প্রতি বছরের মতন এবারও, “বিজয়া দশমী” তিথিতে, বিশ্বের সর্ব বৃহৎ সশস্ত্র আধা-সামরিক জঙ্গী বাহিনী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে একটি নাতিদীর্ঘ ভাষণ দিলেন এই সংস্থার প্রধান মোহন ভাগবত। যেহেতু আরএসএস এর সংসদীয় শাখা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বর্তমানে ভারতের শাসক দল তাই ভাগবতের ভাষণের মধ্যে সুপ্ত থাকে ভারত সরকারের আগামী দিনের প্রকল্পগুলোর রূপরেখা যা আরএসএস কে তার কর্মসূচী মত একটি ব্রাক্ষণত্ববাদী হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে। মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ সেই কাজটিই করেছে।
তাঁর বিজয়া দশমীর ভাষণে আরএসএস প্রধান ভাগবত জোর দেন একটি “জাতীয় জনসংখ্যা” নীতির উপর, হিন্দু মন্দিরগুলোয় হিন্দুদের অধিকার (!) স্থাপন করার উপর, ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্রযুক্তিতে দেখানো সিনেমা ও মনোরঞ্জনমূলক শো গুলো কে সেন্সর করার উপর, বিটকয়েন বন্ধ করার এবং তিনি রূপরেখা স্থির করে দেন ভারতের আগামী দিনের বিদেশনীতির। বলাই বাহুল্য, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই পরিকল্পনাগুলো রূপায়ণ করার চেষ্টা করবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ও ইসলামবিদ্বেষ
ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ মোদী সরকার আর বিজেপির আগামী এক বছরের ইসলামবিদ্বেষী প্রচারের অভিমুখ ঠিক করে দিল। ভাগবত ২০১৫ সালের আরএসএস এর অখিল ভারতীয় কার্জকরণী মন্ডলের (এবিকেএম) গৃহীত প্রস্তাব থেকে তাঁর ভাষণে উদ্ধৃতি দেন। এবিকেএমের ২০১৫ সালের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল যে এক দিকে যখন “ভারতীয় উৎপত্তির” ধর্মগুলির জনসংখ্যা ১৯৫১ সালের জনগণনার হিসাবে ৮৮% থেকে কমে ২০১১ সালের জনগণনায় ৮৩.৮% হয়ে যায়, অর্থাৎ ৪.২ শতাংশ বিন্দু কম হয়ে যায়, অন্যদিকে, সেই একই সময়ে মুসলিম জনসংখ্যা ১৯৫২ সালের হিসাবে ৯.৮% থেকে বেড়ে ২০১১ সালে ১৪.২৩% হয়ে যায়।
আরএসএস চিরকাল শিখ, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম কে “ভারতীয় উৎপত্তির” ধর্ম বলে ও হিন্দু ধর্মের অংশ বলে প্রচার করে। ইসলাম ও খ্রিষ্ট ধর্ম কে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদী শিবির সর্বদা বহিরাগত ধর্ম, আগ্রাসনকারী ধর্ম বললেও, ইহুদি ও পারসী ধর্মালম্বীদের শরণার্থী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। যদিও এই “ভারতীয় উৎপত্তির” ধর্মগুলির বেশির ভাগ, যেমন শিখ ও বৌদ্ধ ধর্ম, নিজেদের হিন্দু ধর্মের অংশ হিসাবে মানতে চায় না, তবুও আরএসএস জোর করে তাঁদের উপর “হিন্দু” পরিচয় চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা যেমন করে, তেমনি এই ধর্মগুলিতে ব্রাক্ষণত্ববাদী চেতনার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে দেয়।
এবিকেমের “ষড়যন্ত্র তত্ত্ব” কে প্রায় ছয় বছর পরে তুলে এনে, ভাগবত বললেন যে ভারতের একটি জনসংখ্যা সংক্রান্ত নীতি খুবই জরুরী। এবিকেমের রিপোর্টে অসম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে আপেক্ষিক ভাবে বেশি মাত্রায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপস্থিতি দেখিয়ে দাবি করা হয় যে বাংলাদেশ থেকে নাকি অনুপ্রবেশ হওয়ার ফলে এই বৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে, এবিকেএম উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলোয় খ্রিস্টান জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এবিকেএম দাবি করে, যে ২০০১ সালের জনগণনার তথ্যের তুলনায় ২০১১ সালের জনগণনার তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে উত্তরপূর্ব ভারতে আদিম ধর্মালম্বীদের সংখ্যা ৮১.৩% থেকে কমে ৬৭% হয়েছে যেখানে খ্র্রিষ্টান জনসংখ্যা ১৩% বেড়ে গেছে।
ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ এই এবিকেএমের প্রস্তাব কে ব্যবহার করে মিথ্যা রটানোর জন্যে। যদি আমরা ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে তথ্য ঘেঁটে দেখি তাহলে জানতে পারবো যে আসল ঘটনা কী।
২০০১ সালের জনসংখ্যার হিসাবে ভারতের নানা ধর্মালম্বীদের সংখ্যা এইরূপ:
ধর্ম | সংখ্যা | অনুপাত (%) |
হিন্দু | ৮২৭,৫৭৮,৮৬৮ | ৮০.৫ |
মুসলিম | ১৩৮,১৮৮,২৪০ | ১৩.৪ |
খ্রিষ্টান | ২৪,০৮০,০১৬ | ২.৩ |
শিখ | ১৯,২১৫,৭৩০ | ১.৯ |
বৌদ্ধ | ৭,৯৫৫,২০৭ | ০.৮ |
জৈন | ৪,২২৫,০৫৩ | ০.৪ |
অন্যান্য | ৬,৬৩৯,৬২৬ | ০.৬ |
কোনো ধর্মের নন | ৭২৭,৫৮৮ | ০.১ |
দেখা যাচ্ছে যে ২০০১ সালের জনগণনা হিসাবে হিন্দু জনসংখ্যার ও অন্যান্য তথাকথিত “ভারতীয় উৎপত্তির” ধর্মালম্বীদের অনুপাত ছিল ৮৪.২% যার মধ্যে হিন্দু ধর্মালম্বীদের অনুপাত ৮০.৫% ছিল।
২০১১ সালের জনগণনার ফলাফলে দেখা গেল সামান্য তারতম্য
ধর্ম | সংখ্যা | অনুপাত (%) |
হিন্দু | ৯৬৬,২৫৭,৩৫৩ | ৭৯.৮০ |
মুসলিম | ১৭২,২৪৫,১৫৮ | ১৪.২৩ |
খ্রিষ্টান | ২৭,৮১৯,৫৮৮ | ২.৩ |
শিখ | ২০,৮৩৩,১১৬ | ১.৭২ |
বৌদ্ধ | ৮,৪৪২,৯৭২ | ০.৭০ |
জৈন | ৪,৪৫১,৭৫৩ | ০.৩৭ |
অন্যান্য | ৭,৯৩৭,৭৩৪ | ০.৬৬ |
কোনো ধর্মের নন | ২,৮৬৭,৩০৩ | ০.২৪ |
এই সময়ে “ভারতীয় উৎপত্তির” ধর্মালম্বীদের জনসংখ্যার অনুপাত হল ৮৩.২৫% যা তার আগের দশকের চেয়ে ০.৯৫ শতাংশ বিন্দু কম। অন্যদিকে মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত ১৩.৪% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৪.২৩% এ পৌঁছালো। অর্থাৎ ০.৮৩ শতাংশ বিন্দু বৃদ্ধি পেল। খ্রিষ্ট ধর্মালম্বীদের অনুপাত একই থাকলো।
এই হিসাব কে পুঁজি করেই এবিকেএম ও সমগ্র আরএসএস-নেতৃত্বাধীন হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদী শিবির আজ প্রচার করছে মুসলিম জনসংখ্যা নাকি তীব্র ভাবে বাড়ছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই?
আন্তর্জাতিক তথ্য ও সমীক্ষা সংস্থা পিউ রিসার্চ তার সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানিয়েছে যে ভারতে মুসলিম সহ অন্যান্য ধর্মালম্বীদের প্রত্যেকেরই জনসংখ্যার বৃদ্ধি ১৯৫২ সালের থেকে ১৯৯১ সালের তুলনায় ১৯৯১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে নিম্নগামী হয়েছে।
নিচের টেবিলে, পিউ রিসার্চের তথ্য অনুসারে ১৯৫১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিষ্টান জনসংখ্যার শতাংশের হারে বৃদ্ধির দর দেওয়া হল:
সাল | সমস্ত সম্প্রদায় | হিন্দু জন্ম হার | মুসলিম | খ্রিষ্টান |
১৯৫১-৬১ | ২১.৬% | ২০.৭% | ৩২.৭% | ২৯% |
১৯৬১-৭১ | ২৪.৮% | ২৩.৭% | ৩০.৯% | ৩৩% |
১৯৭১-৮১ | ২৪.৭ | ২৪% | ৩০.৭% | ১৭% |
১৯৮১-৯১ | ২৩.৯ | ২২.৭% | ৩২.৯% | ১৭.৮% |
১৯৯১-০১ | ২১.৫ | ১৯.৯% | ২৯.৪% | ২২.৬% |
২০০১-১১ | ১৭.৭ | ১৬.৭% | ২৪.৭% | ১৫.৭% |
এই তথ্য খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির দর হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির দরের থেকে বেশি দ্রুত হারে কমেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত আছে নারী শিক্ষার বিষয়টি। যত বেশি নারী শিক্ষার প্রসার হয়েছে তত বেশি নারী প্রতি গড় সন্তানের হার কম হয়েছে সব সম্প্রদায়েরই। তবে যেহেতু মুসলিম সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থা হিন্দু ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের থেকে অনেক খারাপ, তাই নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্য কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতন মুসলিম সম্প্রদায় এগিয়ে যেতে পারেনি।
২০১১ সালের জনগণনার তথ্য হিসাবে, সামগ্রিক ভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরক্ষরতার হার ৫৭.২৮%, যেখানে ৪৮.১১% নারী নিরক্ষর। সেই তুলনায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের ৪৪.০৩% নারী নিরক্ষর আর সামগ্রিক ভাবে সম্প্রদায়ের নিরক্ষরতার হার ৩৬.৪০% ছিল। আবার খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের মধ্যে, যাঁদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার হিন্দু আর মুসলিম সম্প্রদায়ের থেকে বেশ কম, ২৮.০৩% নারী নিরক্ষর, আর গোটা সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে নিরক্ষরতার হার ২৫.৬৬% ছিল।
অথচ এই সব তথ্য কে বাদ দিয়ে শুধু মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে——২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে, যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা ১৩.৮৭ কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩.৪০ কোটি, খ্রিষ্টান জনসংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৩৭.৪০ লক্ষ——বলে আরএসএস আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা যে হারে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে, তা ইসলামবিদ্বেষের মাধ্যমে মুসলিমদের উপরে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাস চালাবার ছাড়পত্র দিয়েছে।
কিছুদিন আগেই, বিজেপি-শাসিত অসমে দুইজন বাঙালি মুসলিম কে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়। তাঁদের মধ্যে একজন মৃতপ্রায় মানুষের বুকের উপর ঘুষি মারতে ও লাফাতে দেখা গেছিল এক ফটোগ্রাফার কে। বাঙালি মুসলিমদের উপর অসমে সন্ত্রাস চালানোর কারণ হল এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে আরএসএস-র দীর্ঘকালীন প্রচার যা অসমীয় জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলোও গ্রহণ করেছে।
বিজেপি-শাসিত উত্তর প্রদেশ একটি প্রতিক্রিয়াশীল ও চূড়ান্ত ভাবে গরিব-বিরোধী জনসংখ্যা নীতি প্রকাশ করেছে। এই নীতির ফলে সংবিধান-স্বীকৃত প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার নাকচ হয়ে যাবে। এই নীতির বিরুদ্ধে বিরোধীরা সোচ্চার হলেও আরএসএস আর বিজেপি এই নীতি কে ব্যবহার করে, এই নীতি কে শুধুই মুসলিম-বিরোধী বলে প্রচার করে, দলিত ও পিছিয়ে পরা জাতির হিন্দুদের মেরুকরণের মাধ্যমে নিজের ছাতার তলায় রাখার চেষ্টা করছে। অথচ, এই নীতির ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দলিত, আদিবাসী ও পিছিয়ে পরা জাতিগুলোর হিন্দুরা।
উত্তর প্রদেশ মডেল অনুসরণ করে প্রতিবেশী বিজেপি-শাসিত উত্তরাখণ্ড সরকার হঠাৎ একটি নির্দেশনামা জারি করে জেলাশাসকদের জানায় যে রাজ্যের জেলাগুলিতে “একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের” জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সামাজিক কিছু সঙ্কট নাকি দেখা দিয়েছে এবং অন্য একটি সম্প্রদায়ের মানুষ নাকি তার ফলে রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিচ্ছেন। পিপল’স রিভিউ এর ইংরাজী পোর্টালে আমরা এই মিথ্যাচারের পর্দাফাঁস করেছিলাম এই প্রবন্ধে।
মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ এই জনসংখ্যা সংক্রান্ত মিথ্যাচারে ভরা তাঁদের ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব উপস্থাপনা করে জানান দিলেন যে আগামী দিনে বিজেপি ও মোদী সরকার এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে মিথ্যা প্রচার করে ইসলামবিদ্বেষ ছড়িয়ে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, গুজরাট, প্রভৃতি রাজ্যে নিজের শাসন কে রক্ষা করবে ভোটারদের মেরুকরণ করিয়ে।
হিন্দু মন্দির ফেরত পাওয়া নিয়ে মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ
দীর্ঘদিন ধরে ভারতের নানা রাজ্য সরকারগুলো বিভিন্ন মন্দিরের পরিচালক হিসাবে কাজ করে। কোথাও আবার ট্রাস্ট গড়ে সরকারের সহায়তায় মন্দিরগুলোর তহবিল দেখাশুনা করা হয়। মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ এই প্রচলন কে শেষ করে হিন্দুদের হাতে হিন্দু মন্দিরের ভার তুলে দেওয়ার কথা বলে। এর মাধ্যমে আরএসএস কী জানান দিল?
মন্দিরগুলির তহবিলে কোটি কোটি টাকা ও সোনা-রুপার অলঙ্কার থাকে যা ট্রাস্টগুলো সরকারি নজরদারিতে দেখাশুনা করে। আরএসএস এর দাবি হল এই মন্দিরগুলো তাদের বানানো সংস্থাগুলোর হাতে তুলে দেওয়া। এই দাবির কারণ হল যে কোটি কোটি টাকা এই ট্রাস্টগুলো দেখাশুনা করে তা আরএসএস এর হাতে আসবে আর তাই দিয়ে সংগঠনটি নিজের অবস্থান কে আরো মজবুত করবে।
এ ছাড়াও, দক্ষিণ ভারতের তামিল নাড়ু আর কেরলে দীর্ঘদিন ধরে ধর্মান্ধ সাবর্ণ হিন্দুদের নিজেদের পক্ষে টেনে আনার চেষ্টা করা সত্ত্বেও, আরএসএস বা বিজেপির অবস্থা ভাল হচ্ছে না। নির্বাচনেও যেমন সাফল্য আসছে না, তেমনি সংগঠন গড়ে সামগ্রিক ভাবে হিন্দু সমাজের মেরুকরণ ঘটিয়ে বিরাট আকারের সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনাও সেখানে ঘটছে না।
এখন যদি তামিল বা মালায়ালি জাতির হিন্দুদের বিখ্যাত মন্দিরগুলোর উপর আরএসএস বকলমে কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে একদিকে যেমন তাদের সম্পদ গেরুয়া শিবির ভোগ করতে পারবে, তেমনি সেই মন্দিরগুলির উপর তৈরি হওয়া হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস কে পুঁজি করে, ধীরে ধীরে, সেখানে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াবার কাজটিও করতে পারবে।
এই কারণেই মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ মন্দির দখলের কথা তুলে ধরেছে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সেন্সরশিপ আর বিটকয়েন নিয়ে কী ভাবছে আরএসএস?
মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো ও চোরা মুদ্রা (ক্রিপ্টো কারেন্সি) কে নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে।
ভাগবত বলেন যে আজকাল করোনার সময়ে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল এসে গেছে, তাঁরা সবাই অনলাইন রয়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো কী কন্টেন্ট দেখাবে তা যেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এই ভাবে আসলে আরএসএস ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর শৈল্পিক স্বাধীনতা কে খর্ব করার আকাঙ্ক্ষা জাহির করলো। দীর্ঘদিন ধরে যে কোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখানো যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী অনুষ্ঠান আরএসএস কে ক্ষুব্ধ করেছে।
নানা ভাবে নানা অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়েছে আরএসএস ও বিজেপি। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের অনেক শিল্পী কে, পরিচালক কে, পড়তে হয়েছে বিজেপি ও আরএসএস এর রোষানলে। একদিকে যখন হিন্দি সিনেমা, টিভি সিরিয়াল, প্রভৃতি কে আরএসএস কব্জা করে রেখেছে, তখন ওটিটি আর অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ছিল স্বাধীন মনস্ক শিল্পীদের এক মাত্র অবলম্বন। এই বার সেটাও বন্ধ করে দিতে চাইছে আরএসএস।
মোদী সরকার ইতিমধ্যেই ভারতের তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের নিয়মাবলীতে পরিবর্তন এনে নানা ভাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কন্টেন্টের উপর কাঁচি চালানোর ব্যবস্থা করে রেখেছে। আগামী দিনে তাই আরএসএস-বিরোধী বা হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের দর্শন-বিরোধী কোন শৈল্পিক কর্মই ভারতের মানুষ দেখতে পাবেন না। মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ এই বিষয়টাই স্পষ্ট করেছে।
বিটকয়েনের মতন চোরা মুদ্রাগুলো ভারতের লগ্নিকারীদের কাছে এনেছে এক লোভনীয় ফাটকা খেলার সুযোগ। গোটা দুনিয়ার মতন, পুঁজিবাদী সঙ্কটের কারণে চরম আর্থিক মন্দায় ডুবে থাকা লগ্নি বাজারে চোরা মুদ্রাগুলো কয়েক বছর আগে এক নতুন আশার সঞ্চার করে। অথচ, যেহেতু এই বিটকয়েন ব্যবস্থার পুরোটাই ডিজিট্যাল, যার কোনো বাস্তব অর্থনীতির সাথে যোগাযোগ নেই, তাই এই বুদবুদ ফেটে যেতে বেশি সময় লাগবে না বলে অনেকেরই আশঙ্কা।
যখন চীনের মতন দেশ নিজের অর্থনৈতিক সুরক্ষার কারণে বিটকয়েন ও চোরা মুদ্রার উপর লাগাম টানে, তখন ভারতের শাসক শ্রেণীও বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ও তাঁদের লগ্নি নিয়ে আতঙ্কিত হয়। এই মুহূর্তে চীনের মতন ভারত বিটকয়েনে লগ্নি নিষিদ্ধ করতে পারবে না, কারণ তাতে হিন্দুত্ববাদী শিবির কে কোটি কোটি টাকা উপঢৌকন দেওয়া প্রচুর বড় বড় পুঁজিপতিরা, শেয়ার দালালেরা, লগ্নি বাজারের খেলোয়াড়রা সমস্যায় পড়বেন।
তবুও, তাঁদের স্বার্থ যেন সুরক্ষিত থাকে, তাঁরা যেন কোনো বড় ক্ষতির সম্মুখীন না হন, সেই জন্যে আরএসএস মোদী সরকার কে নির্দেশ দিচ্ছে চোরা মুদ্রা বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ কে শক্তিশালী করতে। এর ফলে ভারতের লগ্নি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাজের পরিধি বাড়ানো হতে পারে।মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে।
ড্রাগস ও সীমা সুরক্ষা
ড্রাগস থেকে শুরু করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর সন্ত্রাসবাদ, সব ব্যাপারেই আরএসএস সীমা সুরক্ষার উপর মোদী সরকার কে জোর দিতে বলেছে। মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ বারবার সীমা সুরক্ষা কে শক্তিশালী করার কথা বলেছে।
ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা নিরাপত্তার দায়িত্ব মূলত কয়েকটি আধা-সামরিক বাহিনীর হাতে ন্যস্ত। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) ভারত-পাকিস্তান ও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে; অসম রাইফেলস ভারত-মায়ানমার সীমান্তের নিরাপত্তার দায়িত্বে; ইন্ডো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি) ভারত চীন সীমান্তের নিরাপত্তার দায়িত্বে; সীমা সুরক্ষা বল (এসএসবি) ভারত-নেপাল সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে।
এদের মধ্যে বিএসএফ কে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রক সীমানার থেকে ৫০ কিমি অভ্যন্তর পর্যন্ত তল্লাশি চালাবার, আটক ও গ্রেফতার করার অধিকার দিয়েছে। যা ড্রাগস ও চোরাচালান রোধের নামে করা হলেও, আসলে বিরোধী-শাসিত পাঞ্জাব আর পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারগুলোর হাত থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্যে করা হয়েছে।
আরএসএস-এর প্রভাব চিরকালই বিএসএফের উপর থেকেছে, ফলে এই বাহিনীটি একটি চরম ইসলাম-বিদ্বেষী ও জনগণের উপর অত্যাচারকারী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্য সীমান্ত রাজ্যে। ২০১৮ সালে, বিএসএফের ডাইরেক্টর জেনারেল কেকে শর্মা, একজন উত্তর ভারতীয় ব্রাক্ষণ, আরএসএস এর সভায় উর্দি পরে হাজির থাকেন, যা নিয়ে পরে অনেক বিতর্ক হলেও শর্মার গায়ে কোনো আঁচড় লাগেনি।
এই নতুন নিয়মাবলীর ফলে এইবার যেমন বিএসএফ বাঙালি মুসলিম বা মতুয়াদের ধরে বিদেশী আইন, ১৯৪৬, অনুসারে মামলা দিয়ে তাঁদের ডিটেনশন কেন্দ্রে বন্দী করে রাখতে পারবে আজীবন, ঠিক তেমনি, পাঞ্জাবের মতন রাজ্যে স্থানীয় গরিব মানুষ কে ড্রাগ চোরাচালানকারী হিসাবে ধরে নিয়ে যেতে পারবে।
ভাগবত তাঁর ভাষণে ড্রাগসের নেশার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হন। ভাগবত বলেন ধনীর থেকে শুরু করে সমাজের শেষ লোকটাও এই ড্রাগসের নেশার খপ্পরে পড়ছে। তিনি বলেন এর পিছনে প্রতিবেশী দেশগুলোর হাত আছে, ও সরকার কে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
কিছুদিন আগেই এক প্রখ্যাত সিনেমা অভিনেতার ছেলে কে ন্যারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) গ্রেফতার করে সে নাকি ড্রাগসের নেশা করছিল এই অভিযোগে। অথচ তারই কিছুদিন আগে, বিজেপি ও আরএসএস এর সর্ববৃহৎ অর্থ প্রদানকারীদের একজন, গৌতম আদানির মুন্দ্রা বন্দর থেকে, যা বিজেপি-শাসিত গুজরাটে অবস্থিত, ৩,০০০ কিলো হেরোইন উদ্ধার হয়। কোনো এনসিবির লোক কিন্তু এইটা আর খতিয়ে দেখেনি যে এই বন্দর থেকে এর আগেও এই ভাবে ভারতে নেশার সামগ্রী পাচার হয়েছে কি না। অথচ রাষ্ট্রের রোষানলে পড়েছে একটি তরুণ যে নিজে নেশা করছিল, চোরাচালানে সে যুক্ত নয়।
ড্রাগস নিয়ে মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় সরকার ড্রাগস রোধ করার নামে নানা ধরণের প্রচার চালাচ্ছে যার লক্ষ্য নেশার কবল থেকে মানুষ কে মুক্ত করার নয় বরং নেশা রোধের নাম করে সাধারণ মানুষের উপর রাষ্ট্রীয় দমন পীড়ন নামিয়ে আনা।
যেহেতু ড্রাগস আর নেশা নিয়ে সমাজে এমনিই জনগণের একটা ক্ষোভ আছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে যদি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে মুসলিম, শিখ, দলিত ও আদিবাসীদের দমন করা হয়, তাহলে গণ উন্মাদনার সৃষ্টি হবে, কেউই সরকারের কাছে প্রমাণ চাইবে না, আর সরকারও এই অছিলায় খুবই সহজে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো কে খর্ব করবে।
ফিলিপিন্সের স্বৈরশাসক রোদ্রেগো দুতার্তে ৩০শে জুন ২০১৬ তে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ড্রাগস-বিরোধী অভিযানের নাম করে যে গণতন্ত্র-বিরোধী, মানবাধিকার-বিরোধী এক গণহত্যা যজ্ঞ শুরু করেন, তাতে এখন অবধি প্রায় ১২,০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ।
মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ অনুসারে আজ মোদীর সরকার যদি দুতার্তের মডেল ভারতে প্রয়োগ করে তাহলে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষ কে, প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ও জাতির মানুষ কে, প্রাণ হারাতে হবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণে।
বিদেশনীতি নিয়ে ভাগবতের ভাষণ
মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ আগামী দিনের ভারতের বিদেশনীতির রূপরেখা বাতলে দেয়। চীন ও পাকিস্তানের বিরোধিতা করাই যে ভারতের কাজ হবে তাই জানান দেন ভাগবত। আরএসএস এর এই প্রতিষ্ঠা দিবসে এই বার বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছিলেন জায়নবাদী ইজরায়েলের কনসাল জেনারেল কোব্বি শোষানি। এর মাধ্যমে আরএসএস এর হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদ আর জায়নবাদী সন্ত্রাসবাদের কাছাকাছি আসা আরও ভাল ভাবে প্রকট হল।
ভাগবত বলেন ভারত যদিও আফগানিস্তান নিয়ে তালিবানের সাথে আলোচনা চালাতে পারে তবুও সামরিক ভাবে যে কোনো ধরনের বিপদ যেন মোকাবিলা করার জন্যে প্রস্তুতি থাকে। তিনি এই কথা বলার সাথে সাথে চীন ও পাকিস্তান কে সমালোচনা করেন তালিবানদের সাহায্য করার জন্যে। বোঝাই যাচ্ছে, বিশ্বে নব্য উদীয়মান চীন-রাশিয়া জোটের কাছে মার্কিন বাহিনীর পরাস্ত হওয়া কোনো ভাবেই পশ্চিমী মদদপুষ্ট আরএসএস মেনে নিতে পারছে না।মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ তারই ইঙ্গিত দিল।
আফগানিস্তানে ভারতের অনেক লগ্নি আছে আর তার সুরক্ষার জন্যে ভারত কে অবশ্যই তালিবান সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তা না করে যদি ভাগবতের উস্কানিতে ও মোদীর মার্কিন ভজনার ঠেলায় ভারত তালিবানের থেকে দূরে সরে থাকে, তাহলে বিদেশনীতির দিক থেকে ভারতেরই আখেরে ক্ষতি। মোদ্দা কথা হল, মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের সাথে কোনো প্রতিবেশী দেশেরই আর সুসম্পর্ক নেই। তাই, এখন যদি আরও শত্রু বাড়ে তাতে ভারতের কোনো লাভ হবে না।
জায়নবাদী ইজরায়েল চায় ইরানের সাথে যুদ্ধ। তার কারণ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে তার আধিপত্য বিস্তারের পথে বাঁধা হল ইরান। এই বার ইরান ভারতের সাথে আগে সখ্যতা রাখলেও ভারতের মার্কিন লেজুড় হয়ে যাওয়া দেখে তেহরান হাত মিলিয়েছে রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তানের সাথে। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও-তে ইরান কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টাও চলেছে। ফলে জায়নবাদীরা সঙ্কটে রয়েছে।
আরএসএস এর সাথে আদর্শ ও নীতির মিল থাকলেও, মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ শোনার চেয়ে বেশি শোষানি এই অনুষ্ঠানে এসে হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার ও জায়নবাদী সন্ত্রাসীদের ঐক্যের ছবিটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ইরান কে দেখাতে।
মোদীও কী ভাবে ইরানের সাথে এর পর কাজ করে, বিশেষ করে যে বিশাল লগ্নি করে ভারত চাবাহার বন্দর তৈরি করছিল চীনের বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ কে রুখতে, সেই বন্দর পরিকল্পনা কে বাস্তবায়িত করতে, আর ভারত-ইরান সম্পর্ক আগামী দিনে কোথায় যায়, তাও দেখার বিষয়।মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ এই বিষয়ে নিশ্চুপ থেকেছে।
হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকারের অধীনে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডার একটি তল্পিবাহকে পরিণত হয়েছে। চীন কে রুখতে যে কোয়াড নামক জোট আমেরিকা তৈরি করেছে অস্ট্রেলিয়া আর জাপান কে নিয়ে, তাতে ভারতও অংশ নিয়েছে ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ পরিকল্পনার অঙ্গ হওয়া “ইন্ডো-প্যাসিফিক” অঞ্চলে চীনের সাথে কলহ বাড়িয়েছে।
ভারত-চীন যুদ্ধ হলে ভারতের অবস্থা নিতান্তই খারাপ হবে, যদিও অস্ট্রেলিয়া বা জাপানের তেমন ক্ষতি হবে না। হাজারো মাইল দূরে থাকা মার্কিনিদেরও সরাসরি কোনো ক্ষতি হবে না। শুধু আমেরিকার যুদ্ধের ক্ষিদে মেটাতে ভারতের জনগণ কে কামানের খোরাকে পরিণত করা হবে। মার্কিন-ইজরায়েল-পশ্চিমী জোটের পক্ষে জোরালো ওকালতি করে মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ তারই ইঙ্গিত দিল।
মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ আগামী দিনের কী ইঙ্গিত দিল?
মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ ভারতের মানুষের উপর আগামী দিনে কী ভাবে যে নানা দিক থেকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও যুদ্ধের বোঝা নেমে আসবে তার ইঙ্গিত দিল। স্পষ্টতই বোঝা গেল যে প্রায় এক বছর ধরে চলমান কৃষক আন্দোলনের ফলে, শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে, মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের ফলে বৃদ্ধি পাওয়া গণ অসন্তোষের ফলে মোদী সরকার আর আরএসএস কে নতুন নতুন কায়দা আবিষ্কার করতে হচ্ছে জনগণের উপর কর্পোরেট-সামন্তবাদী জোটের শোষণের রোলার চালাবার জন্যে। কিন্তু প্রশ্ন হল, তা কি সম্ভব?
বর্তমানে ভারতবর্ষ জুড়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভের আগ্নেয়গিরি জ্বলছে, তা কি সেই পুরানো ইসলামবিদ্বেষের কাসুন্দি ঘেঁটে আরএসএস ঠান্ডা করতে পারবে? কোথাও মুসলিম-নিধন যজ্ঞ শুরু করে কি খুব সহজেই বিজেপি ভোটে জিতে যাবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের ২০২১ বিজয়াদশমীর ভাষণ দেখাচ্ছে যে তাঁর সংগঠন সেই গতানুগতিক কায়দায় ইসলামবিদ্বেষ ছড়িয়েই ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করবে।