Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wp-hide-security-enhancer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the blog-designer-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u872615695/domains/peoplesreview.in/public_html/bangla/wp-includes/functions.php on line 6114
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সরে গেলেন, রয়ে গেল শঙ্কা | পিপলস রিভিউ বাংলা - People's Review Bangla
বিজেপি সমালোচিত ভোজপুরি গায়ক পবন সিংহ কে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করলেও তাঁর বাঙালি মহিলাদের নিয়ে কুরুচিকর গানের কারণে বিরোধিতা করেন দলীয় কর্মীরা। অবশেষে সিংহ সরে দাঁড়ালেও সরে যায়নি বহিরাগতদের বিপদ।

আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রার্থী পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন ভোজপুরি গায়ক ও অভিনেতা পবন সিংহ। এই বিতর্কিত গায়ককে, যিনি বাঙালি নারীদের নিয়ে কুরুচিকর গান গেয়েছেন ও নানা ভাবে বিদ্বেষ প্রচার করেছেন, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এর পরেই শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। 

আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের অসংখ্য বিজেপি কর্মী পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে এই ঘোষণায় নিজেদের বিরোধিতা ব্যক্ত করেন। তাঁরা জানান যে তাঁরা কোনো ভাবেই এই প্রার্থীর জন্যে লড়বেন না। এর কারণ হিসাবে তাঁরা, অর্থাৎ ক্রমাগত ভাবে আসানসোলে সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়া হিন্দু বাঙালি বিজেপি কর্মীরা, জানান যে যেহেতু এই প্রার্থীর বাঙালি বিদ্বেষের একটি ইতিহাস আছে তাই তাঁকে কোনো ভাবেই নিজের কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে মেনে নেওয়া তাঁদের পক্ষে অসুবিধাজনক। 

তবে পশ্চিমবঙ্গে ক্রমাগত বেড়ে চলা হিন্দি রাজ্যের থেকে আগত হিন্দিভাষী হিন্দুদের পার্টি হিসাবে পরিচিত রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এই নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটে। কিন্তু আসানসোল শহরে বিজেপি কর্মীরা এই নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ও জনসমক্ষে তাঁদের ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। এর মধ্যেই রাজনীতি নিয়ে কোনো জ্ঞান না থাকা সিংহের একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সাংসদ পদ থেকে বহিস্কৃত তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মহুয়া মৈত্রও সেটা টুইট করেন। আর এর ফলে সিংহ নিজেই খুব চাপে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে জানিয়ে দেন যে তিনি প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নন।

সিংহ জানতেন তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন কারণ বিজেপির প্রথম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরেই তিনি এক্সে এসে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কে ধন্যবাদ দেন।

এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে বিজেপির সাথে তিনি অনেকদিন ধরেই আলোচনা এগিয়ে রেখেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে। কিন্তু দলের মধ্যেই ক্ষোভ দেখা দেবে সেটা তিনি বা শুভেন্দু অধিকারী বা সুকান্ত মজুমদারদের মধ্যে কেউই বোঝেননি।

আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে এই ভাবে একজন বাঙালি-বিদ্বেষী প্রার্থীকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত—যা বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্যই খুবই ভেবে চিন্তে নিয়েছে—কিন্তু ইঙ্গিত করছে যে রাজ্যে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল জনসংখ্যা বিন্যাস কে, বিশেষত তীব্র গতিতে বেড়ে চলা হিন্দিভাষীদের অনুপ্রবেশের থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি।

এর ফলে তাদের উত্তর ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ভিত্তি যে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর সৃষ্টি করা পশ্চিমবঙ্গে শক্তিশালী হবে সেটা পার্টি ভালোই বুঝেছে। আর এর হাতে-নাতে পরীক্ষাও করা হয়েছে বারবার হিন্দিভাষী অঞ্চলগুলোয় উত্তর ভারতীয় উৎসব রামনবমী পালন করার নামে উস্কে দেওয়া সাম্প্রদায়িক হিংসার মাধ্যমে, যার অন্যতম উদাহরণ হলো ২০২৩ সালের শিবপুর আর রিষড়ার হিংসার ঘটনা। 

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হলো আসানসোল। দীর্ঘদিন ধরে বিহার ও অধুনা ঝাড়খণ্ডের সীমানা লাগোয়া এই শিল্প শহরে কাজের খোঁজে লক্ষ-লক্ষ মানুষ হিন্দি ভাষী রাজ্যগুলো থেকে যেমন এসেছেন তেমনই বঙ্গ ভঙ্গের পরে অসংখ্য বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুও এই অঞ্চলে এসেছেন। সংখ্যালঘু হয়েছেন এখানকার ভূমিপুত্র আদিবাসী সম্প্রদায়।

এই ভূমিপুত্র আদিবাসী, উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দু ও হিন্দি-উর্দুভাষী দলিত ও মুসলিম সম্প্রদায়ের শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলনের উপর ভিত্তি করেই বিংশ শতাব্দীর তিনের দশক থেকেই ধীরে ধীরে আসানসোলে গড়ে ওঠে শক্তিশালী বাম আন্দোলন। বার্নপুরের ইস্কো কারখানা থেকে রানীগঞ্জ বা চিনাকুড়ির কয়লাখনি, ঊষাগ্রামের গ্লাস ফ্যাক্টরি থেকে রেল শ্রমিকদের নানা আন্দোলনে উত্তাল থাকে এই অঞ্চলের রাজনীতি ও এর মধ্যে দিয়েই বামপন্থীরা ১৯৭৭ থেকে রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। 

বাম আমলেও নানা ভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষাক্ত বীজ হিন্দিভাষী শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে রোপণ করা হলেও ও ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে দাঙ্গা বাঁধলেও, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) [সিপিআই (এম)] কড়া হাতে সেই সব কে দমন করেছিলো এবং কোনোভাবেই এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রাজনীতির প্রথম সারিতে আসতে দেয়নি। কিন্তু ২০১১ সালে পালাবদলের পর থেকেই আসানসোলের হাওয়া অন্যদিকে ঘুরতে থাকলো। 

এই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকেই ২০১৪ সাল থেকে বহিরাগত প্রার্থী দেওয়ার দৌড় শুরু হয় মোদীর বিজেপি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের।

২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে আসানসোল আসনটি সিপিআই (এম)-এর থেকে কুক্ষিগত করে বিজেপি। তাদের প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় (সুপ্রিয় বড়াল) সেই বার পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজয়ী বিজেপির দুই সাংসদের মধ্যে একজন ছিলেন। ২০১৮ সালের আসানসোলের মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গাতেও তাঁর ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ। পরে উনি ২০১৯ সালে আবার বিপুল ভোটে জয়ী হন, কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়ের পরে ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব হারানোয় তিনি আবার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন ও রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হন। 

বিগত দুই লোকসভা নির্বাচনে, অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের তোয়াক্কা না করে উপর থেকে বহিরাগত প্রার্থী চাপান বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমবার, ২০১৪ সালে তিনি শ্রমিক নেত্রী হিসাবে পরিচিত দোলা সেন কে সেখান থেকে প্রার্থী করেন, যাঁর ব্যবহারে বীতশ্রদ্ধ হয়ে অসংখ্য তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সুপ্রিয়কে ভোট দেন। আবার ২০১৯ সালে, সুপ্রিয় কে কোনো অজ্ঞাত কারণে বিজয়ী করতে বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী করেন প্রাক্তন চলচ্চিত্র শিল্পী মুনমুন সেন কে। সেই দফায় দলীয় কর্মী ও সাংবাদিক মহলে হাসির খোরাক হন সেন। তার ফলে সহজেই জিতে যান সুপ্রিয়। 

কিন্তু ২০২১ সালে সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগদান করার পরে, ২০২২ সালের উপনির্বাচনে বহিরাগত ও অবাঙালি প্রার্থী, প্রাক্তন চলচ্চিত্র শিল্পী শত্রুঘ্ন সিনহা কে প্রার্থী করে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বাঙালি প্রার্থী, আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল কে প্রার্থী করে বিজেপি। তিনি এককালে আসানসোলে লেখাপড়া করে থাকলেও শহরের সাথে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। সেই দফায় আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে প্রথমবার জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। বর্তমানে আসানসোলের বিদায়ী সাংসদ সেখানকার বাসিন্দা নন, থাকেন সুদূর বোম্বাই শহরে।

একদিকে ক্রমাগত ভাবে বেড়ে চলা বহিরাগতদের আগমনে পিছিয়ে পড়া বাঙালি ও ভূমিপুত্র আদিবাসীরা আর অন্যদিকে শহরের শিল্প, বাণিজ্য ও রোজগারের সমস্ত উৎসের উপর অবাঙালি হিন্দিভাষীদের দাপট বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে আসানসোলকে পুরোপুরি ভাবে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির করালগ্রাসে ঠেলে দিয়েছে। শ্রমিক আন্দোলন স্তব্ধ হয়েছে কারণ বামপন্থীদের কোনঠাসা করে তৃণমূল কংগ্রেস সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নে গায়ের জোরে প্রতিপত্তি কায়েম করেছে। টিমটিম করে জ্বলতে থাকা কিছু বাম শ্রমিক সংগঠন ও বামপন্থী দলগুলো আজ সমর্থক ও কর্মীর অভাবে দলীয় দফতরও নানা জায়গায় খুলতে পারে না। ফলে শ্রমজীবী মানুষকে সংগঠিত করার ও রুজিরুটির লড়াই করার সংগঠনের অভাব দেখা দিয়েছে আর এই ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে শ্রমজীবী মানুষের হিন্দু অংশটিকে নিজের দিকে টেনে নিতে পেরেছে বিজেপি।

এর মধ্যেই এই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র কে নিয়ে বিজেপির রণনীতি—বহিরাগত সেলিব্রিটি প্রার্থী এনে স্থানীয় হিন্দিভাষী হিন্দুদের ভোটের মেরুকরণ করা—এই অঞ্চলের রাজনীতিকে এক চিন্তাজনক জায়গায় ঠেলে দিচ্ছে। বিজেপি যদি পালকেও প্রার্থী করে, তবুও তৃণমূল কংগ্রেস যে কোনো ভূমিপুত্র কে এই অঞ্চল থেকে প্রার্থী করবে না সেটা বোঝা যাচ্ছে। হয় বন্দ্যোপাধ্যায় আগের মতনই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র কে বিজেপির হাতে তুলে দিতে পারেন কিংবা নিজের বহিরাগত প্রার্থীকে দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের নিজস্ব রাজনৈতিক প্রতিনিধি সংসদে পাঠানোর রাস্তা কে আবার বন্ধ করতে পারেন। 

এই টানাপোড়েনে যাঁদের কথা কেউই শুনবে না তাঁরা হলেন আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের বাঙালি হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান-শিখ সম্প্রদায়ের শ্রমজীবী মানুষ আর ক্রমাগত ভাবে আর্থিক-সামাজিক ভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়া আদিবাসী জনজাতির মানুষ। এই অংশকে বাদ দিয়ে আসানসোলের সম্পদ, শ্রম আর শিল্প পণ্যের লভ্যাংশ লুন্ঠন করে, সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের ঘাড়ে শোষণের বোঝা বাড়িয়ে, আর অঞ্চলের পরিবেশ দূষণ করে নিজেদের ধনসম্পদের পাহাড় কে বৃদ্ধি করতে থাকা বহিরাগত মাড়োয়ারি আর গুজরাটি পুঁজির এবং তাদের সহচর হিন্দিভাষী হিন্দুদের মাথায় তুলে যে রাজ্যের প্রধান দুই দক্ষিণপন্থী দল নাচবে তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ এদের বিরুদ্ধে কোনো গ্রহণযোগ্য বিরোধিতার জায়গা কেউই তৈরি করতে পারেনি।

এই প্রবন্ধটি কি আপনার ভাল লেগেছে?

তাহলে মাত্র ৫০০ ভারতীয় টাকার থেকে শুরু করে আপনার সাধ্য মতন এই ব্লগটি কে সহযোগিতা করুন

যেহেতু আমরা FCRA-তে পঞ্জীকৃত নই, অতএব ভারতের বাইরের থেকে সহযোগিতা আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

CAPTCHA


পিপলস রিভিউ বাংলা – People's Review Bangla