সেটা জেনেও তিনি এর বিহিত করবেন না? এটাই যদি তৃণমূল নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক অবস্থান হয় এবং এই পশ্চিমবঙ্গেও যদি বিজেপি-শাসিত উত্তর প্রদেশের মতন রেশন দুর্নীতি বা মানুষের খেতে না পাওয়ার কথা স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করলে তাঁদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নেমে আসে তাহলে কী মুখে তৃণমূল নেতৃত্ব নিজের সরকার কে বিজেপি’র চেয়ে ভাল বলবেন?

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla