Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wp-hide-security-enhancer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
গিগ অর্থনীতি: রবিবারের দুপুরের ছুটির আমেজ নেই যেখানে | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla

রবিবারের বাজার মানে খাসি না হলেও অন্তত মুরগির মাংস, একটু ভাত ঘুম আর সন্ধ্যাবেলায় সোমবার কে গালাগালি করা, জীবনের চাপ নিয়ে আফসোস করা–দীর্ঘদিন ধরে অন্তত শহুরে সাবর্ণ, মধ্যবিত্ত বাঙালির এইটাই অভ্যাস। কারণ রবিবার শেষ হলেই সোমবার অফিস যেতে হয়। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পে, শনিবারও ছুটি থাকে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শনিবার পূর্ণ দিন কাজ হয় আর সরকারি প্রতিষ্ঠানে শনিবার অর্ধ দিবস থাকে। তাই কম বেশি চাকরিজীবী সকল মধ্যবিত্তের কাছেই রবিবার সন্ধ্যা বেলাটা বড়ই বিষাদের। কিন্তু বর্তমান ভারতবর্ষে, এবং পশ্চিমবঙ্গেও, কর্মক্ষেত্রের এই পরিচিত চিত্রটা পাল্টাচ্ছে। গিগ অর্থনীতি বা সোজা বাংলায় নব্য অসংগঠিত ক্ষেত্র কিন্তু এই ছুটির দিন ব্যাপারটাই অবলুপ্ত করে দিয়েছে। 

এযাবৎকাল কল কারখানার শ্রমিকদের, জরুরী পরিষেবার সাথে জড়িত ক্ষেত্রগুলোতে—স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ, সামরিক বাহিনী, দমকল, প্রভৃতি— বা পরিবহন শিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে স্থায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যাপারটা প্রযোজ্য ছিল না। অথচ তাঁরা তবুও সপ্তাহে একদিন ছুটি পান। অথচ গিগ অর্থনীতি বা অসংগঠিত অর্থনীতির শ্রমিকদের কাছে, যেমন অনলাইন খাবারের অর্ডার ডেলিভারি পরিষেবার সাথে, অনলাইন পণ্য ডেলিভারি পরিষেবার সাথে, বাড়ি গিয়ে রক্ত পরীক্ষার নমুনার থেকে কোভিডের নমুনা সংগ্রহকারীদের, অ্যাপ দিয়ে চালিত ট্যাক্সি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষদের কিন্তু ওই একদিনের ছুটি হল বিলাসিতা। কারণ একদিনের ছুটি মানেই খালি পেটে থাকা। কোনো ধরনের ছুটি বা সামাজিক সুরক্ষা ছাড়াই তাঁরা সারা দিনে ১২-১৬ ঘণ্টা অবধি কাজ করেন। তাঁদের তো বার্ষিক অ্যাপ্রাইসাল হয় না, বরং তেলের দাম বেড়ে গেলেও নিজেদের পকেট থেকেই তা পুষিয়ে নিতে হয়। 

দিল্লী শহরের দক্ষিণ পূর্ব দিকে সরিতা বিহারের কাছে থাকেন রবি (নাম পরিবর্তিত) এবং দেশের একটি বৃহৎ ও নামকরা ল্যাবের হয়ে কমিশন ভিত্তিতে তিনি কোভিডের নমুনা সংগ্রহ করেন। প্রতিটি টেস্ট পিছু কোম্পানি নেয় ₹৭০০, আর তার থেকে রবি পান মাত্র ₹১০০, যার মধ্যে মোটরসাইকেলের তেলের দামও আছে। এহেন রবি কে একটি নমুনা নিতে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রায় ৩৬ থেকে ৪০ কিমি পর্যন্ত যেতে হয়। আর তার চেয়েও বড় কথা হল রবির ল্যাব থেকে তাঁকে টেস্ট কিট বাদে আর কিছু দেওয়া হয় না। তাই রোগীর বাড়িতে এসে দরজার থেকে রবি শুধু মাস্ক আর সার্জিক্যাল গ্লাভস পরে নমুনা সংগ্রহ করেন। রবির কোনো স্বাস্থ্য বীমাও নেই। ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই কোভিডের নমুনা সংগ্রহের কাজটা তাঁকে করতে হয় নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে। যেখানে সরকার সবাই কে কোভিডের থেকে সাবধানে থাকার ও সংক্রমণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করার ভাষণ দিচ্ছেন, সেই জায়গায় রবির মতন লোকেরা, গিগ অর্থনীতি কে যাঁরা চালাচ্ছেন, পরিস্থিতির চাপে কিন্তু সবচেয়ে সংক্রমণের ভয় যেখানে, সেই সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকা, উপসর্গে ভোগা রোগীর পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন সম্পূর্ণ অসুরক্ষিত অবস্থায়। তাও মাত্র ₹১০০ এর জন্যে! 

রবির মতন লোকেরা শুধু দিল্লীতে নয়, বোম্বাই, কলকাতা, মাদ্রাজ, প্রভৃতি শহরেও একই ভাবে ঘুরছেন। জানা গেল ভারতের অর্থনীতিতে গিগ শ্রমিকদের, বিশেষ করে যাঁরা কায়িক শ্রম করেন, সংখ্যা বেড়ে চলেছে হুহু করে। বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ আর মাইকেল অ্যান্ড সুজান ডেল ফাউন্ডেশন একটি গবেষণায় জানিয়েছে যে আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ভারতের গিগ অর্থনীতি প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে যেখানে প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান এই গিগ অর্থনীতিতে হচ্ছে তা বেড়ে হবে ২.৪০ কোটি। আর আগামী আট থেকে দশ বছরের মধ্যেই প্রায় নয় কোটি মানুষ এই অর্থনীতির মধ্যেই কর্মসংস্থান পাবেন কারণ মূলধারার অর্থনীতি আরও সঙ্কুচিত হবে ও সুরক্ষিত কর্মসংস্থান অতীতের বস্তুতে পরিণত হবে। 

এই গবেষণায় জানা গেছে যে আট থেকে দশ বছরে প্রায় $২৫,০০০ কোটির লেনদেন ভারতে গিগ ইকোনমি করবে, যা ভারতের জিডিপির ১.২৫% হবে। প্রায় সাত কোটি মানুষের কাজ হবে ডেলিভারি দেওয়া, রিয়েল এস্টেটের নির্মাণ শিল্পে, কলকারখানা আর পরিবহন শিল্পে। বর্তমানে ভারতের মাত্র ৪৯% শ্রমিক ডিজিট্যাল সক্ষম, যার সংখ্যাটা সরকার বাড়াতে চাইছে যাতে বেশি মানুষ কে এই অসুরক্ষিত কর্ম জীবনের দিকে ঠেলে দেওয়া যায়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিথারামন বলেছিলেন যে সরকার এই গিগ অর্থনীতির শ্রমিকদের জন্যে সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু সেই সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের কাজে আজও এক পা এগোয়নি সরকার, বরং বারবার বল ঠেলে দিয়েছে কর্পোরেটদের কোর্টে। 

অথচ সমস্যাটা এখানে শুধুই সামাজিক সুরক্ষার না। সমস্যাটি হল শ্রমিকদের অধিকারের। আজ একজন গিগ অর্থনীতির শ্রমিকের কী কী অধিকার আছে? কী ভাবে তাঁরা তাঁদের মালিকপক্ষের কাছে দাবি তুলতে ও আদায় করতে পারেন? দিনে আট ঘণ্টা কাজের দাবি, স্থায়ী কাজের দাবি, মাসিক বেতনের দাবি, প্রভিডেন্ট ফান্ড আর পেনশনের দাবি, এবং সফটওয়্যারের যে সব কারসাজি করে মালিকপক্ষ তাঁদের টাকা কমিয়ে দেয়, সেই সব বন্ধ করার দাবি কী ভাবে তাঁরা তুলবেন? কারণ তাঁদের সাথে তো মালিক পক্ষের মুখোমুখি আলাপ-আলোচনা সম্ভব নয়।  

আসানসোলে অনলাইন খাদ্য ডেলিভারি পরিষেবার সাথে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানালেন দিনে প্রায় ১৩ থেকে ১৫টি ডেলিভারি না করতে পারলে কমিশনের উঁচু স্তরে যাওয়া যায় না আর তার ফলে রোজগার কম থাকে। কিন্তু কী ভাবে যে এই অনলাইন পরিষেবার অ্যাপটি অর্ডার বণ্টন করে, তা তাঁর বোধগম্য হচ্ছে না ফলে সকালবেলা থেকে রাত অবধি ওই অর্ডারের অপেক্ষা করে যেতে হয় রাস্তায় বসে। তার উপরে তাঁদের বাড়ির থেকে আসা খাবারও যদি তাঁরা খান, লোকে তার ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিতে পারে এই বলে যে খাবার চুরি করে তাঁরা খাচ্ছেন। কলকাতার ১৯ বছরের এক ছাত্র জানালেন যে দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুর অঞ্চল থেকে শুরু করে শখের বাজার, বেহালা, তারাতলা প্রভৃতি জায়গায় তিনি কয়েক মাস ধরে সাইকেলে করে খাদ্য ডেলিভারি করছেন কারণ তাঁর মোটরসাইকেল নেই আর তিনি তেলের দাম দিয়ে সেই গাড়ি চালিয়ে কিছুই উপার্জন করতে পারবেন না। 

ঠিক রবিবার দুপুরে যখন মাছের মাথা দিয়ে মুগডাল শেষ করেই আপনি মুরগির ঝোলটা ভাতের উপর ঢালবেন, তখনই কিন্তু ওই কোনো রাস্তার ধারে দাঁড়ানো ছেলেটা চা বিস্কুট খেয়ে পেটের ক্ষিদে নিবারণের চেষ্টা করার আগেই তাঁর অ্যাপে নোটিফিকেশন পাবে  ৮ কিমি দূরে কোনো বাড়িতে বিরিয়ানি আর চাপ নিয়ে যাওয়ার। তিনি ছুটবেন, আপনি তখন খাওয়া শেষ করে ভাত ঘুমের দুনিয়ায় প্রবেশ করবেন, কারণ রবিবার তো ছুটির দিন। রবিবার তো গিগ অর্থনীতি আর সামাজিক অসুরক্ষার থেকে আপাতত বাইরে থাকা চাকরিজীবী বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে আরাম করার দিন।  

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla